কয়েক কোটির কোকেন ‘পাচারের চেষ্টা’, ধৃত মহিলা

সকালে বিমানে চেপে কলকাতায় নামার আগেই খবর এসে গিয়েছিল, কোকেন সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই ঘুরে এমিরেটসের উড়ানে কলকাতায় নামছেন এক মহিলা যাত্রী। তাঁর নাম ও পাসপোর্ট নম্বরও জানা ছিল। তবে কতটা কোকেন তাঁর সঙ্গে আছে, সে বিষয়ে খবর ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৬
Share:

উদ্ধার হওয়া সেই কোকেন। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

সকালে বিমানে চেপে কলকাতায় নামার আগেই খবর এসে গিয়েছিল, কোকেন সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই ঘুরে এমিরেটসের উড়ানে কলকাতায় নামছেন এক মহিলা যাত্রী। তাঁর নাম ও পাসপোর্ট নম্বরও জানা ছিল। তবে কতটা কোকেন তাঁর সঙ্গে আছে, সে বিষয়ে খবর ছিল না।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে কলকাতায় নামার পরে নাম ও পাসপোর্ট নম্বর মিলিয়ে দেখে আটক করা হল গোভেন্দর সাবিত্রী (৪৭) নামে ওই মহিলা যাত্রীকে। তল্লাশির পরে তাঁর ব্যাগ থেকে মিলল ৩ কেজি ৭৫০ গ্রাম কোকেন। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা সুব্রত বিশ্বাস বুধবার জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে ওই কোকেনের দাম চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। সাবিত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এনসিবি সূত্রের খবর, ওই কোকেন তুলে দেওয়ার কথা ছিল এক নাইজিরীয় যুবকের হাতে। অ্যানেকওয়ে চিনওয়েজ অ্যালেক্স নামে ওই নাইজিরীয় যুবককে ফাঁদ পেতেও ধরা যায়নি। অ্যালেক্সের পাসপোর্ট নম্বর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের সব বিমানবন্দর ও বন্দরে। সে যাতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে না পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এনসিবি সূত্রে খবর, সাবিত্রীর কাছ থেকে ওই কোকেন নেওয়ার জন্যই অ্যালেক্স সোমবার মুম্বই থেকে কলকাতায় আসে। সে যে ফোন নম্বরটি ব্যবহার করে সেটি দিল্লির। সাবিত্রীর দায়িত্ব ছিল শুধু কোকেনের হাত বদল করা। টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে সাবিত্রী কিছু জানতেন না বলেই তাঁর দাবি। তিনি জানান, তাঁকে পূর্বপুরুষের দেশ বিনা পয়সায় ঘোরার টোপ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল কলকাতায়।

Advertisement

এনসিবি সূত্রে খবর, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের বাসিন্দা সাবিত্রীর পূর্বপুরুষেরা এক সময় দক্ষিণ ভারতে থাকতেন। সে অর্থে সাবিত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আগে কখনওই ভারতে আসেননি। শ্যারন নামে এক মহিলা তাঁকে বিনা পয়সায় পূর্বপুরুষের দেশ ভ্রমণের টোপ দিয়ে কোকেন-সহ ভারতে পাঠিয়েছিলেন। কলকাতায় থাকা-খাওয়া, এমনকী দশ দিন ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর টাকা জুগিয়েছিলেন শ্যারন-ই। তবে, সাবিত্রীর কাছ থেকে ডারবানে ফেরার কোনও টিকিট পাওয়া যায়নি। তাঁকে বলা হয়েছিল, পরে তাঁর ই-মেলে ফেরার টিকিট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সাবিত্রীর কলকাতায় নামার কথা ছিল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। এনসিবি-র তরফে কলকাতা বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগকে বিমান নামার মাত্র ১৫ মিনিট আগে সাবিত্রী সংক্রান্ত বার্তাটি পাঠানো হয়। এনসিবি অফিসারেরা সাবিত্রীর দেহ তল্লাশি করে কিছু পাননি। তাঁর সঙ্গের কমলা রঙের ট্রলি ব্যাগ হাতড়েও প্রথমে কিছু মেলে না। পরে দেখা যায় ওই ট্রলি ব্যাগের তলার দিকে বিশেষ ভাবে তৈরি আলাদা খোপে লুকোনো কোকেনের দু’টি বড় বড় প্যাকেট। সাবিত্রী এনসিবি অফিসারদের জানান, তিনি জামাকাপড়ের ব্যবসা করেন। নিজের তৈরি জামাকাপড়ের কিছু নমুনা বিক্রির জন্য ভারতে এনেছেন।

এনসিবি-র দাবি, শ্যারনের নির্দেশ মতো জোহানেসবার্গ থেকে সাবিত্রী প্রথমে উড়ে যান ব্রাজিল। সেখানে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কোকেন নিয়ে দুবাই হয়ে কলকাতায় পৌঁছন। কলকাতায় নামার পরে স্থানীয় একটি মোবাইল সিম নিয়ে বা কোনও বুথ থেকে সাবিত্রীর ফোন করার কথা ছিল শ্যারনকে। কারণ, কাকে ওই কোকেনের প্যাকেট পৌঁছে দিতে হবে তা সাবিত্রীকে তখনই বলে দেওয়া হত। সেইমতো এনসিবি-র এক অফিসারের মোবাইল থেকেই শ্যারনকে ফোন করেন সাবিত্রী। শ্যারনের কাছ থেকে নম্বর পাওয়া যায় অ্যালেক্সের। অ্যালেক্সকে ফোন করলে তিনি সাবিত্রীকে সল্টলেকের একটি গেস্ট হাউসে যাওয়ার কথা বলেন। এনসিবি অফিসারেরা সাবিত্রীকে নিয়ে সেখানে গেলে জানা যায়, অ্যালেক্স তাঁদের পৌঁছনোর আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন।

গেস্ট হাউস থেকে সাবিত্রীকে দিয়ে অ্যালেক্সকে আবার ফোন করানো হলে তিনি সন্ধ্যায় শহরের একটি জায়গায় একা তাঁকে আসতে বলেন। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘আমরা সেই ঝুঁকি নিতে চাইনি। আমাদের অফিসারদের দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। অ্যালেক্স সাবিত্রীর শারীরিক ক্ষতি করতে পারত। তাই, সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। এর পর থেকে অ্যালেক্সকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে ধরার জন্য সমস্ত জায়গায় লুক আউট নোটিস জারি করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন