সমুদ্রে ডুবে মৃত্যু শহরের যুবকের

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত নীল মুখোপাধ্যায় (৩২) কলকাতার লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে সমুদ্রে নেমেছিলেন পাড়ারই বন্ধু সৌরভ শূর। তিনিও তলিয়ে গিয়েছিলেন। নুলিয়াদের চেষ্টায় তাঁর প্রাণ বাঁচানো গেলেও, উদ্ধার হয় নীলের মৃতদেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও কাঁথি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০২:১৯
Share:

নীল মুখোপাধ্যায়

পূর্ণিমার ভরা জোয়ার, উত্তাল সমুদ্র। নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে, জোর করে সমুদ্রে স্নান করতে নেমে ফের মৃত্যু কলকাতার এক পর্যটকের। এ বারের ঘটনাটি ঘটেছে তাজপুরে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত নীল মুখোপাধ্যায় (৩২) কলকাতার লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কের বাসিন্দা। তাঁর সঙ্গে সমুদ্রে নেমেছিলেন পাড়ারই বন্ধু সৌরভ শূর। তিনিও তলিয়ে গিয়েছিলেন। নুলিয়াদের চেষ্টায় তাঁর প্রাণ বাঁচানো গেলেও, উদ্ধার হয় নীলের মৃতদেহ।

Advertisement

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তাজপুরের দু’নম্বর ঘাটে স্নান করতে নেমেছিলেন নীল ও তাঁর বন্ধু সৌরভ। তখন ভরা জোয়ার শেষের মুখে। এই সময়ে সমুদ্রের টান খুব বেশি থাকে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞেরা। দিঘা বা শঙ্করপুরের তুলনায় তাজপুরের সমুদ্র অপেক্ষাকৃত শান্ত। আপাত শান্ত ছোট ছোট ঢেউ দেখে অনভিজ্ঞ পর্যটকেরা প্রায়শই বুঝতে পারেন না, স্রোতের চোরা টান কতটা মারাত্মক হতে পারে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, নীলের ক্ষেত্রেও সেই সমস্যাই হয়েছিল।

এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ দুঃসংবাদ পৌঁছয় নীলের বাড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে তাজপুরের উদ্দেশে রওনা হন নীলের বাবা মণিমোহন মুখোপাধ্যায় ও মা বহ্নি মুখোপাধ্যায়। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার মণিমোহনবাবু টেলিফোনে বলেন, ‘‘ও তো বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিল। মাঝেমাঝেই যেত। ভাবতেও পারিনি এমনটা হতে পারে।’’ তিনি জানালেন, দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী স্কুলের ছাত্র নীল এমবিএ শেষ করেছিলেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও শুরু করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসেই মোটরবাইকে মারাত্মক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন নীল। ছ’মাস শয্যাশায়ী ছিলেন, ফলে ছাড়তে হয়েছিল চাকরি। বর্তমানে নতুন চাকরির চেষ্টা করছিলেন তিনি।

Advertisement

যোধপুর পার্কে নীলদের আবাসনে পৌঁছতেই প্রতিবেশীদের উৎকণ্ঠা টের পাওয়া গেল। ছোট থেকে নীলকে দেখছেন চারতলায় নীলদের বাড়ির ঠিক নীচের তলার বাসিন্দা নয়নদীপ দত্ত। জানালেন, কিছু দিন আগে মহামায়াতলায় একটি ফ্ল্যাট কিনলেও, এই আবাসনেই থাকতে পছন্দ করত নীলের পরিবার। নীলের এক দিদি রয়েছেন, তিনি বিয়ের পর থেকে আমেরিকায় থাকেন। প্রতিবেশীরা জানান, একটু বড় হওয়ার পর থেকেই নীল পাড়ায় খুব একটা মিশতেন না। নিজের বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই থাকতেন। নয়নদীপবাবুর কথায়, ‘‘নীলের অন্নপ্রাশনের কথা এখনও মনে আছে। এত কম বয়সে এ ভাবে চলে যাবে, এটা ভাবা যায়নি।’’

এ দিন তাজপুর সৈকতের স্থানীয় সূত্রের খবর, নুলিয়ারা সাবধান করেছিলেন নীলদের। তবুও স্নানে নামে ওই বন্ধুর দল। প্রথমেই তলিয়ে যান নীল। তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান সৌরভ। স্থানীয়দের চিৎকারে নুলিয়ারা ছুটে আসেন। প্রবল ঢেউয়ে নুলিয়ারাও প্রথমে ওই দু’জনের কাছে পৌঁছতে পারেননি। তাঁরা খবর দেন মন্দারমণি উপকূল থানায়। ঘটনাস্থলে স্পিড বোট পাঠানো হয়। বোটে চড়ে মাঝ সমুদ্র থেকে নুলিয়ারা উদ্ধার করেন দু’জনকে। বালিসাই বড়রাংকুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে নীলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন সৌরভ।

পুলিশ জানায়, চার বন্ধু শুক্রবার বিকেলে তাজপুরে পৌঁছে সৈকতের ধারেই একটি হোটেলে উঠেছিলেন। নীল আর সৌরভ এ দিন স্নানে গেলেও অন্য দুই বন্ধু হোটেলেই ছিলেন তখন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন