West Bengal Lockdown

পথকুকুরদের খাবার দিতে বাজার করছেন স্কুলশিক্ষক

এলাকার রাঁধুনিদের দিয়ে তাঁরা পথকুকুরদের জন্য রাঁধছেন ভাত, ডিম আর মুরগির মাংসের ছাঁট। রোজ দু’বেলা প্রায় ১০০ কুকুরের রান্না হচ্ছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০৪:২৪
Share:

সহমর্মী: সোনারপুরে কুকুরদের খাওয়াচ্ছেন এক যুবক। নিজস্ব চিত্র

করোনা সঙ্কটে রাজ্য সরকারের তহবিলে এখনও অর্থসাহায্য করেননি ওঁরা। বরং সাহায্যের তালিকা থেকে ব্রাত্য যে পথকুকুরেরা, তাদের পাশে নিজেদের এক মাসের বেতন নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে পথকুকুরেরা যাতে অভুক্ত না-থাকে, সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মহেশতলা পুরসভার আক্রা কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুবোধ গায়েন। নিজেই বাজার করছেন। রান্নার লোক রেখেছেন। মুখে মাস্ক পরে এলাকার কুকুরদের খুঁজে বার করে সকাল-বিকেল খাওয়াচ্ছেন।

Advertisement

সুবোধবাবু একা নন। এই কাজে শামিল হয়েছেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত একদল যুবক-যুবতীও। এলাকার রাঁধুনিদের দিয়ে তাঁরা পথকুকুরদের জন্য রাঁধছেন ভাত, ডিম আর মুরগির মাংসের ছাঁট। রোজ দু’বেলা প্রায় ১০০ কুকুরের রান্না হচ্ছে। সৌম্য, সুমিত, শ্রেয়া, অভ্ররা সকালে সাইকেল ভ্যানে খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। কুকুরদের বার করে তাদের খাওয়াচ্ছেন। সৌম্য বলেন, ‘‘অনেকে রেশনের চাল তুললেও নিজেরা খান না। আমরা তাঁদের থেকে চাল-ডাল সংগ্রহ করছি। পাশাপাশি এলাকার দোকান থেকে মুরগির মাংসের ছাঁট কিনছি। রান্না করে ভাতের সঙ্গে মেখে দিচ্ছি। নিয়ে যাচ্ছি জলও। এলাকার মানুষও সাহায্য করছেন। কেউ ভ্যানের ভাড়া দিচ্ছেন, কেউ জলের দাম। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওদের খাবারের রসদ মজুত আছে।’’

আর সুবোধবাবু জানাচ্ছেন, তিনি তাঁর বেতন থেকে ৪০ হাজার টাকা সারমেয়দের খাবারের জন্য আলাদা করে রেখেছেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, পথকুকুরদের খাবার থেকে চিকিৎসা— সবই করেন ওই শিক্ষক। লকডাউন শুরুর আগে গত ২২ মার্চ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে এনেছিলেন। তা দিয়েই চলছে তাঁর পথকুকুরদের যত্ন। খাদ্য তালিকায় মূলত থাকছে ভাত, ডিমের ঝোল। কখনও মাছ বা মাংস। এ ছাড়া সুবোধবাবুর ব্যাগে সব সময়ে থাকছে বিস্কুটের প্যাকেট। সকাল-বিকেল প্রায় ৪০-৫০টি কুকুরের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয়েরা জানালেন, মাস দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন সুবোধবাবুর স্ত্রী গীতাদেবী। ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘স্ত্রী ছিলেন সব কাজের সঙ্গী। তিনিই রান্না করতেন। এখন আমি হাল ধরেছি। সকলের কাছে অনুরোধ, পথকুকুরদের ছিটেফোঁটা হলেও কিছু অন্তত খেতে দিন। তাতে ওরা বেঁচে যাবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন