নেদারল্যান্ডসের উট্রেক্ট শহরে স্ট্যান্ড উপচে পড়ছে সাইকেল। ছবি: স্যমন্তক ঘোষ।
কলকাতা শহরের রাস্তায় মোটরবাইক, স্কুটার ও চার চাকার গাড়ির চেয়ে সাইকেলের সংখ্যা বেশি। এ কথা বলছে ২০১১ সালের জনসুমারির রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, এ শহরে সাইকেলের সংখ্যা ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৮৭, বাইক ও স্কুটারের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৭ হাজার এবং গাড়ির সংখ্যা ৮৫ হাজার ৬০৫। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের এক রিপোর্টে প্রকাশ, দেশের মধ্যে সাইকেল চলাচলের নিরিখে কলকাতা দ্বিতীয়। দিল্লির পরেই।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়েবসাইট বলছে, বিশ্বের ‘সব চেয়ে পরিবেশবান্ধব’ যান সাইকেল। সে কথা মাথায় রেখেই ২০১৮ সালের ৩ জুন দিনটিকে প্রথম ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। বস্তুত, জার্মানির বন শহরে আয়োজিত শেষ পরিবেশ বৈঠকেও সাইকেলের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রথম বিশ্ব সাইকেল দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান হলেও কলকাতার প্রশাসন তেমন কোনও আয়োজন করছে না। বহু আধিকারিক জানেনই না, বিশেষ এই দিনটির কথা। তবে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্র্যাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘শহরের বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেল চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়ে প্রশাসন ভাবনাচিন্তা করছে।’’ অন্য দিকে, হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, ইকো-পার্কে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
নিউ টাউনে তৈরি হয়েছে সাইকেলের আলাদা পথ। ছবি: সুমন বল্লভ।
শহরের কিছু সাইকেল ক্লাব দিনটি পালন করছে। তারই অন্যতম ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ মে মাস জুড়ে বিভিন্ন রাস্তায় সাইকেলের সংখ্যা নিয়ে সমীক্ষা করেছিল। ক্লাবের সদস্য ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শমীক সরকার জানান, ইতিমধ্যেই ৩৬ সেট ডেটা তাঁদের হাতে এসেছে। আরও আসবে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হবে শহরে কখন কত সাইকেল চলে। তিনি বলেন, ‘‘শুধু রুবি মোড়েই মাসে ৪ লক্ষ ১৬ হাজার সাইকেল চলে। মোট যান চলাচলের ৫.৫ শতাংশ।’’
শমীকের বক্তব্য, গত সাত বছরে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। তার সঙ্গে সাইকেলও বেড়েছে। একটি পরিচিত সাইকেল সংস্থার আধিকারিক কে এম শর্মার দাবি, গত দু’-তিন বছরে শুধু কলকাতায় সাইকেল বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শহরের ৬২টি রাস্তায় এখনও সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। রাজারহাট-নিউ টাউনে কিছু সাইকেল লেন তৈরি হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার রোডেও শখেরবাজার থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত সাইকেল লেন তৈরি হয়েছিল। সেখানে এখন ট্যাক্সি দাঁড়ায় । অর্থাৎ, সাইকেল চালানোর পরিবেশটাই গড়ে ওঠেনি। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা।
সে কথা মাথায় রেখেই প্রথম বিশ্ব সাইকেল দিবসে শহরের সাইকেল ক্লাবগুলি ‘নিরাপদ এবং স্বাধীন’ এই স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নামছে। আজ, রবিবার সকাল ছ’টায় ভিক্টোরিয়ার সামনে একটি বড় জমায়েত হচ্ছে। বিশেষ দিনটিতে ‘নো সাইকেল জ়োন’ রেড রোডে সাইকেল চালানোর জন্য পুলিশের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সাইকেল-আরোহী শতঞ্জীব গুপ্তের কথায়, ‘‘বিলেতের অক্সফোর্ড, ইউরোপের আমস্টারডাম ও লাতিন আমেরিকার বোগোটায় (কলম্বিয়ার রাজধানী) ইতিমধ্যেই সাইকেল আন্দোলন বিপ্লবের জায়গায় পৌঁছেছে। এই সমস্ত শহরে মেয়র-প্রেসিডেন্টদেরও সাইকেল চড়ে দফতরে যেতে দেখা যায়। প্রতিটি জায়গাতেই সাইকেলবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ওরা যা পারে, আমরা তা পারব না কেন?’’