বিদ্যাসাগর কলেজ

আবার গোলমালে অভিযুক্ত টিএমসিপি

একটি ঘটনার জের মিটতে না মিটতেই ফের মত্ত অবস্থায় গোলমাল পাকানো এবং মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। বুধবার দুপুরে বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের অনুষ্ঠানে একই ধরনের গোলমাল থামাতে গিয়ে ছাত্রের কামড়ে আহত হন এক পুলিশকর্মী। আর ওই রাতেই বিদ্যাসাগর কলেজের অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় দুই বাসিন্দাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল একদল টিএমসিপি সমর্থকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
Share:

একটি ঘটনার জের মিটতে না মিটতেই ফের মত্ত অবস্থায় গোলমাল পাকানো এবং মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। বুধবার দুপুরে বঙ্গবাসী মর্নিং কলেজের অনুষ্ঠানে একই ধরনের গোলমাল থামাতে গিয়ে ছাত্রের কামড়ে আহত হন এক পুলিশকর্মী। আর ওই রাতেই বিদ্যাসাগর কলেজের অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে স্থানীয় দুই বাসিন্দাকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল একদল টিএমসিপি সমর্থকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এই ঘটনায় বিদ্যাসাগর কলেজের দুই প্রাক্তন ছাত্র তথা টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগে তাঁর পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।

বঙ্গবাসী মর্নিংয়ের ঘটনায় দায় এড়িয়ে গেলেও বিদ্যাসাগর কলেজের ক্ষেত্রে অবশ্য তা করেনি টিএমসিপি। সংগঠনের নেতারা জানান, পাঁচ জনকে শো-কজ করা হয়েছে। দু’টি ঘটনারই কড়া সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

কী হয়েছিল বুধবার রাতে? স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিদ্যাসাগর কলেজের একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে সকাল থেকেই তারস্বরে মাইক বাজছিল। সে দিনই কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জেতে টিএমসিপি। জয়ের আনন্দে সবুজ আবির উড়িয়ে উল্লাসও হয়। অভিযোগ, রাতে কলেজের সামনের রাস্তায় মত্ত অবস্থায় চেঁচামেচি শুরু করেন আবির মাখা একদল ছেলেমেয়ে। এমনকী অনেকে বমিও করতে থাকেন। তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দা সুমিত জায়সবাল তাঁদের বাধা দেন। যদিও তাতে কেউই কর্ণপাত করেননি বলে ওই যুবক জানান।

সুমিতবাবুর অভিযোগ, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে একদল ছেলে বাঁশ-লাঠি-ইট নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন তাঁর এক বন্ধুও। মেডিক্যাল কলেজে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশে অভিযোগ জানান সুমিতবাবু।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “বিদ্যাসাগর কলেজে বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি ঘটনা ঘটে। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় একটি অভিযোগও হয়। তবে কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।” প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগ পেয়েও দু’জনকে গ্রেফতার করতে এত সময় লাগছে কেন? শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা বলেই কি পুলিশের এই গড়িমসি? আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার বক্তব্য, অভিযোগের তদন্ত চলছে। টিএমসিপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ অবশ্য বলেন, “আমাদের সংগঠন এই ধরনের কাজকে সমর্থন করে না। দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।”

সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ নবীনবরণ উত্‌সবে সাইকেডেলিক আলো জ্বালিয়ে চটুল নাচ-গানের আসর বসানোয় যথেষ্ট সমালোচনা হয়। তার পরেই বঙ্গবাসী মর্নিং ও বিদ্যাসাগর কলেজের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত টিএমসিপি। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর কী মত?

বৃহস্পতিবার কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ-এর একটি অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবাসী মর্নিংয়ের ঘটনা প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “যদি সত্যি এমন ঘটে থাকে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ওই কলেজ, সেখানকার ছাত্র সংসদ এবং অভিযুক্ত ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছি।” বিদ্যাসাগর কলেজের অনুষ্ঠান-শেষে যা হয়েছে, তা-ও মোটেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানান মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের কাছে তিনি দু’টি ঘটনারই রিপোর্ট চেয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। অশোকবাবু বলেন, “এখনও মন্ত্রীর নির্দেশ আমার কাছে পৌঁছয়নি। তা এলেই রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

বঙ্গবাসী মর্নিংয়ের অধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ বুধবারই জানিয়েছিলেন, গোলমালের ঘটনায় কলেজের কেউ জড়িত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “ছাত্র সংসদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওরা ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংসদের দাবি, বহিরাগতরাই গোলমাল পাকিয়েছে। আমি ছাত্র সংসদকে লিখিত ভাবে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement