এ বার উল্টোডাঙায়

দুই বাসের টক্করে মৃত্যু মহিলার

বাসে বাসে রেষারেষির মাসুল আগেও গুনেছে শহর। প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে জনতা। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তার পরে ফের যে কে সে-ই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৫:৪৮
Share:

লিপিকা পোদ্দার

বাসে বাসে রেষারেষির মাসুল আগেও গুনেছে শহর। প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে জনতা। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। তার পরে ফের যে কে সে-ই। বুধবার সকালে দুই বাসে রেষারেষির জেরে উল্টোডাঙায় আর এক মহিলার মৃত্যু ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

Advertisement

এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। অফিসের ব্যস্ত সময়ে প্রায় আধ ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ে উল্টোডাঙা মেন রোড। এই ঘটনার জেরে ফের প্রশ্নের মুখে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা। ঘাতক বাসটির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাগুইআটির জ্যাংড়ায় নিজের বাড়ি ফিরছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের লিপিকা পোদ্দার। সকাল ন’টা নাগাদ সে জন্য উল্টোডাঙা মেন রোড স্টপ থেকে বাসে উঠতে যান তিনি। ঠিক সেই সময়েই পিছনে থাকা সল্টলেকগামী একটি বাস বাঁ দিক থেকে ওভারটেক করতে গেলে দাঁড়ানো বাসটিও আচমকা চলতে শুরু করে। তাতে ভারসাম্য হারিয়ে ছিটকে পড়েন লিপিকাদেবী। সঙ্গে সঙ্গেই পিছনের বাসটির চাকা পিষে দেয় তাঁকে। আর জি কর হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

উল্টোডাঙা মেন রোডের ওই স্টপ থেকে বাগুইআটিগামী বাসে রোজই অসংখ্য যাত্রী ওঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিধাননগর এবং বাগুইআটিগামী সমস্ত বাস সার দিয়ে এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই ওই বাস দু’টি রেষারেষি শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, এই রাস্তায় বাসের রেষারেষি লেগেই থাকে। পুলিশকে বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না।

অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, যেখানে বাসগুলি দাঁড়ায়, তার কিছুটা দূরেই ট্রাফিক পুলিশ থাকে। এ দিনও ছিল। বাস বা গাড়ির রেষারেষি দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ আটকও করে। তবে প্রতিটি বাস স্টপে পুলিশ থাকা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাফিক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন অফিসারের কথায়, পুলিশের নজরদারি ছাড়াও দরকার বাস বা গাড়িচালকের সচেতনতা। সেই বিষয়ে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ কাজও করছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুই সন্তানের মা লিপিকাদেবী যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষক ছিলেন। এ দিনও বিধাননগরের করুণাময়ীর একটি বাড়িতে যোগব্যায়াম প্রশিক্ষণ দিয়ে জ্যাংড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। লিপিকাদেবীর স্বামী সজল পোদ্দার বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ের কাজ করেন। তিনি জানান, এক আত্মীয়ের পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে সস্ত্রীক হাবড়া যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। সেই কারণে সকাল ন’টার আগেই ফোন করে স্ত্রীকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেন তিনি। সজলবাবুর কথায়, ‘‘সকাল ন’টা নাগাদ লিপিকার সঙ্গে শেষ বারের মতো কথা হয়েছিল। দশ মিনিট পরে ফের ফোন করি। কিন্তু লিপিকার বদলে পুলিশ ফোন করে আমাকে সরাসরি আর জি কর হাসপাতালে যেতে বলে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি সব শেষ।’’

সজলবাবুর দাদা সঞ্জয় পোদ্দার বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমিও জ্যাংড়া যাব বলে হাডকো মোড়ে বাসের অপেক্ষায় ছিলাম। তখনই স্ত্রী ফোন করে খবরটা দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন