দরজায় আটকে তরুণী, ছুটতে শুরু করল মেট্রো

মেট্রোর কামরায় তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। সবাই যে যার মতো দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজে নেওয়ায় ব্যস্ত। সামান্য সময়ের পর ছেড়েও দিল ট্রেন। আর তখনই এক তরুণীর আর্তচিৎকারে চমকে উঠল গোটা কামরা। দেখা গেল, এক তরুণীর শরীরের বেশ কিছুটা রয়ে গিয়েছে দরজার বাইরে। সেই অবস্থাতেই ছুটতে শুরু করে মেট্রো। যদিও সুড়ঙ্গে ঢোকার আগেই চেন টেনে ট্রেন থামান কয়েক জন যাত্রী।

Advertisement

সুদীপ আচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৫৪
Share:

তখনও আটকে পা। — নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর কামরায় তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। সবাই যে যার মতো দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজে নেওয়ায় ব্যস্ত। সামান্য সময়ের পর ছেড়েও দিল ট্রেন। আর তখনই এক তরুণীর আর্তচিৎকারে চমকে উঠল গোটা কামরা। দেখা গেল, এক তরুণীর শরীরের বেশ কিছুটা রয়ে গিয়েছে দরজার বাইরে। সেই অবস্থাতেই ছুটতে শুরু করে মেট্রো। যদিও সুড়ঙ্গে ঢোকার আগেই চেন টেনে ট্রেন থামান কয়েক জন যাত্রী। তার পরে মোটরম্যান এসে দরজা খুলে ওই তরুণীকে ভিতরে নিয়ে আসেন। দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ দমদম থেকে কবি সুভাষগামী একটি মেট্রোতে এই ঘটনাটি ঘটে।

Advertisement

যাত্রীরা বলছেন, সাধারণ লোকাল ট্রেন ছাড়ার আগে প্রতিটি ট্রেনের চালকই হুইসেল বাজান। মেট্রোতেও হুইসেলের বদলে বেল রয়েছে। চালকেরা যদি ট্রেন ছাড়ার আগে নিয়ম করে বেলটি বাজান, তবে আর এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না। পাশাপাশি, মেট্রোতে মোটরম্যানের কেবিনে এখন সিসিটিভি স্ক্রিনও রয়েছে। ট্রেনের সবক’টি দরজাই তিনি দেখতে পান। এ দিন কেন ওই তরুণীর শরীরের অংশ দেখতে পেলেন না মোটরম্যান সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কী বলছে মেট্রো? যাত্রীরা দরজা বন্ধ হচ্ছে দেখেও ট্রেনে উঠে পড়তে চান। তাতেই ঘটে বিপত্তি। এর থেকে বড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে। মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেট্রোর পক্ষ থেকে বার বার বলা হলেও যাত্রীরা বিষয়টি বুঝতে চান না। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদের একটু আগে উঠতে হবে।’’

Advertisement

কোনও কোনও যাত্রী সহযাত্রীদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও যাত্রীদের একটি বড় অংশ বলছেন, দমদম বা কবি সুভাষের মতো প্রান্তিক স্টেশনে ওঠার সময় যে হুড়োহুড়ি হয়, তার দায় অনেকটাই মেট্রো কর্তৃপক্ষের। যাত্রীদের বক্তব্য, বিশেষ করে বাতানুকূল রেকগুলির ক্ষেত্রে ট্রেন প্ল্যাটর্ফমে দেওয়ার পরেও অনেক ক্ষণ (অনেক সময় ৪ থেকে ৭ মিনিট) দরজা বন্ধ করে রেখে দেওয়া হয়। যদিও মেট্রোর বক্তব্য, ওই সময় দরজা বন্ধ করে ঠান্ডা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

কিন্তু অত ক্ষণ বন্ধ থাকায় ট্রেনের প্রতিটি দরজার সামনেই যাত্রীদের বিরাট ভিড় জমে যায়। তার পরে আচমকা দরজা খুলে যেতেই কামরার ভিতরে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীরা। এতে বিশেষ করে মহিলা ও বৃদ্ধরা মাঝেমধ্যেই ধাক্কাধাক্কিতে চোট পান। কেউ কেউ কামরার মেঝেতে পড়েও যান। যাত্রীদের বক্তব্য, প্ল্যাটর্ফমে ট্রেন ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিক মেট্রো। তাতে ঝাঁপাঝাঁপিটা বন্ধ হবে।

এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেন ছাড়ার সময়েই উঠতে গিয়ে ট্রেনের প্রথম কামরায় এক তরুণীর দেহের কিছুটা অংশ দরজার বাইরে থেকে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় ট্রেন চলতে শুরু করায় ভয়ে ও যন্ত্রণায় তিনি পরিত্রাহি চেঁচাতে শুরু করেন। ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর মা ছিলেন। মেয়ের ওই অবস্থা দেখে তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। তখন কয়েক জন যাত্রী ওই তরুণীকে ভেতরে টেনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। তাতে দরজার বাইরে থাকা অংশের কিছুটা ভেতরে ঢুকলেও তাঁর দুটি আঙুল এবং পায়ের গোড়ালি বাইরেই থেকে যায়। কিন্তু সামনে সুড়ঙ্গ এসে যাচ্ছে দেখে তখন যাত্রীদের কয়েক জন চেন টানেন।

দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রেন। চালক এসে নিজে হাত দিয়ে দরজা ফাঁক করে আর একপ্রস্থ ওই তরুণীকে ভিতরে ঢোকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ না হওয়াতে তিনি মোটরক্যাবে ফিরে গিয়ে সব দরজা খুলে দেন। দরজা খুলে যেতেই ওই তরুণী ভয়ে লুটিয়ে পড়েন মায়ের কোলে। কিছু ক্ষণ পরেই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং সেন্ট্রাল স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেও যান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন