গৌতম মণ্ডল
অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দেহের সৎকারের জন্য দুই রাজ্যে দু’ধরনের নথির প্রয়োজন হয়। সেই জটিলতায় পড়েই শুক্রবার রতনবাবুর ঘাটে দিনভর আটকে রইল এক যুবকের মৃতদেহ সৎকার।
গৌতম মণ্ডল (২৫) নামে ওই যুবক বরাহনগরে থাকতেন। বৃহস্পতিবার রাতে ঝাড়খণ্ডের বোকারোর চাষ অঞ্চল থেকে তাঁর দেহ কলকাতায় পৌঁছয়। এ দিন সকালে অন্ত্যেষ্টির জন্য তাঁর দেহ রতনবাবুর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে শুধুমাত্র একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার নম্বর থাকায় প্রথমে সৎকার করতে রাজি হননি শ্মশান কর্তৃপক্ষ।
গৌতমের পরিবার জানাচ্ছে, তিনি বিবাহিত। পেশায় গাড়িচালক গৌতম মাস তিনেক আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বরাহনগর থানায় তা নিয়ে নিখোঁজ ডায়েরিও হয়। পরে গৌতমই বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি আর বাড়ি ফিরবেন না। মাসখানেক আগে শোভাবাজারের বাসিন্দা এক তরুণীর পরিবারের লোকজন এসে তাঁদের জানান, ওই তরুণীর সঙ্গে গৌতমের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। গৌতম এবং তরুণী বোকারোয় রয়েছেন।
গৌতমের মা সীমাদেবী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণীই ফোন করে তাঁদের জানান, গৌতম বুধবার আত্মহত্যা করেছেন। ময়না-তদন্তের পরে তিনিই মৃতদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় নিয়ে আসেন ও পরিবারের হাতে তুলে দেন। সে সময়ে তিনি দু’টি কাগজ দিয়েছিলেন। একটি চাষ থানার দেওয়া দেহ আনার অনুমতিপত্র। অন্যটি পুলিশকে ওই তরুণীর দেওয়া লিখিত বক্তব্যের প্রতিলিপি। ওই দু’টি কাগজ নিয়েই গৌতমের মৃতদেহ সৎকার করতে শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ রতনবাবুর ঘাটে পৌঁছন তাঁর পরিজনেরা। কিন্তু স্রেফ ওই কাগজ দেখে সৎকার করা সম্ভব নয় জানান শ্মশান কর্তৃপক্ষ। এর পরেই শুরু হয় টানাপড়েন।
শ্মশানের কর্মীরা জানান, এ রাজ্যে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত ব্যক্তির দেহ সৎকারের জন্য ময়না-তদন্ত করা ডাক্তারের শংসাপত্র প্রয়োজন হয়। যা এ দিন ছিল না। চাষ থানার পুলিশ জানায়, সেখানকার নিয়ম মেনে তারা গৌতমের দেহ ময়না-তদন্তের পরে একটি নম্বর ওই তরুণীকে দেয়। কিন্তু কাগজে লেখা সেই নম্বরটি ঠিক কীসের, তা প্রথমে কেউ বুঝতে পারেননি। ফলে জটিলতা আরও বাড়ে। শেষে শ্মশান কর্তৃপক্ষ ফোনে চাষ থানার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বুঝে নিয়ে দেহের সৎকার করেন।
পাশাপাশি গৌতমের পরিবারের প্রশ্ন, তাঁর স্ত্রী বরাহনগরে থাকেন। দ্বিতীয় তরুণীর সঙ্গে গৌতমের বিয়ের রহস্য তাঁরা জানেন না। তা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে মৃতদেহ ছাড়ালেন? যেখানে এ রাজ্যে মৃতদেহ ময়না-তদন্তের পরে নেওয়ার সময়ে পরিবারের লোকজনকে জনপ্রতিনিধির থেকে শংসাপত্র নিতে হয়।
চাষ থানার ইনস্পেক্টর প্রমোদ পাণ্ডে বলেন, ‘‘ওঁরা দু’মাস ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ছিলেন। তাই তরুণীকে দেহ দেওয়া হয়েছে। এখানে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার নম্বরও দিয়েছি। আইনানুসারেই সব কিছু হয়েছে।’’