৭৫ বছর পরে মিলল বোনের পরিবারের খোঁজ

কটি-দু’টি নয়, পঁচাত্তরটি বছর। বড় কম সময় নয়। সে দিনের সাত বছরের মেয়েটিকে অনেক খুঁজেছেন তাঁর দিদি। বাংলাদেশের আত্মীয়দের কাছে শুনেছিলেন বোনের বিয়ে হয়েছে ত্রিপুরার বিলোনিয়ায়। ব্যস, এটুকুই। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

পুনর্মিলন: ভিডিয়ো কলে কথা দুই পরিবারের। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

একটি-দু’টি নয়, পঁচাত্তরটি বছর। বড় কম সময় নয়। সে দিনের সাত বছরের মেয়েটিকে অনেক খুঁজেছেন তাঁর দিদি। বাংলাদেশের আত্মীয়দের কাছে শুনেছিলেন বোনের বিয়ে হয়েছে ত্রিপুরার বিলোনিয়ায়। ব্যস, এটুকুই।

Advertisement

সেই সূত্র ধরে বোনের খোঁজ চালিয়ে গিয়েছে দিদি যশোদা নাথের পরিবার। ছেলে-মেয়ে-নাতিদের বলেছিলেন, ‘‘তোরা এক বার শুধু বোনের খোঁজ এনে দে।’’ সেই সন্ধানেই পেরিয়ে গিয়েছে ৭৫টি বছর।

ও দিকের গল্পটাও কতকটা এমনই। বোন রেণুকা দেবনাথ জানতেন তাঁর দিদি থাকেন কলকাতায়। কিন্তু খুঁজবেন কী করে? কলকাতার পরিচিতদের বলে বিশেষ লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হ্যাম রেডিয়োর হাত ধরে ৭৫ বছর পরে ভিডিয়ো কলে কথা হল দুই পরিবারের। কিন্তু ছ’বছর আগেই মৃত্যু হয়েছে রেণুকাদেবীর। সাফল্যের মুহূর্তেও তাই ৯০ পেরোনো কাঁচরাপাড়ার যশোদাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘বোনের সঙ্গেই কথা হল না যে!’’ তবে রেণুকাদেবীর ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে বেজায় খুশি তিনি।

Advertisement

যশোদাদেবীরা ছিলেন ওপার বাংলার নোয়াখালির বাসিন্দা। ছোটবেলায় মাকে হারান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় চট্টগ্রামের সুকুমার নাথের সঙ্গে। সুকুমারবাবু সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। বিয়ের পরপরই সুকুমারবাবুর বদলি হয় পানাগড়ে। যশোদাদেবীরা চলে আসেন এ পারে। এর দু’বছর পরে শেষ বার নোয়াখালিতে বাপের বাড়ি যান। তখনই বোনের সঙ্গে শেষ দেখা। পারিবারিক কাজের চাপে বোনের বিয়েতেও যেতে পারেননি তিনি। তবে ত্রিপুরার বিলোনিয়ায় বোনের বিয়ে হয় বলে শুনেছিলেন। বোনের বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে যশোদাদেবীর বাবা রামচন্দ্র নাথের মৃত্যু হয়। এর পরে সে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয় দুই বোনেরই।

কাঁচরাপাড়ার কাঁপা চেকপোস্ট এলাকায় বাড়ি করে চলে আসেন যশোদাদেবীরা। তাঁর এখন ভরা সংসার। যশোদাদেবীর ছেলে সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘মা দীর্ঘদিন ধরেই মাসির খোঁজ করতে বলেছিলেন। আমরা পরিচিতদের দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঠিকানাই ছিল না।’’ তা হলে এখন খুঁজে পাওয়া গেল কী করে? সুব্রতবাবু জানান, কয়েক দিন আগে হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। অম্বরীশবাবুর কাছে বিলোনিয়া, রেণুকাদেবীর স্বামী নিতাই দেবনাথের নাম ছাড়া আর কিছু ছিল না। তিনি ত্রিপুরা হ্যাম ক্লাবের সম্পাদক বিশ্বজিৎ সাহাকে পুরো ঘটনাটি জানান। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলোনিয়ায় বেশ কয়েক জন রেণুকা দেবনাথের খোঁজ মেলে। সুব্রতবাবু জানান, রেণুকাদেবীর শ্বশুর সরকারি আমিন ছিলেন। এই সূত্র ধরে রেণুকাদেবীর বিশ্বসুখ গ্রামের বাড়ি খুঁজে পান বিশ্বজিৎবাবুরা। কিন্তু আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিবারের বেশ কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সব উত্তরই মিলে যায়। রেণুকাদেবীর ছেলে অমলবাবু জানান, তাঁর মা-ও প্রায়ই মাসির কথা বলতেন।

অবশেষে শুক্রবার সকালে ভিডিয়ো কলে কথা হয় দুই পরিবারে। বোন আর নেই শুনে কেঁদে ফেলেন যশোদাদেবী। কান্না তখন ফোনের ওপারেও। দুই পরিবারের সকলেই পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হন। ফোন শেষে যশোদাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘দেখা সেই হলই, শুধু বোনটাই আর রইল না। তবে যা পেলাম, তাই বা কম কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন