অনভিজ্ঞ হাতে হাতুড়ির ঘা, ছাদ ভেঙে মৃত যুবক

সম্প্রতি অনিল মোহতা অরূপ এবং সঞ্জয়কে দিয়ে বাড়ির সামনের একটি পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ করাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই কাজ করার সময়েই সোমবার দুপুরে ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। আর তাতেই চাপা পড়ে যান অরূপ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৭
Share:

হুড়মুড়িয়ে: ভেঙে পড়েছে পুরনো সেই বাড়ি। সোমবার, বেহালায়। নিজস্ব চিত্র

পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ করতে গিয়ে সেই বাড়িরই ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা পুরসভার ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২/১ রামস্বরূপ পোদ্দার লেনের একটি বাড়িতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অরূপ মাহাতো (২২)। বাড়ি পুরুলিয়ার ঝালদা এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলর অমিত সিংহের অভিযোগ, কাউকে না জানিয়ে বাড়ির মালিক ভিতরে কাজ করাচ্ছিলেন। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের থেকে বিষয়টি জানানো হয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমোদন না নিয়ে ওই কাজ করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিল্ডিং দফতর তা দেখছে। আর পুলিশ এ ব্যাপারে আইনত যা করার করবে।’’

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বেহালা থানা এলাকার বি এল শাহ রোড সংলগ্ন ২/১ রামস্বরূপ পোদ্দার লেনের অনিল মোহতার বাড়িতে পরিচারকের কাজ করতেন অরূপ এবং সঞ্জয় মাহাতো নামে দুই যুবক। দু’জনই পুরুলিয়ার বাসিন্দা। সম্প্রতি অনিল মোহতা অরূপ এবং সঞ্জয়কে দিয়ে বাড়ির সামনের একটি পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ করাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই কাজ করার সময়েই সোমবার দুপুরে ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। আর তাতেই চাপা পড়ে যান অরূপ। সঙ্গে সঙ্গে সঞ্জয় ওই বাড়িরই নিরাপত্তারক্ষী এবং পড়শিদের ডেকে আনেন। ভেঙে পড়া সিমেন্টের চাঁই সরিয়ে অরূপকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তত ক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। বেহালা থানা, দমকল এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা হাজির হন। ঘটনাস্থলে যান কাউন্সিলর অমিত সিংহ। পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, ওই বাড়িটি বিপজ্জনক ছিল না। তবে বাড়ির একটা অংশ বহু পুরনো হওয়ায় তা ভাঙার কাজ করানো হচ্ছিল। এ ব্যাপারে পুরসভার কাছে কোনও খবর ছিল না বলে ওই ইঞ্জিনিয়ারের দাবি।

এ দিকে, পুলিশ জানিয়েছে, পুরুলিয়ার বাসিন্দা অরূপ সাত-আট বছর ধরে এই বাড়িতে পরিচারক হিসাবে কাজ করতেন। গত কয়েক দিন ধরে বাড়ির মালিক অনিল মোহতা নিজেদের বাড়ির চত্বরে থাকা একটি পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করান। আর সেই কাজ কোনও শ্রমিককে না দিয়ে দুই পরিচারককে দিয়ে করাচ্ছিলেন। ফলে অনভিজ্ঞ অরূপ এবং সঞ্জয় বাড়ি ভাঙতে গেলে যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় তা না করে আনাড়ি হাতে বাড়িটি ভাঙছিলেন। আর তাতেই এই বিপত্তি ঘটে।

Advertisement

এ দিন বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা যায়, নিয়ম না মেনেই এই বাড়ি ভাঙার কাজ চলছিল। আগে বাড়ির ছাদ না ভেঙে দেওয়াল ভাঙা হয়েছে। আর তাতেই স্তম্ভগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে গিয়েছে।

যদিও অনিলবাবুর পুত্রবধূ মানতে নারাজ যে অরূপকে দিয়ে ওই পুরনো বাড়ি ভাঙার কাজ করানো হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘‘অরূপ ওখানে কী করতে গিয়েছিল তা আমরা জানি না। আমরাও দুর্ঘটনার পরে সব বিষয়টি জানতে পারি।’’ পুলিশ অরূপের পুরুলিয়ার বাড়িতে খবর পাঠিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অরূপের পরিবার এসে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে তাঁরা সেই মতো অভিযোগ নেবেন। তবে ইতিমধ্যেই পুলিশ নিজের মতো অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন