দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এক অফিসারের ঘরে ফোন বেজে উঠল। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টে গেল রাজ্য সরকারের সদর দফতর নবান্নের ছবিটা।
অন্যান্য দিনের মতো নিরাপত্তার বজ্র-আঁটুনি ছিলই। এক ফোনেই বৃহস্পতিবার শোরগোল পড়ে গেল নবান্নের অন্দরে। আধ ঘণ্টার মধ্যেই হাজির বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াড। লিফ্টে সটান চোদ্দো তলায়— মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। সঙ্গে স্নিফার ডগ।
ততক্ষণে নবান্নের সর্বত্র খবর ছড়িয়ে পড়েছে, ফোন করে কেউ জানিয়েছে, বোমা রাখা আছে। তাই এত তৎপরতা। অনেক সরকারি কর্মীই কৌতূহলবশত দফতরের বাইরে বেরিয়ে আসেন। শেষমেশ অবশ্য তন্নতন্ন করে খুঁজেও নবান্নে কোনও বোমার হদিস মেলেনি।
ভুয়ো ফোন করে নবান্নে বোমাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে বিকেলে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় লালবাজারে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বড়াল জানান, ধৃত বিশ্বজিৎ সাহা পূর্ব পুটিয়ারির বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, পেশায় কম্পিউটার মেকানিক বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এক বন্ধুর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে তাঁর নামে একটি মোবাইল সিম নিয়ে এই কাণ্ড ঘটান তিনি। সে কথা সত্যি কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ দিন চারটি স্নিফার ডগ নিয়ে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ এবং বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের দল দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে ঘণ্টা দুয়েক তল্লাশি চালায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসি (এসবি-নিরাপত্তা) দীপনারায়ণ গোস্বামীও। চোদ্দোতলা থেকে পুলিশ-কুকুর যায় নবান্নের ছাদে। তার পরে ১৩ তলায়, যেখানে বসেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি। পুলিশের আর একটি দল বোমা খোঁজার যন্ত্র হাতে নবান্নের একতলা থেকে সমস্ত দফতরে তল্লাশি শুরু করে। বহু কর্মীই ভয়ে তড়িঘড়ি দফতর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ তাঁদের আশ্বস্ত করে, ‘‘ভয় নেই। আমরা আমাদের কাজ করছি। আপনারা আপনাদের কাজ করুন।’’
বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের কারও গায়েই বোমা নিরোধক পোশাক ছিল না। রাজ্য প্রশাসনের একাংশই মনে করছিল, তবে কি রাজীব কুমার পুলিশ কমিশনার হওয়ায় নিরাপত্তার কোনও মহড়া চলছে! পরে অবশ্য লালবাজার জানায়, মহড়া নয়। উড়ো ফোনের জেরেই তল্লাশি হয়েছে। তবে কোনও বিস্ফোরক মেলেনি।