পরিবর্তনের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু আজ দেখছি, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই।
মৃত্যু তো আর শেষ কথা বলতে পারে না। সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মতো প্রাণের সঞ্চার হয়। ঠিক এটাই বলতে গিয়ে হেনস্থা হতে হল আমাকে।
এখানে ‘আমি’ গুরুত্বপূর্ণ নই। আক্রমণটা তো ব্যক্তি সনাতন দিন্দার উপরে আসেনি। এসেছে গোটা শিল্পের উপরে। কোনও প্ররোচনা ছাড়া, কোনও কিছু না বুঝেই একদল এসে অভিযোগ দেগে দিলেন যে, ‘নোংরামো’ করছি আমরা। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এসে বন্ধ করে দিচ্ছে আমার তৈরি ভিডিও।
বলে নেওয়া দরকার, কী ছিল সেই ভিডিওতে।
বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে সে দিনই ছুটেছিলাম সেখানে। অসহায় চোখে দেখেছি, মানুষের হাহাকার। মৃত্যুর মিছিল। মনে হয়েছিল, এই মৃত্যু তো শেষ কথা বলতে পারে না। আমরা আমাদের মতো করেই ভাবি। সেই ঘটনার দু’দিন পরে ছোট্ট একটা টবে একটা চারাগাছ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম গণেশ টকিজ-এ। চেনাজানা এক পুলিশ অফিসারকে অনুরোধ করে বলেছিলাম, ‘আমাকে একটু কাছে যেতে দেবেন? আমি শুধু এই চারাটা গিয়ে রেখে আসব।’ ধ্বংসস্তূপের এক কোনায় সামান্য এক প্রাণের স্পন্দন।
ওই দুর্ঘটনাস্থল থেকেই হাতে করে মাটি নিয়ে এসে বাড়িতে অশ্বত্থ গাছের চারা পুঁতেছি। মনে হয়েছে, এটা নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সে দিনের যা ছবি দেখানো হয়েছে তা জোগাড় করেছি। বেশ কিছু বন্ধুও মোবাইলে ছবি তুলেছিলেন। সেই সব ছবিও নিয়েছি। সে সব কিছু নিয়ে মৃত্যুর বুক থেকে উঠে আসা ছোট চারাগাছের প্রাণকে কেন্দ্র করে ছোট্ট একটা ভিডিও বানিয়েছি। আমার নিজস্ব মত। নিজস্ব ভাবনা।
আর তার পরেই সুযোগটা এসে গেল ‘হুসেন ১০০’-তে। মকবুল ফিদা হুসেনের শতবর্ষ উপলক্ষে অ্যাকাডেমিতে যে প্রদর্শনী শুরু হল, সেখানেই ভিডিওটা দেখাব ঠিক করলাম। ৯ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল তিন দিন ধরে সেই ভিডিও দেখে অনেকেই প্রশংসা করলেন। একটি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাটি দেখার জন্য ধন্যবাদও জানালেন।
আর তার পরে, আচমকাই এই আক্রমণ! কেন? জানি না। কী এমন দেখালাম ভিডিও-তে যে তার গায়ে ‘নোংরামো’র দাগ লেগে গেল? কোথাও তো কাউকে দোষারোপ করা হয়নি? কেন সেতু ভেঙে পড়ল, তা তো কোথাও বলা হয়নি। অ্যাকাডেমিরই একদল কর্মী আচমকাই প্রদর্শনীর শেষ দিনে বিকেলের দিকে ভিডিও নিয়ে চিৎকার জুড়ে দিলেন। আচমকাই পুলিশ চলে এল। বন্ধ করে দেওয়া হল ভিডিও। কেন? জানতে চেয়েছিলাম পুলিশের কাছে। আমাকে বলা হয়েছিল, উপরতলার নির্দেশ আছে। কোন উপরতলা? কোনও উত্তর পাইনি।
হাতজোড় করে বলেছি, ‘ঠিক আছে। আপনারা নিজেরা দেখুন। মাত্র তো সাত মিনিটের ভিডিও। দেখে যদি মনে করেন আপত্তিকর কিছু আছে, বন্ধ করে দেবেন।’ পুলিশ অফিসারেরা অবশ্য সেই ভিডিও দেখে আপত্তির কিছু খুঁজে পাননি। তখনও কিন্তু, দূরে দাঁড়ানো অ্যাকাডেমির একদল কর্মী, ‘হাত ভেঙে দেব, পা ভেঙে দেব’ বলে চিৎকার করে যাচ্ছিলেন। পুলিশেরই সামনে। কিন্তু, পুলিশ ওদের কোনও কিছু বলেনি। তবে, আমাকেও আর ভিডিও বন্ধ করতে জোর করা হয়নি।
কিন্তু, এমনটাই বা হবে কেন?
আরও পড়ুন, ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেতার ফোন শিল্পীকে