Bowbazar Building Cracked

ঘুরে দাঁড়ানোর ধনতেরসে ফের বিপর্যয়, হাহাকার বৌবাজারে

মদন দত্ত লেনে কাউকেই প্রায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে গিয়ে দোকানের জিনিস বার করে আনার অনুমতি চেয়ে কাকুতিমিনতি করছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৪৫
Share:

উদ্ধার: ফাটলের জেরে বন্ধ কারখানা। তাই বার করে আনা হচ্ছে গয়না রাখার সিন্দুক। শনিবার, বৌবাজারের মদন দত্ত লেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ধনতেরসের আর বাকি দিন সাতেক। ডেকরেটর ডেকে নতুন আলো আর রঙিন কাপড় দিয়ে দোকান সাজিয়ে ফেলার বরাত দিয়ে দিয়েছিলেন বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের একটিসোনার দোকানের মালিক। পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, ক্রেতা এলেই ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার। বিল তৈরিহলেই আলাদা করে উপহারেরও ব্যবস্থা করা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভাবনাই সার। শুক্রবার থেকে দোকানই আর খুলতে পারা যায়নি। ফাটল ধরা দোকানঘরের লোহার গেট আটকে গিয়েছে। মাথায় উঠেছে ব্যবসা। কী করে দোকানে থাকা গয়না বার করা হবে, এখন তা-ও জানা নেই। মালিক বললেন, ‘‘ভেবেই পাচ্ছি নাকী করব। গ্রিল কাটাতে হবে মনে হচ্ছে। কী করে কারিগরদের টাকা দেব, আর কী করেই বা বরাত নেওয়া গয়না বানিয়ে দেব, জানি না। পাঁচ পুরুষের ব্যবসা এ বার তুলে দিতে হবে।’’

Advertisement

সোনার ব্যবসা ঘিরে এখন এমনই হাহাকার বৌবাজারে। শুক্রবার ভোরে ওই এলাকার মদন দত্ত লেনের একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নতুন করে চিন্তায় পড়েন সোনার ব্যবসায়ীরা।শনিবার যা আরও বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, ওই এলাকার সোনার ব্যবসার অন্যতম জায়গা মদন দত্ত লেনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১৫-১৬টি কারখানা। সেখানেই মূলত গয়না তৈরির কাজ চলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের আরও আটটি গয়নার শোরুম এবং দোকান। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের এক-একটি দোকান এবং শোরুমের সঙ্গে অন্তত ১০০ জন করে কর্মীর রুটি-রুজি জড়িত। দোকান খুলে গয়না তৈরির কাজ করা তো দূর, কেউই রাতারাতি অন্যত্র ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান সরাতে পারছেন না। সেই সুযোগেই তৈরি হচ্ছে ঘর ভাড়া দেওয়ার নামে যেমন খুশি দর হাঁকার ব্যবসা।

এ দিন দেখা গেল, মদন দত্ত লেনে কাউকেই প্রায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিতরে গিয়ে দোকানের জিনিস বার করে আনার অনুমতি চেয়ে কাকুতিমিনতি করছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানেই রাস্তার ধারে পড়ে লুটোচ্ছে ধনতেরসে ছাড়ের বিজ্ঞাপন। উল্টে পড়ে রয়েছে কম মজুরিতে ভাল গয়না বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস লেখা বোর্ড। মদন দত্ত লেনের একটি বাড়ির সামনে উদ্‌ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকা সুখেন কর্মকার নামে এক ব্যক্তি নিজেকে সোনার কারিগর দাবি করে বললেন, ‘‘২০১৯ সালের পরে গত মে মাসেও এই রকম ফাটল ধরেছিল। করোনার ধাক্কা কোনও মতে সামলে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যেই আবার এই বিপদ। গত তিন বছরে যা ধার-দেনা হয়েছে, এ বার ধনতেরসের কাজ করে মিটিয়ে দিতে পারব ভেবেছিলাম। এ বারও কাজ না করতে পারলে পাওনাদারেরা বাঁচতে দেবে না।’’ একই রকম দাবি ওই এলাকার আর এক সোনার কারিগর নিমাই সাহার। বললেন, ‘‘এখন আর সারা বছর সোনার ব্যবসা হয় না। গয়না বানিয়ে দেওয়ার বদলে একটা মজুরি আমরা পাই। ধনতেরসে যে হেতু বেশি বরাত থাকে, তাই বেশি আয় হয়। তার উপরে আমরা অনেকেই বাড়তি কিছু গয়না বানিয়ে সরাসরি ক্রেতা ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু এ বার তো এর কোনওটাই হবে না।’’

Advertisement

বৌবাজারের ‘ভাঙা মহল্লা’য় সোনার দোকানে তালা ঝুলিয়ে ভিতরে বসে থাকা বৃদ্ধ রতন সাধুখাঁ আবার খানিকটা নিজের মনেই বললেন, ‘‘কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিই ধনত্রয়োদশী। একেই ধনতেরস বলা হয়। সনাতন বিশ্বাসে এই তিথিতে দেবী লক্ষ্মী, কুবের এবং ধন্বন্তরীর পুজোয় বিশেষ শুভ ফল প্রাপ্ত হয়। পণ্ডিতেরা বলেন, দেবী লক্ষ্মী এবং কুবেরের পুজোয় ধন লাভ হয় এবং ধন্বন্তরীর উপাসনায় পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থ জীবন লাভ হয়। সোনা, রুপো বা দামি ধাতু লক্ষ্মী এবং কুবেরের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এই তিথিতে সাধ্যমতো যে কোনও ধাতু কিনলে সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি বাড়ে, সুস্থ জীবন হয়। কিন্তু আমাদের সুস্থ জীবনে বার বার এমন ব্যাঘাত ঘটছে কেন?’’

‘স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটি’র সভাপতি বাবলু দে বললেন, ‘‘ধনতেরসের আগে এটা অপূরণীয় ক্ষতি। এর ক্ষতিপূরণ কোনও ভাবেই সম্ভব না। একটা অপরিকল্পিত প্রকল্প বহু মানুষের ভাত মেরে দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন