ঘটা করে প্রচারই সার, অবাধ্য চালককে রুখবে কে

গতি কমাতে দায় থাকে যাত্রীদেরও

শুরুতে বাসের গতি এতটাই কম ছিল যে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু হেস্টিংস পৌঁছনোর পরে চালক বাসের গতি আচমকাই বাড়িয়ে দেন। যাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁরা মাঝেমধ্যেই গতির কারণে একে অন্যের গায়ে গিয়ে পড়ছিলেন।

Advertisement

সায়নী মুখোপাধ্যায় (আহত বাসযাত্রী)

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২২
Share:

মর্মান্তিক: গুরুতর আহত অনুপ সামন্ত। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বেহালা থেকে হাওড়া যাব বলে রবীন্দ্রনগর-হাওড়া রুটের মিনিবাসে উঠেছিলাম। বসার জায়গা পেয়েছিলাম বাসের সামনের দিকে। আমার পাশেই বসে ছিল ১০-১২ বছরের একটি ছেলে। শুরুতে বাসের গতি এতটাই কম ছিল যে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু হেস্টিংস পৌঁছনোর পরে চালক বাসের গতি আচমকাই বাড়িয়ে দেন। যাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁরা মাঝেমধ্যেই গতির কারণে একে অন্যের গায়ে গিয়ে পড়ছিলেন। রোজ এত দুর্ঘটনার খবর শুনি। তাই ভয় লাগছিল। আমরা অনেকেই বাসের গতি কমানোর জন্য অনুরোধ করছিলাম। কিন্তু চালক এবং কন্ডাক্টর, নির্বিকার ছিলেন দুজনেই।

Advertisement

বাবুঘাট থেকে স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে হাওড়ার দিকে তীব্র গতিতে ছুটছিল বাস। মিলেনিয়াম পার্কের প্রধান গেটের কাছাকাছি পৌঁছতেই হঠাৎ জোর ঝাঁকুনি। দেখলাম চালক হঠাৎই বাঁ দিকে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে ফুটপাথে উঠে জোরে ব্রেক কষছেন। জোর ঝাঁকুনিতে দূরে ছিটকে পড়লাম। কয়েক সেকেন্ড জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরতে দেখি, বাসের ইঞ্জিনের উপরে পড়ে রয়েছি। আমার আশপাশে একে অন্যের উপরে পড়ে রয়েছেন আরও জনা পাঁচেক যাত্রী। শরীরের বিভিন্ন অংশে চোট নিয়ে তখন অনেকেরই উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বাসটি ফুটপাথে উঠে এক দিকে পুরোপুরি কাত হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল, যে কোনও মুহূর্তে উল্টে যাবে। আতঙ্কে চিৎকার করতে করতে যাত্রীরা যে যার মতো হুড়মুড়িয়ে বাস থেকে নামতে ব্যস্ত। আমার পাশে বসে থাকা ছেলেটিকে দেখলাম অদূরেই হাত-পায়ে চোট নিয়ে কাতরাচ্ছে। এক যাত্রীর ডান হাতের বুড়ো আঙুল রক্তে ভেসে যাচ্ছে। অনেকের তখনও জ্ঞান ফেরেনি।

আরও পড়ুন: ফুটপাথে বেপরোয়া বাস, মাসুল গুনলেন পথচারী

Advertisement

আমার বাঁ পায়ে এতটাই যন্ত্রণা হচ্ছিল যে নামার ক্ষমতা ছিল না। কেউ এক জন আমাকে ধরে বাস থেকে নামিয়ে ফুটপাথের পাশে বসিয়ে দেন। তাকিয়ে দেখি, বাসটি ফুটপাথের উপরে উঠে একটি গাছে ধাক্কা মেরেছে। গাছ আর বাসের মাঝে আটকে থাকা এক পথচারী যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চার পাশ। তাঁকে গাছ আর বাসের মাঝখান থেকে বার করতে হাত লাগিয়েছেন বাসেরই কয়েক জন যাত্রী। মিনিট পনেরোর চেষ্টার পরে যখন তাঁকে বের করা গেল, তখন তাঁর ডান পায়ের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। হাঁটুর পর থেকে পিষে গিয়েছে বাকি পা। পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে হাসপাতালে পাঠাল। পরে আমাদের আরও তিন জনকে আনা হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

আমার আরও বড় বিপদ হতে পারত। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছি। বার বার মনে হচ্ছে ওই পথচারীর কথা। তিনি তো নিয়ম মেনে ফুটপাথ ধরেই হাঁটছিলেন। তা সত্ত্বেও এক বাস চালকের বেপরোয়া আচরণের খেসারত দিতে হল ওঁকে। আর একটা কথাও বার বার মনে হচ্ছে। চালকের তো দোষ রয়েছেই। কিন্তু আমাদের অর্থাৎ যাত্রীদের ভূমিকাও কি যথাযথ ছিল? যে সময়ে চালক বেপরোয়া ভাবে বাস নিয়ে ছুটছিলেন, তখন আমাদেরও কি আরও সক্রিয় হয়ে ওঁকে থামানো উচিত ছিল না? আমরা, সাধারণ নাগরিকেরা সচেতন না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা কিন্তু ঠেকানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন