হাসপাতালে তানিয়া সামন্ত। তখনও চলছে লড়াই। নিজস্ব চিত্র
সিঁথির অ্যাসিড-কাণ্ডে বধূহত্যার ধারা যোগ করল কলকাতা পুলিশ। তবে ঘটনার চার দিন পরেও মৃতার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের খোঁজ
পায়নি পুলিশ। বুধবার ই এম বাইপাস সংলগ্ন মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৮সি, দমদম রোডের বাসিন্দা তানিয়া সামন্তের (৩০)। গত রবিবার রাতে অ্যাসিড খাওয়া অবস্থায় তানিয়াকে প্রথমে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। মেয়ের এই পরিণতির জন্য তাঁর স্বামী পৃথ্বীজিৎ সামন্ত, শ্বশুর তপন সামন্ত, শাশুড়ি শ্যামলী সামন্ত এবং ননদ রঞ্জিতা সামন্তকে দায়ী করে সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার বাবা ইন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। পুরো ঘটনায় অন্য মাত্রা যোগ করেছে মৃতার জেঠিশাশুড়ি চিত্রা সামন্তের বয়ান।
চিত্রা জানিয়েছেন, ঘটনার পরে তাঁকে ফোন করে তানিয়ার শাশুড়ি নিজেদের বাড়িতে ডেকেছিলেন। অভিযোগ, তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়া পর্যন্ত তানিয়া অ্যাসিড খাওয়া অবস্থায় মেঝেতেই পড়েছিলেন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও চেষ্টা করেননি। উল্টে তখন ভিডিয়ো তুলতে ব্যস্ত ছিলেন তানিয়ার ননদ রঞ্জিতা সামন্ত। বৃহস্পতিবার চিত্রা অভিযোগ করেন, ‘‘মা যখন মেঝেতে পড়ে, তখন শোয়ার ঘরে আড়াই বছরের মেয়েটা খেলা করছিল। মা কী অবস্থায় রয়েছে, তা মেয়ে দেখতে পাচ্ছিল। তানিয়া শেষ মুহূর্তেও মর্যাদা পায়নি। ট্যাক্সির সিটে জিনিসপত্র ছোড়ার মতো তানিয়াকে ফেলে দিল জিৎ। অসুস্থ হলে এক জন অপরিচিত মানুষের সঙ্গেও ওই ব্যবহার করা যায় না। জানেন, ঘরের বৌ যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, তখন ওর ননদ পালানোর আগে পার্লারে যেতেও ভোলেনি। এরা কি মানুষ!’’
বধূর প্রতি এই আচরণের কথা জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসীরাও। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বামীর দাবি ছিল, স্ত্রী চূড়ান্ত মত্ত অবস্থায় ঘরে ঢুকে রান্নাঘরে রাখা অ্যাসিড খান। এতটা মত্ত অবস্থায় কারও পক্ষে অ্যাসিড খাওয়া সম্ভব কি না, পাল্টা সেই প্রশ্নে তুলেছেন মৃতার পরিজনেরা। এ দিন
কাটাপুকুর মর্গে তানিয়ার দেহের ময়না-তদন্ত হয়। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে পুলিশ। তবে তানিয়ার উপরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন, সে বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর বান্ধবীরাও। সায়ন মাইতি নামে তানিয়ার এক বান্ধবী বলেন,
‘‘মেয়েকে স্কুলে দিতে এলে দেখতাম, মাঝেমধ্যেই ওর চোখমুখ ফোলা থাকত। সেই দেখে আমরা ওকে চেপে ধরি। জানতে পারি, শ্বশুরবাড়িতে স্বামী, শাশুড়ি, ননদ ওর উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছেন।’’ তানিয়ার আর এক বান্ধবী সুস্মিতা রায় বলেন, ‘‘আমরা ওকে বলতাম, মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু ওর আশা ছিল, এক দিন নিশ্চয় স্বামী বদলাবেন। বারবার বলত সে কথা। তানিয়া ভীষণ ভাবে সংসার করতে চেয়েছিল। ভেবেছিল, এক দিন সব ঠিক হয়ে যাবে।’’
এ দিন তানিয়ার বাবা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মেয়ের যারা এমন অবস্থা করল, তাদের ধরা যাচ্ছে না কেন?’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ধরার জন্য সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।