ইন্টারভিউয়ে পাশের খবর জানার আগেই আত্মঘাতী যাদবপুরের ছাত্র

সেলুলয়েডের জয় লোবো-র পর এ বার বাস্তবের মণীশ রঞ্জন। ব্যর্থতার আশঙ্কা নিয়েই নিজের জীবন শেষ করে দিলেন দু’জনে। কিন্তু কেউই জানতে পারলেন না, আসলে সাফল্যের দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মণীশ রঞ্জনকে (২১) হস্টেলের ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। মণীশ আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই প্রাথমিক ভাবে পুুলিশের অনুমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১২
Share:

মণীশ রঞ্জন

সেলুলয়েডের জয় লোবো-র পর এ বার বাস্তবের মণীশ রঞ্জন। ব্যর্থতার আশঙ্কা নিয়েই নিজের জীবন শেষ করে দিলেন দু’জনে। কিন্তু কেউই জানতে পারলেন না, আসলে সাফল্যের দোরগোড়াতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মণীশ রঞ্জনকে (২১) হস্টেলের ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। মণীশ আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই প্রাথমিক ভাবে পুুলিশের অনুমান।

‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে জয় লোবো সময়ে প্রোজেক্ট-এর কাজ শেষ করতে না-পারা ও সে জন্য পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় একই ভাবে আত্মঘাতী হন। কিন্তু জয় জানতে পারেননি, তাঁর প্রোজেক্ট সহপাঠীর উদ্যোগে সময় মতোই শেষ হয়েছিল।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসিং শুরু হয়েছে সোমবার। মণীশের সহপাঠীরা জানাচ্ছেন, ক্যাম্পাসিংয়ের প্রথম দিনে ইন্টারভিউ দিলেও চাকরির সুযোগ পাননি মণীশ। সম্ভবত তার জেরেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন তিনি। কিন্তু জয়ের মতো তিনিও জানতে পারলেন না, একটি নামী সফ্টঅয়্যার সংস্থায় চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপটা তিনি আসলে পেরিয়েই গিয়েছিলেন।

নামী একটি সফ্টঅয়্যার সংস্থা মঙ্গলবার ক্যাম্পাসিংয়ে আসে। তাদের কাছে ইন্টারভিউ দেওয়ার পরেই হস্টেলে ফিরে যান মণীশ। ফল কী রকম হয়েছে, সেটা জানার অপেক্ষা করেননি।

দুপুর দেড়টা নাগাদ সহপাঠীরা মণীশের খোঁজ করতে থাকেন। কারণ তাঁরা ততক্ষণে খবর পেয়ে গিয়েছেন, ওই নামী সফ্টঅয়্যার সংস্থাটিতে চাকরি পাওয়ার প্রথম ধাপ মণীশ পেরিয়েছেন। খবরটা তাঁকে দিতেই হস্টেলে যান বন্ধুরা। কিন্তু বারবার ডাকাডাকি করেও মণীশের সাড়া পাওয়া যায়নি। এর পর বন্ধুরা দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখেন ভিতর থেকে বন্ধ। কয়েক বার ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খোলার পর দেখা যায়, সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছেন মণীশ। গলায় বিছানার চাদর জড়ানো। তড়িঘড়ি তাঁকে নামিয়ে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মণীশকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। মণীশের বাড়ি বোকারোয়। খবর পেয়ে তাঁর বাবা-মা কলকাতায় এসেছেন।

সহপাঠীদের বক্তব্য, সোমবার মণীশ সফল হননি। এ দিনও ইন্টারভিউ দিয়ে তিনি হয়তো নিজে খুশি হতে পারেননি। মণীশের হয়তো মনে হয়েছিল, এ বারও তিনি সফল হতে পারবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ওই সফ্টঅয়্যার সংস্থাটির ইন্টারভিউয়ে প্রথম ধাপ পেরিয়ে গিয়েছিলেন মণীশ। তা সত্ত্বেও কেন এমন অঘটন ঘটল, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান সমীরণ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “মণীশ লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল। বাস্কেটবল খেলত। ওর প্রাণবন্ত, মিশুকে স্বভাবের সঙ্গে আত্মহত্যা ব্যাপারটা ঠিক খাপ খায় না।” তবে পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।

এ দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায় মণীশের এই আকস্মিক ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ছাত্রছাত্রীরা রীতিমতো হতভম্ব। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক দল ছাত্রছাত্রীর বচসার জেরে এ দিন ক্যাম্পাসের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসিং ছিল। তার পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। যা বলার পুলিশই বলতে পারবে।”

ক্যাম্পাসিংয়ে ভাল ফল না হওয়ায় আত্মহত্যার মতো চরম পথ কেন বেছে নেন কেউ? মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের বক্তব্য, মনে হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা নড়ে গিয়েছিল ওই ছাত্রের। সেই কারণেই উনি হয়তো আত্মহত্যা করেছেন। সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রের কথায়, “এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা থেকে এই ধরনের অঘটন ঘটে। সেটা কাটিয়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আরও একটু সচেষ্ট হলে ভাল হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন