বিরল রোগের চিকিৎসায় তৈরি কমিটি

কেন্দ্রীয় সরকার বিরল রোগের তালিকা তৈরি করে বেশ কিছু নির্দেশিকা-সহ ‘রেয়ার ডিজ়িজ পলিসি’ অনুমোদন করে ২০১৭ সালে।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৭
Share:

স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি আক্রান্ত শিশুরা। নিজস্ব চিত্র

বিরল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের উদাসীনতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারবার। কিন্তু এ বার দীর্ঘদিনের সেই উদাসীনতা কাটিয়ে অবশেষে নড়ে বসল রাজ্য সরকার। দিন কয়েক আগেই তৈরি হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট টেকনিক্যাল কাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি ফর রেয়ার ডিজ়িজেস’। সাত সদস্যের সেই কমিটিতে থাকছেন রাজ্যের একাধিক সরকারি চিকিৎসক। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নিজেদের মধ্যে প্রতি তিন মাসে একটি করে বৈঠক করবেন কমিটির সদস্যেরা। প্রশ্ন উঠেছে, তিন মাসে একটি করে বৈঠক কি যথেষ্ট? বিরল রোগীদের পক্ষে তা কতটা সুবিধাজনক হবে?

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকার বিরল রোগের তালিকা তৈরি করে বেশ কিছু নির্দেশিকা-সহ ‘রেয়ার ডিজ়িজ পলিসি’ অনুমোদন করে ২০১৭ সালে। পরের বছর কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের উদ্দেশ্যে ওই নীতি তুলে নেওয়া হয়। নতুন কেন্দ্রীয় নীতি তৈরি করতে রাজ্যগুলিকে খসড়া পাঠানো হয়, যাতে বিভিন্ন রাজ্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই তৈরি করা যায় সংশোধিত নীতি। সেই মতামত জানানোর ক্ষেত্রে রাজ্যকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করে বিরল রোগে আক্রান্ত কয়েকটি পরিবার স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করে। এ দিকে কমিটি তৈরির জন্য রাজ্যগুলির উপরে কেন্দ্রেরও চাপ ছিল। সম্ভবত এই দুই কারণেই স্থায়ী কমিটি গঠন করা হল বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

২০১৮ সালেই কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরল, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, সিকিম এবং মণিপুরে ‘স্টেট টেকনিক্যাল কাম অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কমিটি ফর রেয়ার ডিজ়িজেস’ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গ সেই তালিকায় নব সংযোজন। এর আগে বিরল রোগের চিকিৎসায় পরিবারের তরফে করা আবেদনের গুরুত্ব বুঝে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অস্থায়ী কমিটি তৈরি হত। এ ছাড়া, বিরল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় সাহায্যের আবেদন জানাতে তাঁদের পরিজনেরা হন্যে হয়ে ঘুরতেন স্বাস্থ্য ভবনে। তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্য সচিবের কাছে আবেদন জানালে তা পাঠানো হত স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা হয়ে তা পৌঁছে যেত ‘স্বাস্থ্য সাথী’-তে। ফের তা ঘুরে আসত হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে। এ ভাবেই নাকাল হত পরিবারগুলি।

Advertisement

নতুন এই কমিটি গঠনের ফলে সেই জটিলতা কাটতে পারে, এমনই আশা পরিবারগুলির। বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’-তে আক্রান্তদের অভিভাবকদের সংগঠন ‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষের কথায়, ‘‘বিরল রোগ নিয়ে ভাবছে রাজ্য, এটাই ইতিবাচক। এ বার অন্তত দফতরে দফতরে ঘোরার পরিবর্তে আবেদনগুলি পাঠানোর জায়গা তৈরি হল। আশা করব, চিকিৎসায় সরকারি সাহায্য নিয়েও কাজ করবে কমিটি। সরকারি ভাবে বিরল রোগীর পরিসংখ্যান নেই। সেটা তৈরিও জরুরি।’’

কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব, চিকিৎসক তমালকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘সবে কমিটি তৈরি হল। বিরল রোগের কোঅর্ডিনেশন সেন্টার কোথায় হবে, কোন রোগে কী চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, ধীরে ধীরে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ সবে কিছুটা সময় লাগবে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিরল রোগ নিয়ে রাজ্যের খুব বড় পদক্ষেপ এটি। কেন্দ্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই কমিটি কাজ করবে। একাধিক বৈঠক করে তবেই কমিটির কাজের রূপরেখা তৈরি করা যাবে।’’

কিন্তু বিরল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কমিটির সদস্যদের তিন মাস অন্তর বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ করবে এই প্রয়াসকে? কমিটির একাধিক সদস্যেরই বক্তব্য, এত দিন তো কিছুই ছিল না। সেখানে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কাজের রূপরেখা তৈরি হলে প্রয়োজনে ঘনঘন বৈঠক করা হবে। ‘অর্গানাইজেশন অব রেয়ার ডিজ়িজেস, ইন্ডিয়া’র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর প্রসন্ন সিরোলের কথায়, ‘‘খুবই ভাল সিদ্ধান্ত। তবে কমিটি যেন নিষ্ক্রিয় না থাকে। কারণ, অন্য রাজ্যে কমিটি গঠন হলেও বেশির ভাগ জায়গায় তার অস্তিত্ব নামমাত্র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন