ফাইল ছবি
শিক্ষামন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী এবং ক্রীড়ামন্ত্রী তো আছেই। রয়েছে প্রধানমন্ত্রীও। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নয়, এ মন্ত্রিসভা তৈরি হয়েছিল স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে। নিজেদের স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় দেখভালের জন্য তৈরি ওই মন্ত্রিসভার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চাইল্ড ক্যাবিনেট’। কিন্তু সমস্ত স্কুলে আদৌ এই ধরনের মন্ত্রিসভা রয়েছে কি না, বা থাকলেও তার কার্যকারিতা কেমন, তা নিয়েই কর্মশালা শুরু করল কলকাতার সর্বশিক্ষা মিশন। এ মাস থেকে শুরু হয়ে তা চলবে অগস্ট পর্যন্ত।
বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু নির্মল বিদ্যালয় অভিযান প্রকল্প ঘোষণা করেন। ২০১২ সাল থেকে তা শুরু হয়। ওই অভিযানেই স্কুল চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পড়ুয়াদের যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকের মনোনীত বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘চাইল্ড ক্যাবিনেট’ বা শিশু মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা ও পরিবেশ মন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক মন্ত্রী ছিল ওই মন্ত্রিসভায়। প্রত্যেক মন্ত্রীর পিছু আবার ছ’জন করে সহায়ক থাকার কথা। স্কুলের কোথায় সমস্যা, তার কী ভাবে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ‘রিপোর্ট’ করার কথা ওই মন্ত্রিসভার। কিন্তু কলকাতা-সহ রাজ্যের বহু স্কুলেই এই মন্ত্রিসভার অস্তিত্ব নেই। কোথাও থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বলেই জানান দফতরের এক কর্তা। সেটা খতিয়ে দেখতেই এই কর্মশালা।
কলকাতা সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক (ডিপিও) সুশান্ত পাণ্ডা জানিয়েছেন, কলকাতার ২৩টি সার্কলের মোট ৮০০ জন শিক্ষককে ১৫টি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে কী ভাবে কাজ ভাগ করে দেওয়া হবে, সেটাই মূলত শেখানো হচ্ছে তাঁদের। যেমন, খাদ্যমন্ত্রী মিড-ডে মিলের মান ও তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না, সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে রিপোর্ট করতে পারে। সেই কাজে তাকে সাহায্য করবে তার ছ’জন সহকারী। একই ভাবে স্কুলে পঠনপাঠন ঠিক মতো হচ্ছে কি না অথবা শিক্ষকেরা ক্লাসে ঠিক সময়ে আসছেন কি না, সে বিষয়েও রিপোর্ট তৈরি করতে পারে শিক্ষামন্ত্রী। অথচ দেখা যাচ্ছে, শহরের বহু স্কুলে মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও তার কোনও কার্যকারিতা নেই।
মিশনের অন্য এক আধিকারিক জানান, স্কুলগুলি থেকে এক জন করে নোডাল অফিসার বেছে নেওয়া হয়েছে, যাঁরা শিক্ষ়কতার পাশাপাশি গোটা মন্ত্রিসভার দেখভাল করবেন। প্রতি মাসেই ওই মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে সেই শিক্ষককে।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই অপরিচ্ছন্নতার অভিযোগ তুলে হিন্দু স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন অভিভাবকেরা। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘কর্মশালায় এ বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে। বিশুদ্ধ পানীয় জল, পরিষ্কার শৌচালয় ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখাটা স্কুলের মৌলিক কর্তব্য। সেটা সকলকেই করতে হবে। সরকার তার জন্য যথেষ্ট সাহায্যও করছে।’’ তাঁর মতে, মন্ত্রিসভা তৈরি হলে স্কুলের সঙ্গে পড়ুয়াদের আত্মিক সম্পর্কও বাড়বে। শিক্ষক নেতা স্বপন মণ্ডলের মত, পরিচ্ছন্নতা শেখানোর কাজে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘স্কুলের পরিবেশ পঠনপাঠনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের পক্ষেও অনুকূল হওয়া প্রয়োজন। সেই কাজে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।’’