প্রেমিকার সামনেই গুলিতে আত্মঘাতী

রবিবারের ছুটির বিকেল। ঘড়ির কাঁটা সা়ড়ে চারটে ছুঁই ছুঁই। মধ্যমগ্রামের বিবেকানন্দনগরে ঢোকার মুখেই একটি দোতলা বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন দুই যুবক-যুবতী। আচমকা কানফাটানো শব্দ। সকলে ছুটে গিয়ে দেখলেন, হতভম্ব যুবতীর পায়ের কাছে লুটিয়ে যুবকের রক্তাক্ত দেহ। পাশেই পিস্তল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

পল্লব পাল

রবিবারের ছুটির বিকেল। ঘড়ির কাঁটা সা়ড়ে চারটে ছুঁই ছুঁই। মধ্যমগ্রামের বিবেকানন্দনগরে ঢোকার মুখেই একটি দোতলা বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন দুই যুবক-যুবতী। আচমকা কানফাটানো শব্দ। সকলে ছুটে গিয়ে দেখলেন, হতভম্ব যুবতীর পায়ের কাছে লুটিয়ে যুবকের রক্তাক্ত দেহ। পাশেই পিস্তল।

Advertisement

পুলিশ জানায়, পিস্তল থেকে নিজেরই মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হন বাগুইআটির পালপাড়ার বাসিন্দা পল্লব পাল (৩৫) নামে ওই যুবক। প্রেমে ব্যর্থ হয়েই তিনি এ কাজ করেন বলে পুলিশের দাবি। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই যুবকের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে। তাতে লেখা, ‘‘তোমাকে হারিয়ে সবাইকে হারানোর জন্যই আমি এই পথ বেছে নিলাম।’’ পুলিশ জানায়, পিস্তলটি দেশি ছররা বন্দুক। গুলি চালানোর সময়ে তাতে ছ’টি গুলিই মজুত ছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বাগুইআটি এলাকার কোনও দুষ্কৃতীর সূত্রেই সেটি জোগাড় করেন পল্লব।

পুলিশ জানায়, পেশায় পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক পল্লবের সঙ্গে বছরখানেক আগে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরেই আলাপ হয় ওই যুবতীর। বেশ কয়েক মাস আগে ওই যুবক প্রেমের প্রস্তাব দিলে ওই যুবতী দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন। সমস্যার সূত্রপাত সেখানেই। এ দিনও পল্লব মধ্যমগ্রামে মেয়েটির বাড়ির নীচে পৌঁছন। পুলিশের দাবি, ওই যুবতী জানান, বারবার ফোন করে তাঁকে দেখা করতে বলছিলেন পল্লব। তিনি নামতেই পল্লব এ দিনই পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হওয়ায় বার কয়েক অনুরোধের পরেই সটান পকেট থেকে পিস্তল বার করে নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে দেন পল্লব। চেঁচিয়ে ওঠেন ওই যুবতী। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এসে দেখেন পড়ে আছেন পল্লব। মাথা থেকে রক্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে মাটি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, বাগুইআটির বাসিন্দা কৃষ্ণপদ পালের একমাত্র সন্তান পল্লবের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০১১ সালে। কৃষ্ণপদবাবু জানান, বধূ নির্যাতনের মামলায় জামিনে ছাড়া পান পল্লব। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান পল্লবের স্ত্রী। এই ঘটনার বেশ কয়েক মাস পরেই মধ্যমগ্রামের ওই যুবতীর সঙ্গে আলাপ পল্লবের। দুই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনেরই দু’জনের বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সম্প্রতি প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াতেই ছন্দপতন। যুবতীর সায় না থাকলেও পল্লব যোগাযোগ রাখতেন তাঁর সঙ্গে। পুলিশ জানিয়েছে, পল্লবের স্থায়ী আয় না থাকায় এবং তিনি বিবাহবিচ্ছিন্ন হওয়ায় সম্পর্কে সায় দেয়নি যুবতীর পরিবার। ওই যুবতীও পল্লবকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাঁর অন্যত্র বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

পুলিশ জেনেছে, বছরখানেক আগে পথ দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পান পল্লব। তার পর থেকেই মানসিক বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। তার উপর বিবাহবিচ্ছেদেও অবসাদে ভুগতেন। তাই ফের সম্পর্কের ভাঙন মানতে পারেননি পল্লব— এমনটাই মনে করছে পুলিশ।

কিন্তু এক সাধারণ প্রশিক্ষকের কাছে পিস্তল কী ভাবে এল?

পুলিশের অনুমান, বাগুইআটির মতো এলাকায়, যেখানে দুষ্কৃতীদের যথেষ্ট দৌরাত্ম্য, তেমনই কোনও সূত্রে পল্লবের হাতে আসে বন্দুক। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব মধ্যমগ্রামের বাসিন্দারা। স্থানীয় এক মহিলা বলেন, ‘‘রবিবার বাড়িতেই ছিলাম। হঠাত্ ভয়ঙ্কর একটা আওয়াজ পেয়ে ঘরের বাচ্চারা কেঁদে ওঠে। আমরা হুড়মুড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি এই কাণ্ড!’’ জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এলাকার মানুষ।

আর ওই যুবতী বলেন, ‘‘চোখের সামনে মাথায় বন্দুক ধরল, নিমেষের মধ্যে সব শেষ। ভাবতেও পারিনি আমার বাড়ির সামনে এমন ঘটনা ঘটে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন