পুজোর ভিড় টানতে বাজি ওয়াই-ফাইয়ের চমকও

চমকের লড়াই! উৎসব কাপের টক্করকে বোধ হয় এখন এটাও বলা চলে। কেউ ২২ হাজার সিঁদুরের গাছকৌটো দিয়ে সাজিয়েছেন মণ্ডপ, কেউ তুলে এনেছেন গ্রামবাংলার টেরাকোটা। কেউ মণ্ডপ সাজাতে বাদ দেননি মশারি, কেউ আবার যুব সমাজের তারিফ কুড়োতে মণ্ডপ চত্বরে রেখেছেন বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা!

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪০
Share:

চমকের লড়াই!

Advertisement

উৎসব কাপের টক্করকে বোধ হয় এখন এটাও বলা চলে। কেউ ২২ হাজার সিঁদুরের গাছকৌটো দিয়ে সাজিয়েছেন মণ্ডপ, কেউ তুলে এনেছেন গ্রামবাংলার টেরাকোটা। কেউ মণ্ডপ সাজাতে বাদ দেননি মশারি, কেউ আবার যুব সমাজের তারিফ কুড়োতে মণ্ডপ চত্বরে রেখেছেন বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা!

বছর দুই আগে রথ তৈরি করে শহরকে তাক লাগিয়েছিল কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দ। এ বার সেখানে ‘সিঁদুর খেলা’র থিম। মণ্ডপে ২২ হাজার সিঁদুরের গাছকৌটো দিয়ে ঝাড়বাতির আদলে ইনস্টলেশন করেছেন শিল্পী কৃশানু পাল। পটচিত্রে তুলে ধরা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সিঁদুর খেলা। প্রতিমাতেও থাকছে পটচিত্রের আভাস। মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হয়েছে পাইন কাঠের নানা ভাস্কর্যও।

Advertisement

প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের পুজো বলে পরিচিত ভবানীপুর অগ্রদূত উদয় সঙ্ঘ বছর কয়েক আগে ১ কোটি বোতাম দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তাক লাগিয়েছিল। এ বার পুজো ময়দানে আনকোরা শিল্পী আনন্দ আঢ্যের কাঁধে তাদের পুজোর ভার। মণ্ডপ সাজাতে বাংলার টেরাকোটা এবং কাঁথাশিল্পকে তুলে এনেছে তারা। থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবহসঙ্গীত তৈরি করেছেন কালিকাপ্রসাদ।

ভবানীপুর কিশোর সঙ্ঘে পেরেক, উল এবং ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে দুর্গার মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী সিদ্ধার্থ চৌধুরী। এমন কাজও উৎসব কাপে নজর কাড়তে পারে।

আলিপুর সর্বজনীনের পুজোকর্তারা এ বার ভূমিকেই দুর্গা রূপে পুজোর থিম করেছেন। তাদের থিম ‘কর্ষণে ত্রিশক্তি’। পুজোকর্তাদের বক্তব্য, চাষের জন্য মাটি খুঁড়তে হয়। বাসস্থান করতে হলেও মাটি খুঁড়তে হয়। এই কর্ষণের প্রতীক হিসেবে থাকছে কাঠের লাঙল। শিল্পী দেবাশিস বাড়ুই ও আশিস চৌধুরী মণ্ডপ সাজাতে কাঠ, লোহা, টিন, সুতো, কাপড় ব্যবহার করেছেন। বাদ দেননি মশারিও! পুজো থেকে টাকা বাঁচিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের তীর্থ করতেও নিয়ে যান এই
পুজোর সদস্যেরা।

চোরবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপে এ বার থিম অশুভ শক্তি। ফাইবার, প্লাস্টার অব প্যারিসের তৈরি অসুরের নানা রূপের মুখোশ দিয়ে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। তালতলা যুবগোষ্ঠী আবার মোবাইলের নানা সুবিধা-অসুবিধা এবং অ্যাপস নিয়ে থিম সাজিয়েছে। মণ্ডপসজ্জার উপাদানে অভিনবত্ব এনে তাক লাগাতে চাইছে দক্ষিণের বান্ধব সম্মিলনী। ‘সৃষ্টিতে চিরন্তন’ থিমে শিল্পী উৎপল দত্ত ও কাজল সাহা তুলে ধরেছেন রং‌বেরঙের পাতা, বনসাই, পাখি, মাছ। উপাদান হিসেবে নিয়েছেন বেত, বাঁশের মতো পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র। হরিদেবপুরের বিবেকানন্দ স্পোর্টিং মৃৎশিল্পীদের নিয়ে তৈরি থিমে মাটির প্রতিমা গড়তে প্রয়োজনীয় জিনিসে সেজেছে মণ্ডপ। থাকছে মাটির নানা কাজও। গাছ, পুঁতি, আলোর মেলবন্ধনে মায়াবি পরিবেশ গড়ে উঠেছে হরিদেবপুরের আদর্শ সমিতিতে। উপাদানে পরিবেশবান্ধব জিনিস এনে এ বার তারিফ কুড়োতে পারে বড়িশা নবীন সঙ্ঘ। সেখানে মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে সর্ষে গাছের ডাল, বেলের খোলা, পাইনের ফুল। প্রতিমা থাকছে সনাতনী রূপে। প্রতি বছরই অকালবোধন তুলে ধরে খিদিরপুর ভেনাস ক্লাব। এ বার মণ্ডপসজ্জায় চমক দেখাতে ব্যবহার করা হয়েছে প্লাস্টিকের কাঁটা-চামচ। অকালবোধনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বালুচিত্রে রামায়ণের গল্প তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপের গায়ে।

দুর্গাপুজোই বাংলার সেরা উৎসব। তাই মণ্ডপ সাজাতে বাঙালিয়ানাকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বেলঘরিয়ার বিবেকানন্দ পার্ক সাংস্কৃতিক চক্র। শিল্পী অরবিন্দ পাল ও স়ঞ্জয় অধিকারী সেখানে মণ্ডপে তুলে ধরেছেন এপার বাংলার নানা কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে। সল্টলেকের ডি বি ব্লক তুলে ধরেছে দুর্গাপুজোর আসা-যাওয়াকে। প্রতিমায় দেবসিংহকে ফিরিয়ে এনেছে তারা। দিল্লির অক্ষরধামের আদলে মণ্ডপ গড়েছে ডি এল ব্লক। তাদের চমক অবশ্য আলোকসজ্জায়। এ কে ব্লক এ বার রাজ্যের বিভিন্ন জেলার কুটিরশিল্পকে তুলে ধরছে। শিল্পীদের হাজির করে দেখানো হবে লাইভ শো।

থিম, প্রতিমা, উপাদানের বাইরেও দর্শক টানতে নতুন পন্থা নিয়েছে শহরের দু’টি পুজো। যুব প্রজন্মকে টানতে এ বার তাই মণ্ডপ চত্বরে বিনামূল্যে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা রাখছেন কাঁকুড়গাছির স্বপ্নার বাগানের পুজোকর্তারা। শহরের বুকে এমন ওয়াই-ফাই জোন এর আগে হয়নি বলেই দাবি করছেন তাঁরা। অভিনবত্ব আছে সন্দেহ নেই কিন্তু অষ্টমীর সন্ধ্যায় ওয়াই-ফাইয়ের লোভে ভিড় দাঁড়িয়ে গেলে কী পরিস্থিতি হবে, তা নিয়ে কিন্তু আশঙ্কা থাকছে পুলিশের।

ছোটদের জন্য এ বার ‘বিশেষ ভিআইপি’ পাস করেছেন খিদিরপুর ২৫ পল্লি। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে স্কুলের পরিচয়পত্র নিয়ে এলে এক জন পড়ুয়া এবং তার তিন জন অভিভাবককে ভিআইপি গেট দিয়ে মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবে।

চমকের লড়াইয়ে এ বার উৎসব কাপে ভিড়ের সমীকরণ বদলাবে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন