Calcutta News

চলন্ত অটোয় শ্লীলতাহানি, অভিযোগে ধুন্ধুমার গড়িয়া-টালিগঞ্জ

বছর ঊনপঞ্চাশের ওই মহিলা বসেন সামনের সিটে, অটোচালকের বাঁ-দিকে। ওই অটোতে তাঁরা ছাড়া অন্য কোনও যাত্রী ছিলেন না। অভিযোগ, কিছু দূর যাওয়ার পরেই মহিলার কাছে ঘেঁষে আসতে শুরু করে অটোচালক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:৫৪
Share:

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অটোচালকদের জুলুমবাজির ছবি দেখা গেল টালিগঞ্জ-গড়িয়া অটো রুটে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

অটোচালকদের শাসানি, অভব্যতা আর হেনস্থার হাত থেকে যেন মুক্তি নেই কলকাতার। এ বার ভরসন্ধ্যায় চলন্ত অটোয় ছেলের সামনেই চালকের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার এক মহিলা। নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে চলন্ত অটো থেকেই ঝাঁপ দিতে বাধ্য হন তিনি। অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে থানার সামনেই ওই মহিলাকে ঘিরে হুমকি দিল এক দল যুবক। এমনকী, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করায় শাসানির মুখে পড়ে খোদ পুলিশই। এই গ্রেফতারির প্রতিবাদে বন্ধ করে দেওয়া হল শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তায় অটো চলাচল। চরম হয়রান হলেন নিত্যযাত্রীরা। অটোচালকদের জুলুমবাজির এই চিত্রের পাশাপাশি খাস কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠল।

Advertisement

কী ঘটেছিল অটোয়?

নিগৃহীতা মহিলার ছেলে জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বাঁশদ্রোণীর ঊষা মোড় থেকে গড়িয়া যাওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে অটোয় উঠেছিলেন তাঁর মা। পায়ে সামান্য সমস্যা থাকায় অটোর পিছনের সিটে বসতে পারেননি ওই মহিলা। ফলে তাঁর ছেলে পিছনের সিটে বসেন। বছর ঊনপঞ্চাশের ওই মহিলা বসেন সামনের সিটে, অটোচালকের বাঁ-দিকে। ওই অটোতে তাঁরা ছাড়া অন্য কোনও যাত্রী ছিলেন না। অভিযোগ, কিছু দূর যাওয়ার পরেই মহিলার কাছে ঘেঁষে আসতে শুরু করে অটোচালক। এর পর ছেলের সামনেই তাঁর শ্লীলতাহানি করে। প্রথমটায় প্রতিবাদ না করলেও এক সময় আর চুপ থাকতে পারেননি ওই মহিলা। তিনি প্রতিবাদ জানান। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় চলন্ত অটো থেকেই রাস্তায় ঝাঁপ দেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন
৫ বছর কারাদণ্ড বেগম খালেদা জিয়ার, উত্তপ্ত ঢাকা

মহিলার ছেলে জানিয়েছেন, গড়িয়ায় একটি শপিং মলের কাছে মাকে ঝাঁপ দিতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে তিনি চালককে অটো থামাতে বলেন। এর পর দৌড়ে গিয়ে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকে সেখানে ডেকে আনেন তিনি। ওই ট্র্যাফিক পুলিশই তাঁদের নেতাজিনগর থানায় নিয়ে যান। সেখানে অটোচালকের নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। ইতিমধ্যে ওই অটোচালককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

মহিলার দাবি, রাত ১১টা নাগাদ থানায় বসে থাকার সময় দেখতে পান, বাইরে জমা হতে শুরু করেছে জনা আড়াইশো লোক। তাদের মধ্যে এক দল যুবক চেঁচাতে থাকে, তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। মহিলার ছেলের দাবি, থানা থেকে বাইরে বার হতে গেলেও ওই যুবকদের একাংশ ঘিরে ধরে তাঁদের। তাঁরাই রীতিমতো শাসানি দেন। ভয়ে ফের থানায় ঢুকে যান মা ও ছেলে। এর পর সে রাতেই গাড়িতে করে বাঁশদ্রোণীতে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

আরও পড়ুন
অটোয় বসেই স্বনির্ভরতার উড়ানে প্রমীলা বাহিনী

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ইমান আলি খান নামে এক অটোচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই গ্রেফতারির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যত নৈরাজ্য দেখা দেয় টালিগঞ্জ-গড়িয়া অটো রুটে। ওই রুটের সমস্ত অটো চলাচল বন্ধ করে দেন চালকেরা।

সকাল থেকেই বন্ধ ছিল টালিগঞ্জ-গড়িয়া অটো রুটের সমস্ত অটো চলাচল। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সাতসকালে অটো না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীরা। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুলিশ গিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেনি। বরং কাউন্সিলরকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অটোচালকেরা। এ ব্যাপারে দক্ষিণ কলকাতা জেলা অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড অপারেটার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল সুতার বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অটোচালকদের বলেছি দোষী-নির্দোষ বিচার করার বিষয়টা আইনের হাতে ছেড়ে দিন। যাত্রীদের স্বার্থে আপনারা অটো চালান। কোথাও কোনও সমস্যা হলে আমরা সহযোগিতা করব।’’

এই ধরনের খবর আপনার ইনবক্সে সরাসরি পেতে এখানে ক্লিক করুন

গত রাতের ঘটনার পর এখনও আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন ওই অভিযোগকারিণী। মিডিয়ার সামনেও মুখ খুলতে চাননি তিনি। প্রায় একই অবস্থা ওই মহিলার ছেলেরও। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বছর আঠাশের ওই যুবকের প্রশ্ন, “ঝাণ্ডার তলায় থাকলেই কি সব অপরাধ মাফ হয়ে যাবে?” গত রাতে যে রকম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন এবং তার পর যে আতঙ্কের মধ্যে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ওই যুবকের মন্তব্য: “এক জন অভিযোগকারিণী থানার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন। একেই কি নাগরিক সমাজ বলে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন