ছবি: সংগৃহীত
মিতালি রাজ-হরমনপ্রীত কৌর-ঝুলন গোস্বামীদের ব্যাটিং বা বোলিং সে ভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তাঁদের মতোই মাঠ শাসন করতে চান রিনা-আজরা-মাম্পিরা। তবে সে সবই সংশোধনাগার চত্বরের মধ্যে। কারণ, তাঁদের কেউ খুনের অভিযোগে, কেউ অনুপ্রবেশ অথবা দেশদ্রোহিতার অভিযোগে সংশোধনাগারে বন্দি।
রাজ্যের কয়েকটি সংশোধনাগারে পুরুষদের ক্রিকেট বা ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এ বার দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আয়োজিত হয়েছে বন্দিনীদের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, যার পোশাকি নাম ‘আল্পনা কাপ’। রবিবার সেই প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত এবং অন্য পদস্থ আধিকারিকেরা। কেন এই উদ্যোগ? এক কারা কর্তা বলছেন, ‘‘মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। আমরা যখন দমদমে গিয়েছি, সেই সময় ক্রিকেটে তাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য বারবার বলত মহিলা বন্দিরা। সেই আগ্রহকে বাস্তবায়িত করতেই এই পদক্ষেপ।’’
আগে সংশোধনাগারে ইন্ডোর গেমসের সুযোগ পেলেও ২২ গজে নামার সুযোগ পাননি মহিলা বন্দিরা। তার জন্য কয়েক মাস ধরে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে দরবারও করেছেন। এমনকি, বর্ষার পরে খেলার মাঠ সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন তাঁরা। অবশেষে দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন তাঁদের হাতে আসে ক্রিকেটের সরঞ্জাম। এর পরে অনুশীলন শুরু করতে আর দেরি করেননি আজরা-মাম্পিরা।
অনুপ্রবেশের অভিযোগে ছ’বছর সংশোধনাগারে দিন কাটছে পাকিস্তানি আজরার। মাঠে নেমে এখন ব্যাট হাতে বল বাউন্ডারি পার করতেই ব্যস্ত তিনি। অবশ্য তাঁর এই কাজ সহজ করে দিচ্ছেন না প্রতিপক্ষ মাম্পি। বল হাতে দমদম সংশোধনাগারের মাঠ দাপাচ্ছেন এই বন্দিনীও। কর্তৃপক্ষ থেকে সহবন্দি— মাঠে সকলকে চমকে দিয়েছেন ইশরাত-ঠাকুরমণিরা। প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হতে রিনার তত্ত্বাবধানে গত কয়েক মাস ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন তাঁরা। সঙ্গে রয়েছেন কয়েক জন
বাংলাদেশি বন্দিনীও।
কয়েক দিন আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে সংশোধনাগারে মারা যান আল্পনা মণ্ডল নামে এক সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। সংশোধনাগার পরিচ্ছন্ন রাখতে ওই বন্দিনী বিশেষ উদ্যোগ নিতেন বলে খবর। তাঁর নামেই কর্তৃপক্ষ এই প্রতিযোগিতার নামকরণ করেছেন ‘আল্পনা কাপ’। চারটি টিম নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে ফেব্রুয়ারিতে। গ্রুপ লিগের ম্যাচ শেষে দু’টি টিম নিয়ে হবে ফাইনাল ম্যাচ। কিন্তু মাত্র চারটি টিমের মধ্যে এই লড়াই শেষ হতে এক মাস লাগবে কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারা দফতর সূত্রে খবর, ক্রিকেট চলাকালীন সংশোধনাগারে বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হওয়ার কথা। সে কারণে কয়েক দিন অন্তর অন্তর বন্দিনীদের ম্যাচ হবে।