কথা হয়েছিল, যাত্রী-সুরক্ষার জন্য প্ল্যাটফর্মের ধারে লাগানো হবে বিশেষ ধরনের দেওয়াল, বসবে দিল্লি মেট্রোর মতো ব্যারিকেড। কিন্তু আদতে সে সবের কিছুই হয়নি। বছরখানেক আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে লাগানো হয়েছিল সিসিটিভি। তাতেও কমানো যায়নি মেট্রোর লাইনে ‘ঝাঁপ’-এর সংখ্যা। সোমবার আবার একই ট্রেনের সামনে দু’টি আলাদা স্টেশনে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে মারা গেলেন দু’জন।
মেট্রো-কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল বলে বছরে অন্তত ৪৯ শতাংশ মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে। সিসিটিভি বসানোর ফলে ঝাঁপ দেওয়ার আগে অনেককেই ধরে ফেলতে সক্ষম হচ্ছেন পুলিশ এবং মেট্রোকর্মীরা। তবে নজরদারির ফাঁক গলেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
সোমবার যেমন প্রথম ঘটনাটি ঘটে কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। দুপুর ২টো ৫৬ মিনিট নাগাদ কবি সুভাষগামী একটি বাতানুকূল মেট্রো যখন সবে স্টেশনে ঢুকছে, এক ব্যক্তি প্ল্যাটফর্মের শুরুতেই আচমকা লাইনে ‘ঝাঁপ’ দেন। চালক বিপদ বুঝতে পেরে চিৎকার করে উঠে ব্রেক কষেন। কিন্তু ততক্ষণে ওই ব্যক্তি চাকার তলায় ঢুকে গিয়েছেন। যাত্রীরাও একটি তীব্র শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে ঝাঁকুনি। ট্রেনটি আরও কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়।
দুর্ঘটনা ঘটেছে বুঝতে পেরে প্ল্যাটফর্মে চলে আসেন পুলিশ ও মেট্রোকর্মীরা। দেহটি এমন ভাবে মেট্রোর তলায় ঢুকে গিয়েছিল যে বার করা যাচ্ছিল না। ট্রেনটিকে প্রথমে কিছুটা পিছনে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে মেট্রোর তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেহটি বার করে আনেন মেট্রোকর্মীরা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুদীপ ঘোষাল (৪৫)। বাড়ি ঠাকুরপুকুর এলাকায়। এর পরে ট্রেনটি আবার বিকেল ৩টে ৪৪ মিনিট নাগাদ যাত্রা শুরু করে।
মেট্রোয় ঝাঁপের ঘটনা ঘটলে ট্রেনের চালক বদলে দেওয়া হয়। এ দিনও ওই চালককে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বদলি চালক ট্রেন নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পাঁচটি স্টেশন পেরোনোর পরে ফের এক ঘটনা। ওই ট্রেনেরই সামনে। এ বার এক মহিলা। মেট্রো সূত্রে খবর, ওই বাতানুকূল মেট্রোটি যখন কবি নজরুল স্টেশনে ঢুকছিল, তখন প্ল্যাটফর্ম থেকে এক মহিলা ট্রেনের সামনে ‘ঝাঁপ’ দেন। মহিলার দেহটিও এমন ভাবে ট্রেনের চাকায় জড়িয়ে কেটে গিয়েছিল যে শনাক্তই করা যাচ্ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে জানা যায়, মৃতার নাম সন্ধ্যা চন্দ্র (৩৫)। বাড়ি সোনারপুরের রাজপুর এলাকায়। এই ঘটনার পরেও যথারীতি বেশ কিছুক্ষণ মেট্রো চলাচল বিপর্যস্ত হয়।
মেট্রো সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত ২৬৫ জন মেট্রোয় ঝাঁপ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩০ জন পুরুষ এবং ১৩৫ জন মহিলা। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩৬ জনের। চালকের তৎপরতা ও সিসিটিভি দেখে নজরদারির জন্য মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে ১২৯ জনের।
মেট্রোর কর্তাদের বক্তব্য, যাত্রী সচেতনতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাড়াতে হবে নজরদারি। কিন্তু কী ভাবে? মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা রবি মহাপাত্র বলেন, “বিজ্ঞাপন ও স্টেশনে আরও বেশি করে ঘোষণার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী, প্ল্যাটফর্মে নাটিকা দেখানোর ব্যবস্থা হবে। টিভিতেও ছবি দেখানো হবে।” তবে বিভিন্ন ব্যবস্থার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও আদতে যে তা করা হয় না, সে কথা এ দিন বারবার জানিয়েছেন মেট্রোর যাত্রীরা।