প্রতীকী ছবি।
নিজেদের জমি। কিন্তু, সেই জমিতে কাজ করতে গেলেও তোলা দিতে হবে। অভিযোগ, বহু কষ্টে কিছু টাকা দিয়েও ছাড় মেলেনি। এলাকার তৃণমূল নেতা আরও টাকা চেয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন।
তারই জেরে শনিবার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন ব্যারাকপুরের তালপুকুর এলাকার এক মহিলা। পাপিয়া কৌর নামে ওই মহিলা সুইসাইড নোট হিসেবে যা লিখেছেন, তাতে তিনি আনন্দপুরী এলাকার তৃণমূল নেতা ও প্রাক্তন কাউন্সিলর মিলনকুমার আশকেই
দায়ী করেছেন। তোলা আদায় থেকে শুরু করে জমি দখলের চেষ্টা ও হুমকি-সহ একাধিক অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিষ খাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়া পাপিয়াদেবী বি এন বসু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁর স্বামী টারসেন সিংহ টিটাগড় থানায় মিলনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গোলমাল। ওই মহিলা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মিলন আশ-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাঁরা সবাই পলাতক। খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ খুঁজে না পেলেও মিলনবাবুকে অবশ্য ফোনে ধরা গিয়েছে। তাঁর দাবি, তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। তবে কে বা কারা তা করছে, তা জানাননি। তিনি বলেন, ‘‘টাকার লোভ আমার নেই। কাউন্সিলর থাকাকালীন নিজের রোজগার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দিতাম।’’ ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্তের কথায়, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি বিশদ জানি না। খোঁজ নিচ্ছি। পুলিশ তদন্ত করছে। মিলন আশ দোষী হলে পুলিশ পদক্ষেপ করবে।’’
পাপিয়াদেবীর স্বামী বলেন, ‘‘শনিবার ভোরে একটা শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, পাপিয়া বমি করছে। মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’’
পাপিয়াদেবীর বোন ডালিয়া দাসের অভিযোগ, আনন্দপুরী এলাকায় তাঁর মায়ের একটি জমি-সহ বাড়ি রয়েছে, যা দীর্ঘদিন জবরদখল করে রেখেছিলেন আত্মীয়েরা। সেই জমি ফিরে পেতে তাঁরা মিলনবাবুর দ্বারস্থ হন। মিলনবাবু দু’পক্ষকে ডেকে কথা বলে বাড়ি দখলমুক্ত করলেও সেটির চাবি নিজের কাছে রেখে দেন বলে অভিযোগ।
টারসেন বলেন, ‘‘আমরা বারবার চাবি চাইলেও মিলনবাবু দেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘এক লক্ষ টাকা পেলে তবেই চাবি দেব।’ আমাদের কাছে অত টাকা ছিল না। তাও পঞ্চাশ হাজার জোগাড় করে তাঁকে দিই।’’ অভিযোগ, তার পরেও মিলনবাবু চাবি ফেরত দেননি। আরও টাকা দাবি করতে থাকেন। তার পরে সপ্তাহখানেক আগে তিনি চাবি ফেরত দেন।
ডালিয়াদেবী বলেন, ওই বাড়িটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাই পুরসভার অনুমতি নিয়ে তাঁরা সেটি ভাঙছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দিন দুয়েক আগে দিদি আর বাবা কাজের তদারকি করতে গিয়েছিল। তখন মিলন প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। সবার সামনে অপমান করে। বলে, ওই জমিতে সে আমাদের কাউকে পা দিতে দেবে না।’’ টারসেন বলেন, ‘‘অপমান এবং হুমকি সহ্য করতে না পেরেই পাপিয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’’