নেই পুলিশ বা পর্ষদ, শব্দের সঙ্গী জলদূষণ

কোথাও জলে ভাসছে ফুল-বেলপাতা ভর্তি প্লাস্টিক, মালা, পোড়া প্রদীপ। কোথাও আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আগের রাতে পোড়া শব্দবাজির খোল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:০৮
Share:

ছট-দূষণ: বাজেকদমতলা ঘাটে আবর্জনা সাফাইয়ে ব্যস্ত পুরকর্মীরা। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।

দেদার শব্দবাজি আর ডিজে তো ছিলই। তার সঙ্গে যুক্ত হল ব্যাপক জলদূষণও। দুর্গাপুজোর ভাসানে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল শব্দদানব। কালীপুজোর ভাসানে আবার কোথাও কোথাও অতিসক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। কিন্তু ছটপুজোয় না পুলিশ, না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ— দেখা মিলল না কারও। ফলে শব্দদূষণের সঙ্গী হল জলদূষণও।

Advertisement

কোথাও জলে ভাসছে ফুল-বেলপাতা ভর্তি প্লাস্টিক, মালা, পোড়া প্রদীপ। কোথাও আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আগের রাতে পোড়া শব্দবাজির খোল। ছটপুজোকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকে এমনই জঞ্জাল পড়ে থাকার ছবি কলকাতা থেকে হাওড়া, দমদম সর্বত্র। আর ভোরের আকাশ বিদীর্ণ করে ফেটেছে ব্যাপক শব্দবাজি। সঙ্গে ডিজে। বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়, গঙ্গার ঘাটে পাহারায় ছিল পুলিশ। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

নির্মল গঙ্গা অভিযানে প্রশাসনের তরফে বারবারই বলা হয়েছিল, গঙ্গায় কোনও ভাবেই ফুল, পাতা, প্লাস্টিক ফেলা যাবে না। গঙ্গার ঘাটে থাকা নির্দিষ্ট পাত্রেই সেগুলি ফেলতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের সেই নির্দেশ যে স্রেফ কথার কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহর ও শহরতলির বিভিন্ন ঘাটের অবস্থায়।

Advertisement

কলকাতার বাজে কদমতলা ঘাট, বাবুঘাট, বেলেঘাটার সুভাষ সরোবর, বেলগাছিয়া রেলপুকুর, রবীন্দ্র সরোবর— সমস্ত জায়গায় একই ছবি। আবার হাওড়ার শিবপুর ঘাট, রামকৃষ্ণপুর ঘাট, সালকিয়া বাঁধাঘাট-সহ অনেক ঘাটেই ভরে রয়েছে আবর্জনা। কোথাও ঘাটের সামনে জাল লাগিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হলেও পুণ্যার্থীরা ফুল, পাতা, মালা অবলীলাক্রমে ছুড়ে দিয়েছেন জলে। ব্যারিকেড টপকে জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন প্রদীপ। সেই সব আবর্জনাই ভেসে বেড়াচ্ছে গঙ্গার জলে। আর পুকুরের জলে জমা হচ্ছে প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে ফেলা ফুল-মালা।

কলকাতায় ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, সকাল ন’টা থেকে কাজ শুরু হয়েছে। বিকেলের মধ্যে ঘাট সাফ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, হাওড়া পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘ছটপুজোয় সাফাইকর্মীরা অনেকেই সামিল হয়েছিলেন। তাই ভোর থেকে তাঁদের কাজে লাগানো যায়নি। তবে দুপুর থেকে ঘাট সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।’’

তবে, শুধু জলদূষণই নয়, ছটকে কেন্দ্র করে শব্দদানবের দাপাদাপিও যে কোনও অংশে কম ছিল না, তারও প্রমাণ প্রতিটি পদে। টালা থেকে টালিগঞ্জ কিংবা বালি থেকে শিবপুর, দমদম, লেকটাউন ও বেলগাছিয়া জুড়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শোনা গিয়েছে চকলেট বোমা, দোদমার মতো শব্দবাজির আওয়াজ। বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘শব্দবাজির তাণ্ডবে রাতে ভাল করে কেউ ঘুমোতে পারেনি।’’ প্রিন্সেপ ঘাটে এ দিন সকালেও দেখা গিয়েছে, চার দিকে ছড়িয়ে শব্দবাজির পোড়া অংশ। আবার বৃহস্পতিবার রাতে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে দেখা যায়, দেদার ফাটছে শব্দবাজি।

পুলিশের এত আয়োজন সত্ত্বেও কেন ঠেকানো গেল না শব্দদূষণ? পুলিশকর্তাদের অবশ্য দাবি, তেমন ভাবে শব্দবাজি ফাটেনি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, তাঁদের তরফে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও লাভ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন