প্রতিবাদী: মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবিতে মিছিলে মহিলারা। সোমবার, এস এন ব্যানার্জি রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
সংসার চালাতে বিড়ি বাঁধেন বজবজের মারিয়া বিবি। আর স্বামী রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে ঝাঁটাপেটা করেন তাঁকে। মদ্যপ স্বামীর হাতে লাঠি-ঝাঁটা খাওয়াটা দেগঙ্গার আসলামা বেগমের কাছেও প্রায় রোজকার ঘটনা। পাশে ছোট ছেলেমেয়ে থাকলেও বিশেষ রেয়াত করেন না স্বামী। তাই মদের কারণে সংসারও প্রায় ভেঙে যাওয়ার মুখে। এর প্রতিবাদে সোমবার ঝাঁটা হাতেই শহরের রাস্তায় নেমে পড়লেন মারিয়া-আসলামারা।
ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে রাজ্যে মদ বিক্রি নিষিদ্ধের দাবিতে এ দিন দুপুরে কলকাতার রামলীলা ময়দান থেকে মিছিল করেন কয়েক হাজার মানুষ। এর মধ্যে ঝাঁটা হাতে ছিলেন কয়েকশো মহিলা। নবান্ন পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ডোরিনা ক্রসিংয়ের কাছে পৌঁছনোর পরে মিছিলটি আটকে দেয় পুলিশ। এর পরে সেখানেই প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে ধর্নায় বসেন বিক্ষোভকারীরা।
ওই দলের সাধারণ সম্পাদক খারওয়ার হোসেন দাবি করেন, ‘‘অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে মদের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গেও মদ নিষিদ্ধ করতে হবে।’’ মিছিলে যোগ দিতে চাকদার হরিণখোলা গ্রাম
থেকে এসেছিলেন ফতিমা বিবি। তিনি গ্রামে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই সরকার নতুন করে যেন মদের লাইসেন্স আর না দেয়। আমাদের গ্রামে বিষ মদ খেয়েও মৃত্যু ঘটেছে। সরকারকে চোলাইয়ের ঘাঁটি ভাঙার জন্য আরও উদ্যোগী হতে হবে।’’
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের মতে, দিল্লি গণধর্ষণ, পার্ক স্ট্রিট অথবা কামদুনি ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিটিতেই দেখা গিয়েছে যে, অভিযুক্তেরা মত্ত অবস্থায় ছিল। নিউ টাউনের যাত্রাগাছি অথবা বজবজের মহিলারা জানাচ্ছেন, তাঁদের এলাকায় চোলাই মদের পাউচ দোকানে দেদার বিক্রি হচ্ছে। অর্ডার দিলে বাড়িতে এসেও দিয়ে যায়। বিষ মদে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সরকারের টনক নড়ে বটে, কিন্তু এ নিয়ে সচেতনতা অন্য সময়েও থাকা দরকার বলে মনে করছেন তাঁরা।
সপ্তাহের প্রথম দিনে এই মিছিল ও ধর্নার কারণে এস এন ব্যানার্জি রোডে বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে মধ্য কলকাতার কয়েকটি রাস্তায় যানজট যায়। পুলিশের অবশ্য দাবি, সাড়ে ৩টের মধ্যেই যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।