কলকাতা বিমানবন্দর

এরোব্রিজ আছে, কিন্তু সবার জন্য নয়

ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সোমবার বিমানটি নেমেছিল রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায়। নামার কথা ছিল আরও কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু বৃষ্টির কারণেই দেরি হয়েছে নামতে। নামার প্রায় দশ মিনিট পরে দূরের একটি পার্কিং বে-তে গিয়ে থেমে যায় ইন্ডিগো-র বিমানটি। জানলা দিয়ে এক যাত্রী মৃণাল চট্টোপাধ্যায় দেখেন টার্মিনাল বিল্ডিং বহু দূরে। বিমানবন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তখন মুষলধারে বৃষ্টি।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০০:১৯
Share:

ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সোমবার বিমানটি নেমেছিল রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায়। নামার কথা ছিল আরও কিছুক্ষণ আগে। কিন্তু বৃষ্টির কারণেই দেরি হয়েছে নামতে।

Advertisement

নামার প্রায় দশ মিনিট পরে দূরের একটি পার্কিং বে-তে গিয়ে থেমে যায় ইন্ডিগো-র বিমানটি। জানলা দিয়ে এক যাত্রী মৃণাল চট্টোপাধ্যায় দেখেন টার্মিনাল বিল্ডিং বহু দূরে। বিমানবন্দরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তখন মুষলধারে বৃষ্টি।

বিমান থামলেও দরজা বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা। মৃণালবাবুর মতো অন্য যাত্রীদেরও বিরক্তি বাড়ছিল। বাইরে এত জোর বৃষ্টি যে সিঁড়িও লাগানো যাচ্ছিল না। এর মধ্যে ঘামতে শুরু করেন যাত্রীরা। বিমানসেবিকাদের জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেন, “কী ব্যাপার! এরোব্রিজে লাগালেন না কেন?” হাত উল্টে সেবিকারা জানান, কর্তৃপক্ষ অনুমতি না দিলে এরোব্রিজে বিমান লাগানো যায় না। প্রশ্ন ওঠে, “এরোব্রিজ ব্যবহার করলে কি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়? তাই আপনারা এড়িয়ে যান?” এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি সেবিকারা।

Advertisement

অগত্যা ঝমঝম বৃষ্টি মাথায় করেই শুরু হয় সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা। সিঁড়ির মাথায় ছাদ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু, বৃষ্টির সঙ্গে হাওয়ার দাপটে জলের ছাঁট ঢুকে যাত্রীদের জামাকাপড় ভিজে একশা। ওই অবস্থায় বাসে উঠে টার্মিনালে পৌঁছে দেখা যায়, কয়েকটি এরোব্রিজ ফাঁকাই রয়েছে! যাত্রীদের প্রশ্ন, তা হলে কেন ওই বৃষ্টির মধ্যে তাঁদের বাসে চাপিয়ে আনা হল টার্মিনালে? কেন ফাঁকা এরোব্রিজে লাগানো হল না বিমানটিকে?

টার্মিনাল বিল্ডিং-এর সঙ্গে লাগানো এই চলমান বারান্দাটি (এরোব্রিজ) বিমানের দরজায় লাগিয়ে দিলে বিমান থেকে সরাসরি সেখান দিয়ে টার্মিনালে আসতে পারেন যাত্রীরা। সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাসে চাপতে হয় না। কলকাতায় নতুন টার্মিনালে এখন ১৮টি এরোব্রিজ। বেঙ্গালুরু, মুম্বই, দিল্লি-র মতো অভ্যন্তরীণ উড়ানের জন্য ৮টি। আন্তর্জাতিক উড়ানের জন্য ৮টি। আর দু’দিকেই কাজ করতে পারে, এমন দু’টি। প্রশ্ন উঠেছে, এই শহরে অভ্যন্তরীণ উড়ানের সংখ্যা যখন বেশি, আন্তর্জাতিক উড়ান তুলনায় অনেক কম, তাহলে দু’দিকে একই সংখ্যক এরোব্রিজ কেন? এত পরিকল্পনা করে, ২৫০০ কোটি টাকা খরচ করে নতুন টার্মিনাল তৈরির সময়ে এই সমস্যার কথাই বা ভাবা হয়নি কেন?

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রটি আলাদা। সেখানকার এরোব্রিজ দিয়ে নামলে অভিবাসন, শুল্ক দফতরের সামনে পড়তে হবে। সেখান দিয়ে অভ্যন্তরীণ উড়ানের যাত্রীদের যাতায়াত করা নিষিদ্ধ।

আর এখানেই কলকাতা থেকে এগিয়ে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো বিমানবন্দর। তাদের নতুন টার্মিনাল এমন ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে, সমস্ত এরোব্রিজই আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়। ফলে, একই সময়ে একসঙ্গে সমস্ত এরোব্রিজ ব্যবহারের সুবিধা পায় বিমানসংস্থাগুলি। কলকাতায় সোমবার রাতে যখন বেঙ্গালুরু থেকে আসা যাত্রীরা এরোব্রিজ পাননি, তখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের আটটি এরোব্রিজের বেশির ভাগই ফাঁকা ছিল। কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার অভাবে তা ব্যবহার করতে পারেননি যাত্রীরা।

দ্বিতীয় প্রশ্নের অবশ্য কোনও সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। জানা গিয়েছে, কলকাতার নতুন টার্মিনাল চালুর পরে যখন এরোব্রিজের অভাব দেখা দেয় তখন ঠিক হয়, আরও ১২টি এরোব্রিজ লাগানো হবে। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উড়ানের জন্য ৮টি। সেই পরিকল্পনা গত বছরের মে মাসে চূড়ান্তও হয়। কিন্তু তার পরে বিমানবন্দরকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করে দেয় পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকার। তখনই বানচাল হয়ে যায় এই পরিকল্পনা।

বিমানবন্দর সূত্রে খবর, প্রধানত এয়ার ইন্ডিয়া, জেট, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেট এই চারটি সংস্থাই উড়ান চালায় কলকাতা থেকে। তাই, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রত্যেককে গড়ে ২টি করে এরোব্রিজ দেওয়া হয়। ইন্ডিগো সূত্রে খবর, কোন দু’টি এরোব্রিজ কখন কোন উড়ান পাবে, তা ঠিক করেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষই। বিশেষ কোনও পরিস্থিতিতে বিমানসংস্থার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলে নির্দিষ্ট উড়ানকে বদলে অন্য উড়ানকে এরোব্রিজে দেওয়া হয়। কিন্তু, তা খুব কমই ঘটে। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “কোন উড়ান কোন এরোব্রিজ ব্যবহার করবে, তা ২৪ ঘণ্টা আগেই ঠিক হয়ে যায়। তাই বৃষ্টির মতো পরিস্থিতির কথা আন্দাজ করা যায় না।”

তা হলে কি ভরা বর্ষায় বিমান থেকে নামা-ওঠার সময়ে ভেজাটাই কলকাতার বেশির ভাগ যাত্রীর ভবিতব্য?

বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা তা মানতে নারাজ। তাঁর ব্যাখ্যা, যাতে বেশির ভাগ উড়ান এরোব্রিজ ব্যবহার করতে পারে, সেই চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এরোব্রিজের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় সমস্যা থেকেই যায়। বিমানসংস্থাগুলিকে নিয়ে গঠিত এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত জানাচ্ছেন, এরোব্রিজ সংক্রান্ত এই সমস্যার কথা তাঁদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। সর্বেশ বলেন, “অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ৮টি এরোব্রিজ যথেষ্ট নয়। কিছু উড়ান আছে, যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের যাত্রীদের নিয়ে কলকাতায় আসার পরে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উড়ে যায়। এই ধরনের উড়ান জেট, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো-র রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দু’টি এরোব্রিজ এমন ভাবে রাখা হয়েছে যাতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ - দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়।” কিন্তু, তাতেও সমস্যা কমেনি।

বিমানসংস্থাগুলির মত, সমস্যা সমাধানে বাড়াতে হবে এরোব্রিজের সংখ্যা। মুম্বইতে নতুন টার্মিনালে সব মিলিয়ে ৯০টি এরোব্রিজ বানানো হচ্ছে। দিল্লিতে এই মূহূর্তে রয়েছে ৭৮টি এরোব্রিজ। তার তুলনায় কলকাতায় এই সংখ্যা সত্যিই কম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন