এই ছাদ ভেঙে পড়েই মারা যান সরিতা (ইনসেটে)। বুধবার বাকসাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
বহুতল তৈরির জন্য পাঁচ বছর আগে প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল জমির মালিক এবং ভাড়াটেদের। ঠিক ছিল বহুতল তৈরি হয়ে গেলেই ওই জমিতে ভাঙাচোরা দোতলা বাড়িতে বসবাসকারী মোট ১৬ ঘর ভাড়াটে স্থায়ী ভাবে মাথার উপরে ছাদ পাবেন। কিন্তু চুক্তিমতো কাজ শেষ হওয়ার আগেই কালবৈশাখী ঝড়ে প্রায় একশো বছরের পুরনো ভাঙাচোরা দোতলা বাড়ির একটা অংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে মারা গেলেন ওই বাড়িতে বসবাসকারী এক গৃহবধূ।
মঙ্গলবার রাতে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে হাওড়া পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বাকসাড়া ফার্স্ট বাই লেনে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মহিলার নাম সরিতা দুবে (৪৭)। তিনি স্বামী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলের সঙ্গে ওই বাড়িতে থাকতেন। ওই দিন রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে হাত ধুতে শৌচাগারে যাওয়ার সময় দোতলার ছাদের একটা অংশ তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন সরিতাদেবী। এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীনারায়ণতলার কাছে সাউথ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই খবর পাওয়ার পরে রাতেই হাওড়া পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা ঘটনাস্থলে যান। বাড়িটির ভয়াবহ অবস্থা দেখে তাঁরা অবিলম্বে বাড়িটি ভেঙে ফেলা উচিত বলে পুরসভায় রিপোর্ট দেন। বসবাসকারী বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রোমোটারকে একাধিকবার বলা সত্ত্বেও তাঁদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেননি। যদিও ওই বাড়িটির প্রোমোটার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মৃতা সরিতাদেবীর ভাই অবিনাশ পান্ডে বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল তিন বছরের মধ্যে ঘর দেওয়া হবে অথবা অন্য জায়গায় বসবাসের ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু কিছুই করেননি। ১৬ টি ভাড়াটে পরিবারকে প্রাণ হাতে করে বসবাস করতে হচ্ছে।’’
যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ বাড়িটির প্রোমোটার ঋত্বিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ওই বাড়িটির নকশা ২০১৭ সালে পুরসভা অনুমোদন দিয়েছে। নিয়মমতো ২০২২ সালের মধ্যে বাড়িটি শেষ করতে হবে অথবা পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে ফের পুরসভার কাছ থেকে নকশার পুনর্নবীকরণ করতে হবে। তিনি বলেন, “দুই বছর আগে বাড়িটির কাজ শুরু হয়েছে। আমি তার পর থেকে ভাড়াটেদের বারবার বলেছি ওই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে। সেই ভাড়াও আমি দেব বলে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা ওই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে দেখা যায় ভাঙাচোরা দোতলা বাড়িটির চারপাশের দেওয়ালে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় গাছ। ছাদের অবস্থা ভয়াবহ। বাড়িটির নীচে তখনও পড়ে রয়েছে ভেঙে পড়া ছাদের কংক্রিটের স্তুপ। যে জায়গায় ওই মহিলার মাথার উপরে চাঙড় ভেঙ্গে পড়েছে, সেখানেও পড়ে রয়েছে ভাঙা কংক্রিট ও ইটের টুকরো। বাড়ির সামনে এলাকার বাসিন্দাদের জটলা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক মাস আগে ওই বাড়িটির ছাদের একটা অংশ ভেঙে পড়েছিল। তার পরেও ভাড়াটেরা ঘর ছেড়ে যায়নি। তাতেই অবাক হচ্ছেন সকলেই
হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, “ঘটনার পরেই ইঞ্জিনিয়ারেরা গিয়েছিলেন। বাড়িটি ভেঙে ফেলারই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আসলে ভাড়াটে আছেন। তাঁদের কোনও ব্যবস্থা না করে কিছু করা যাবে না। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।’’