‘মারমুখী উন্মত্ত জনতা ছুটে আসছে ডাক্তারদের দিকে’

এটুকু বলতে পারি, যে ডাক্তারবাবুরা আমাদের প্রাণ বাঁচান, যাঁরা আমাদের মতো পড়াশোনা না জানা মানুষগুলোকে শাসন করে, ভালবেসে চিকিৎসা করেন, ওঁদের জন্য এটা প্রাপ্য ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০২:০৪
Share:

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীরা ভেঙে ফেলছেন ইমার্জেন্সির দরজা। নৌশাদ আলি (ইনসেটে)। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দিনটা ছিল সোমবারের রাত। ঘড়ি না থাকায় সময়টা মনে করতে পারছিলেন না এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নিগ্রহের প্রত্যক্ষদর্শী। রাতের খাবার আনতে বেরোচ্ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর ওই আত্মীয়। তিনি জানান, কিছু মারমুখী মানুষ চিকিৎসকদের দিকে ছুটে আসছিলেন তখন। সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনার কথা শুনেছেন বলে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেননি মধ্য তিরিশের ওই ব্যক্তি। তাঁর দাবি, মাঝবয়সি এক পুরুষ ডাক্তারকে কয়েক জন মিলে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারছেন দেখে আটকে গিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নৌশাদ আলি নামে সেই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, ‘‘ওই ডাক্তারের নাক-মুখ ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে তখন। তা-ও থামছিলেন না ওঁরা। দেখলাম, পিলপিল করে মারমুখী উন্মত্ত জনতা ছুটে আসছে ডাক্তারদের দিকে। খবর পেয়ে অন্য ডাক্তারবাবুরাও তত ক্ষণে এসে গিয়েছিলেন গোলমাল থামাতে। কিন্তু থামা তো দূর, বরং আরও ডাক্তারবাবুদের পেটালেন ওঁরা। আফশোস হচ্ছে চোখের সামনে সে সব দেখেও ভয়ে ওঁদের আটকাতে পারলাম না।’’

পাশে থাকা আরও এক প্রৌঢ়া ঊর্মিলা প্রসাদ বলে ওঠেন, ‘‘চোখের সামনে যা দেখলাম, তা যেন কোনও দিন কাউকে দেখতে না হয়। এটুকু বলতে পারি, যে ডাক্তারবাবুরা আমাদের প্রাণ বাঁচান, যাঁরা আমাদের মতো পড়াশোনা না জানা মানুষগুলোকে শাসন করে, ভালবেসে চিকিৎসা করেন, ওঁদের জন্য এটা প্রাপ্য ছিল না। ওঁরাও তো কারও সন্তান। যাঁর যাওয়ার সময় হবে, তাঁকে তো কেউ আটকাতে পারেন না। ডাক্তারবাবুরাও তো মানুষ!’’ ওই দিনের দুই প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘এই সত্যটা ওই বৃদ্ধের পরিবার বুঝল না! যে রোগীকে নিয়ে এত গোলমাল, সেই বৃদ্ধ মানুষটিকে রবিবার যখন বাড়ির লোকেরা এনেছিলেন, তখনই ওঁর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমরা সামনেই ছিলাম।’’

Advertisement

মৃত মহম্মদ শহীদের পরিবার তাঁদের রোগীর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই রাতেই। তা সত্ত্বেও এমন ঘটনার সমর্থন করছেন না এন আর এসের বাইরে অপেক্ষারত রোগীর পরিজনেদের অনেকেই। তাঁদের দাবি, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতি যদি হয়েও থাকে, সে জন্য সঠিক জায়গায় ওঁরা অভিযোগ করতে পারতেন। তা হলে বরং সহানুভূতি পেত ওই পরিবার।’’

হাসপাতালের জে এন ঘোষ ওয়ার্ডের দোতলায় ভর্তি ছিলেন তালতলার বাসিন্দা নৌশাদের দিদি ইসরাত বেগম। ৮৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী মহিলা এই মুহূর্তে জন্ডিসেও আক্রান্ত। কর্মবিরতির জেরে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার দিদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ‘‘কী হবে দিদি যদি না বাঁচেন? এমন বিনা চিকিৎসায় পড়ে আছেন আরও রোগী। তাঁরা যদি একে একে মারা যান? একটি মৃত্যুর কারণে ক’টা মৃত্যুর মিছিল বেরোবে?’’ প্রশ্ন তুলছেন নৌশাদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন