পায়ের উপর দিয়ে গেল বাস

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মহিলার পায়ের অবস্থা ভাল নয়। অস্ত্রোপচারে ডান পা বাদ যেতে পারে। ঘটনার পরেই ৪৪এ রুটের একটি বাসের চালক ধনঞ্জয়কুমার দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০৭
Share:

হাসপাতালে মাকসুনা বিবি। —নিজস্ব চিত্র

রাজাবাজারের আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে মঙ্গলবার শহরে এসেছিলেন বাদুড়িয়ার রাজাপুরের বাসিন্দা মাকসুনা বিবি। তবে ওই হাসপাতালে যাওয়ার আগেই গুরুতর জখম অবস্থায় পাশে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হল ৫৯ বছরের ওই প্রৌঢ়াকে। অভিযোগ, ৪৪এ রুটের দু’টি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে মাকসুনাকে ধাক্কা মারে। পড়ে গেলে একটি বাসের চাকা তাঁর ডান পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়। পুলিশই মাকসুনাকে উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করে।

Advertisement

সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মহিলার পায়ের অবস্থা ভাল নয়। অস্ত্রোপচারে ডান পা বাদ যেতে পারে। ঘটনার পরেই ৪৪এ রুটের একটি বাসের চালক ধনঞ্জয়কুমার দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ দিন হাসপাতালে শুয়ে মাকসুনা জানান, শিয়ালদহের জগৎ সিনেমা হলের কাছে রাস্তা পেরোনোর জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তখনই একটি বাস তাঁকে ধাক্কা মারে। মাকসুনার কথায়, ‘‘রাস্তা পার হব বলে ফুটপাত থেকে নেমে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ বাস ধাক্কা মারল। তার পরে কিছু মনে নেই।’’ পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে তারা জেনেছে, ৪৪এ রুটের দু’টি বাস রেষারেষি করছিল। জগৎ সিনেমা হলের কাছে সিগন্যাল ভেঙে একটি বাস মাকসুনাকে ধাক্কা মারে। উপস্থিত পুলিশকর্মীই ওই বাসের চালককে ধরে ফেলেন। বাসটি হেফাজতে নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

গত সপ্তাহে ৪৫ নম্বর রুটের দু’টি বাসের রেষারেষিতে পড়ে বাঘা যতীনের বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র বসু নামে এক প্রাক্তন অধ্যাপকের বাঁ হাত থেঁতলে যায়। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাতটি বাদ দিতে হয় তাঁর। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ওই দিনই বাস থেকে নামতে গিয়ে গোলপার্কের কাছে মৃত্যু হয় সুস্মিতা ঘোষ নামে এক তরুণীর। অভিযোগ, যাত্রী নামতে না নামতেই বেপরোয়া চালক বাস চালিয়ে দেন। গত সপ্তাহে সল্টলেকে চলন্ত বাস থেকে পড়ে জখম হন এক ছাত্রী। তাঁর সহপাঠীদের অভিযোগ, কন্ডাক্টর তরুণীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। মঙ্গলবারও চালকদের বেপরোয়া ভাব দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক এমন ঘটনা ঘটলেও চালকদের বেপরোয়া ভাব কমানো যাচ্ছে না কেন? কলকাতা পুলিশের প্রচার-অভিযানই বা কেন কার্যকর হচ্ছে না? শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘সে ভাবে তো শাস্তিই হয় না। গ্রেফতারির পরে কয়েক দফা জেলে থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েই ফের স্টিয়ারিংয়ে গিয়ে বসেন চালক।’’ অরূপবাবুর মত, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটিয়ে গ্রেফতার হলেই চালকের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা উচিত। যত দিন বিচার চলবে, তত দিন লাইসেন্স সাসপেন্ড থাকুক। সেই সময়ের মধ্যে যিনি আক্রান্ত হলেন, তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিন ওই বেপরোয়া চালক।’’

মাকসুনার ছেলে মহম্মদ সফিউল্লা যদিও বলছেন, তাতেও কি বেপরোয়া বাস চালানো আটকানো যাবে? নিশ্চিত উত্তর নেই কারও কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন