আমহার্স্ট স্ট্রিট

বেআইনি বাড়ি নিয়ে প্রতিবাদ, ‘হেনস্থা’

শহরকে বিপজ্জনক বাড়ি মুক্ত করার কথা বলেছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর এ দিকে অভিযোগ, একটি বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রোমোটার ও পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে শহরেরই এক নাগরিককে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

শহরকে বিপজ্জনক বাড়ি মুক্ত করার কথা বলেছেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর এ দিকে অভিযোগ, একটি বেআইনি বাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রোমোটার ও পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হচ্ছে শহরেরই এক নাগরিককে। এ নিয়ে খোদ পুলিশ কমিশনারের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের পাটোয়ার বাগান লেনের বাসিন্দা মহম্মদ রিজওয়ান নামে ওই যুবক। তাতেও সুরাহা হয়নি বলে তাঁর দাবি। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, হেনস্থার কোনও অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি। তিনি পুরসভাতেও অভিযোগ করেছেন বলে দাবি ওই যুবকের।

Advertisement

পুরসভা ও পুলিশের অনেকেই বলছেন, এ ধরনের বেআইনি বাড়িতেই বিপদের বীজ লুকনো রয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলি পরিকল্পনা, নির্মাণ প্রযুক্তি, নিরাপত্তার বেড়াজালকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গজিয়ে ওঠে এবং তা ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। কলকাতায় সেই উদাহরণও বিরল নয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা কলকাতাতেই বহু জায়গায় একের পর এক বেআইনি বাড়ি গজিয়ে উঠেছে। দোতলায় উপরে আর কয়েক তলা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আরও রোজগারের নেশায় মেতেছেন অনেকেই। বিপজ্জনক বাড়ির থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক শহরের এই সব বেআইনি নির্মাণ।

Advertisement

কয়েকমাস আগেই তার প্রমাণ মিলেছে নারকেলডাঙায়। দোতলা বাড়িকে তিন তলা বানিয়ে ভাড়াটে বসিয়েছিলেন বাড়ির মালিক। কিন্তু ছাদের পাঁচিলের ভার সহ্য করতে না পেরে হুড়মুড়িয়ে তা ভেঙে পড়ে পাশের বড়ির ছাদে। আহত হয় প্রতিবন্ধী এক শিশু। পাশের বাড়ির ছাদ ফেটে যায়। পুরসভা এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে তিনতলার নির্মাণ বেআইনি। টনক নড়ে প্রশাসনের। একই ভাবে তিলজলাতেও ছাদের উপরে বেআইনি নির্মাণ হওয়ায় তা ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। ঘটনার পরে কিছু দিন শোরগোল হয়েছিল।
তার পরে ধামা চাপা পড়ে যায়। অভিযোগ, এ ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের একাংশ জড়িত থাকায় সে সব দেখেও বাধা দেন না অনেকে।

আমহার্স্ট স্ট্রিটের পাটোয়ার বাগান লেনের বাসিন্দা মহম্মদ রিজওয়ানের অভিযোগ, ওই এলাকায় একের পর এক বেআইনি বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাঁর বাড়ির প্রায় গায়ের উপরেও তৈরি হচ্ছে এমনই একটি বাড়ি। অভিযোগ, তা নিয়ে পুলিশকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। উল্টে কয়েকজন প্রোমোটার তাঁর উপরে চড়াও হয়ে মারধর করেন। পুলিশকে জানিয়েও হেনস্থা কমেনি বলে জানান তিনি।

তাঁর অভিযোগ, থানার ওসি প্রোমোটারদের পক্ষে। রিজওয়ান জানান, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন ওসি অমিতাভ ঘোষ। তিনি জানান, বেআইনি বাড়ির কাজ হওয়ার অভিযোগ পেয়েই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এ রকম কোনও কাজ চলছে না। তবে অভিযোগকারীকে কেউ হেনস্থা করছেন, এ রকম কোনও অভিযোগ থানায় আসেনি। এমনকী এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশের যোগ থাকার দাবিও নস্যাৎ করেছেন ওসি। পুলিশের দাবি, ওই সমস্ত ঘটনা নিজেদের মধ্যেরই গোলমাল।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বাড়িটি নিয়ে অভিযোগ পেয়ে এর আগে ওই এলাকায় এক বার নির্মাণ বন্ধ করিয়েছিলেন বিল্ডিং বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা। কিন্তু পুজোর ছুটিতে ফের সেখানে নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার ডিজি বিল্ডিং-২ দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এত দিন ধরে নির্মাণ কাজ হল কী করে তা বুঝতে পারছি না। খতিয়ে দেখে শীঘ্রই আমাদের অফিসারেরা পরিদর্শনে যাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন