বাঁশদ্রোণীতে শিশুমৃত্যু

হুঁশ ফেরেনি, খোলা ট্যাঙ্ক বহাল এখনও

বাঁশদ্রোণীতে খোলা ট্যাঙ্কে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল নির্মীয়মাণ আবাসনে নিরাপত্তার ফাঁকগুলো। কিন্তু নির্মাণকারীদের যে তাতেও টনক নড়েনি, মঙ্গলবার ওই এলাকায় ঘুরে তার বিস্তর প্রমাণ মিলেছে।

Advertisement

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

এ ভাবেই খোলা পড়ে জলাধার। বাঁশদ্রোণীর হুতলে। — নিজস্ব চিত্র

বাঁশদ্রোণীতে খোলা ট্যাঙ্কে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল নির্মীয়মাণ আবাসনে নিরাপত্তার ফাঁকগুলো। কিন্তু নির্মাণকারীদের যে তাতেও টনক নড়েনি, মঙ্গলবার ওই এলাকায় ঘুরে তার বিস্তর প্রমাণ মিলেছে।

Advertisement

বাঁশদ্রোণীর নতুন বাজার, রায়নগর, চাকদহ, ব্রহ্মপুর ও রেনিয়া এলাকায় কয়েক বছর ধরেই একের পর এক বহুতল গজিয়ে উঠছে। এ দিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ বহুতলেই সেপটিক ট্যাঙ্ক ও জলের রিজার্ভারের ঢাকনা নেই। অথচ, ট্যাঙ্কটি জলে ভরে রয়েছে। গত শনিবার এমনই এক জলভর্তি খোলা ট্যাঙ্কে পড়ে মৃত্যু হয় অঙ্কিত ঘোষ ও শুভ দুয়ারি নামে দুই খুদের। রায়নগরের বাসিন্দা সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এখনও বহু নির্মীয়মাণ বাড়িতে ঢাকনাহীন সেপটিক ট্যাঙ্ক রয়ে গিয়েছে। এত বড় ঘটনার পরেও কারও সচেতনতা ফেরেনি।’’

প্রোমোটারেরা বলছেন, বাড়ির ভিত খোঁড়ার পরেই জল ধরার জন্য ট্যাঙ্ক তৈরি করতে হয়। ওই সময়ে কাজের সুবিধার্থেই ঢাকনা লাগানো হয় না। তবে এ বার থেকে এমন ভুল আর হবে না বলেও দাবি করেছেন প্রোমোটারদের একাংশ। তবে কার্যক্ষেত্রে সেই ভাবনার প্রতিফলন এখনও মেলেনি। এ দিনও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রোমোটারের বক্তব্য, ‘‘জলভর্তি অবস্থায় সেপটিক ট্যাঙ্ক খোলা রাখা অন্যায়, মানছি। কিন্তু বাচ্চারা কোথায় খেলতে যাচ্ছে, সেটা অভিভাবকদেরও নজরে রাখা উচিত।’’

Advertisement

কী বলছে পুর-প্রশাসন? বাঁশদ্রোণীর এই তল্লাট কলকাতা পুরসভার ১১১, ১১২ এবং ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি আমার ওয়ার্ডেই। তার পরেই এলাকার সব প্রোমোটারকে ডেকে নির্মীয়মাণ বাড়ির খোলা সেপটিক ট্যাঙ্ক ঢেকে দিতে বলেছি।’’ ১১২-র তৃণমূল কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘প্রোমোটারদের তিন দিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে তাঁরা যদি জলের ট্যাঙ্কের মুখ না ঢাকেন, তা হলে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলব।’’ আর ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোপাল রায়ের দাবি, তাঁর ওয়ার্ডে কোনও খোলামুখ সেপটিক ট্যাঙ্ক নেই।

পুর সূত্রের খবর, দুই খুদের মৃত্যুর পরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় ১১ নম্বর বরো কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে ওই বরো এলাকায় বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নির্মীয়মাণ বাড়ির চার দিক টিন বা বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে বলা হবে। বাড়িতে ঢোকার পথে দরজা এবং অবশ্যই জলের রিজার্ভার ও সেপটিক ট্যাঙ্কে ঢাকনা যেন থাকে। বরো চেয়ারম্যান তৃণমূলের তারকেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সেপটিক ট্যাঙ্ক ঢাকা রাখতে হবে, এমন কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবুও মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ওই সব নির্দেশ দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন