West Bengal Lockdown

করোনা দেখাল পুলিশ ‘গান’ ধরে, গানও করে

লাঠির বদলে মাইক হাতে পাড়ায় পাড়ায় গান গাওয়া এই পুলিশের সঙ্গে আমজনতার পরিচয় করিয়ে দিল করোনাভাইরাসই।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:০৪
Share:

পুলিশ যখন সঙ্গীতশিল্পী। নিজস্ব চিত্র

নির্বাচনের সময়ে দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণ করতে ওঁরা হাতে তুলে নেন বন্দুক। গায়ে খাকি পোশাক, পায়ে ভারী বুট পরে রাস্তায় নামা কঠিন মুখের মানুষগুলোকে দেখে তখন কে বলবে যে তাঁদেরই কারও কারও গলায় সুর অবাধে মন্দ্র থেকে তার সপ্তকে ঘোরাফেরা করে। উত্তেজিত জনতাকে লাঠি উঁচিয়ে ধাওয়া করতে দেখে বোঝা যায় না যে তাঁদের লাঠিধরা শক্ত আঙুলও অবলীলায় খেলে বেড়াতে পারে গিটারের ছ’তার ও ফ্রেট বোর্ডে কিংবা তবলা-বাঁয়া থেকে অনায়াসে বার করে আনতে পারে তেরে-কেটে-তিনা-র সুর।

Advertisement

লাঠির বদলে মাইক হাতে পাড়ায় পাড়ায় গান গাওয়া এই পুলিশের সঙ্গে আমজনতার পরিচয় করিয়ে দিল করোনাভাইরাসই। এই আতঙ্কের সময় দেখিয়ে দিল, সামাজিক দূরত্ব তৈরির জন্য পুলিশ শুধুই পেটায় না, মানুষকে সচেতন করতে গান লিখে গাইতেও পারে। সেই গান ভাইরালও হয়।

আরও পড়ুন: নবান্নের নির্দেশে বাজারের চরিত্র বদলাবে পুরসভা

Advertisement

রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যাজ় অর্কেস্ট্রা ব্যান্ডের ১২ জন সদস্যের গান-বাজনার খবর তাই এখন রাখতে শুরু করেছেন ঘরবন্দি সেলেবরাও। বলিউডের প্লে-ব্যাক শিল্পী অভিজিৎ নিজেই প্রশংসা করলেন তাঁর গাওয়া ‘শুনো না, শুনো না’ গানটির সুরে পুলিশের কর্মীদের লেখা ‘করোনাকে বাড়তে দেব না’ গানের। ভাইরাল হওয়া গানটি নিয়ে মুম্বই থেকে ফোনে অভিজিৎ বলেন, ‘‘পুলিশ মানেই এত দিন আমাদের চোখের সামনে কঠিন স্বভাবের কিছু মানুষের চেহারা ভেসে উঠত। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ খুব সুন্দর গান লিখেছে করোনা নিয়ে। গানটি আমি শুনেছি। করোনা দেখিয়ে দিল, পুলিশকর্মীদের মধ্যেও শিল্পীর মন রয়েছে। ওঁরাও কারও আত্মীয়। করোনার সময়ে ওঁরাও জীবন বাজি রেখে মানুষের জন্য কাজ করছেন। প্রার্থনা করি, ওঁরা সবাই সুস্থ থাকুন।’’

আরও পড়ুন: তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদের বাবার করোনা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানো হল দ্বিতীয় নমুনা

ব্যান্ডের দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র পুলিশের কম্যান্ডান্ট (প্রথম ব্যাটেলিয়ন) দেবাশিস ধর জানান, পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি ‘করোনা, করোনা’ গানটি এতটা প্রচার পাবে, তা তাঁরাও ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ব্যান্ডের এই শিল্পীরা সবাই পুলিশ। সবাই খুব ভাল গানবাজনা করেন। ১২ জনের দলে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মুম্বইয়ের শিল্পীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে বাজিয়েছেন। দু’-তিন জন পুলিশকর্মী তো

অসাধারণ গান করেন। কিন্তু সেই গানবাজনা পুলিশের অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।’’

রাজ্য পুলিশের জ্যাজ় অর্কেস্ট্রা ব্যান্ডের পুলিশকর্মীরা আপাতত বিভিন্ন থানা এলাকায় গিয়ে গান গেয়ে মানুষকে ঘরে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। করোনা নিয়ে ভাইরাল হওয়া গানটির গায়ক, এএসআই অপূর্ব মজুমদারের কথায়, ‘‘মেয়ের গানের গুরুর কাছে একটু-আধটু তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কম্যান্ডান্ট স্যার উৎসাহ দিয়েছিলেন এই গানটির জন্য। লকডাউনে মানুষ যদি সত্যিই ঘরবন্দি থাকার মধ্যে দিয়ে করোনা থেকে বাঁচেন, তবেই আমাদের প্রয়াস সার্থক হবে।’’ ব্যান্ডের তালবাদ্যের যন্ত্রী গোপাল সরকারের কথায়, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই তবলা বাজাই। তবে পুলিশ পরিবারের ছেলে আমি। চাকরির পরিসরের মধ্যেই গানবাজনার সুযোগ রয়েছে। চাকরি পাওয়ার আগে মুম্বইয়ের শিল্পীদের সঙ্গেও বাজিয়েছি।’’

কলকাতা পুলিশের গড়িয়াহাট থানার দুই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট সৌরভ চক্রবর্তী ও দেবাংশু চট্টোপাধ্যায় আবার অঞ্জন দত্তের ‘বেলা বোস’ গানটির সুরে লিখে ফেলেছিলেন ‘বিশ্বে এখন মহামারি বেলা শুনছো’। থানার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী একডালিয়ায় কয়েক দিন আগে গানটি গাওয়ার পরে সেটিও ভাইরাল হয়ে যায়। তবে তাঁরা কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন