West Bengal Radio Club

উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগের পথ বাতলে সাফল্য

কিন্তু বিপর্যয়ে অনেক সময়েই রেডিয়ো সেটের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২৭
Share:

—ছবি টুইটার

ঘূর্ণিঝড় হোক কিংবা ভূমিকম্প, অথবা বন্যা— প্রথম ধাক্কা আসে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। প্রায় ভেঙে পড়ে টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এই অবস্থায় প্রশাসনের মূল মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় বিধ্বস্ত এলাকার অবস্থা জানা এবং সেখানে ত্রাণের ব্যবস্থা করা। ল্যান্ডলাইন-মোবাইল যখন বিকল, তখন প্রশাসনের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ান হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা। ওড়িশা-মহারাষ্ট্র, আয়লা-আমপান ধ্বস্ত সুন্দরবন এলাকায় একাধিক বার তার প্রমাণ মিলেছে।

Advertisement

কিন্তু বিপর্যয়ে অনেক সময়েই রেডিয়ো সেটের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সমস্যার মোকাবিলায় দীর্ঘদিন ধরে নানা পরীক্ষা চালিয়ে আসছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব। অবশেষে স্যাটেলাইট অর্থাৎ উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগের নতুন পথের সন্ধান করেছেন তাঁরা।

নতুন ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের মধ্যেও বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যোগাযোগ করা সম্ভব। এমনকি, পাঠানো যাবে ছবি এবং ভিডিয়ো। তাদের এই পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন সংস্থা ‘অ্যামেচার রেডিয়ো নিউজ়লাইন’। ২ ডিসেম্বর তাদের বুলেটিনে সম্প্রচার করা হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের এই সাফল্যের কথা।

Advertisement

ওই ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস জানান, সামান্য খরচে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় যে কোনও প্রান্তে রেডিয়ো স্টেশন তৈরি করে নিতে পারেন তাঁরা। সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি এবং বাড়ির টিভির জন্য যে ডিটিএইচ অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েই একটি বিশেষ উপগ্রহের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা যায়। অন্য প্রান্তে কম্পিউটারে একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন এবং একটি ডিটিএইচ অ্যান্টেনা থাকলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারবেন বিপর্যস্ত এলাকার সঙ্গে।

অম্বরীশ বলেন, “ওড়িশার সুপার সাইক্লোন এবং আয়লা-আমপানের সময়ে আমরা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে যোগাযোগ তৈরি করেছিলাম। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা বহু দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলাম। ২০১৮ সালে কাতার অ্যামেচার রেডিয়ো সোসাইটি একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠায়। অ্যামেচার রেডিয়োর বৈধ লাইসেন্সধারীরা তা নিখরচায় ব্যবহার করতে পারেন।”

সেই উপগ্রহকে কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে যোগাযোগ তৈরি করা যায়। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল দূরত্বের গণ্ডি অতিক্রম করা। অম্বরীশ বলছেন, “বিভিন্ন বিপর্যয়ে মোবাইল ফোন কার্যত খেলনায় পরিণত হয়। আমরা যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করি, তা একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কার্যকর। আমরা চেষ্টা করছিলাম নতুন কিছু। শেষ পর্যন্ত আমাদের রেডিয়ো ব্যবস্থাকে উন্নত করে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের সঙ্গে ডিটিএইচ অ্যান্টেনা যোগ করে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়।”

এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশ এবং বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এই ব্যবস্থায় যোগাযোগ করেছেন অম্বরীশরা। এই ব্যবস্থায় সাধারণ রেডিয়োর থেকে অনেক বেশি স্পষ্ট কথা শোনা যায় উভয় প্রান্ত থেকেই। তা ছাড়া, এই ব্যবস্থায় ডিটিএইচ এবং অ্যাপ্লিকেশন কাজে লাগিয়ে পাঠানো যায় ভিডিয়ো এবং ছবিও। পুরো রেডিয়ো স্টেশন তৈরিতে খরচ দু’লক্ষ টাকা। বিপর্যস্ত এলাকায় পৌঁছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তৈরি করে নেওয়া যায় এই স্টেশন। আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলায় নতুন এই ব্যবস্থায় যোগাযোগ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে অম্বরীশদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন