এলাকা কার, ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বেলেঘাটায়

নিউ টাউনের পর এ বার বেলেঘাটার রাসমণি বাজার। শনিবার সকালে নিউ টাউনে সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে মারামারির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাতে ২২ জন গ্রেফতার হয়। রাত পেরোনোর আগেই বেলেঘাটাতেও এলাকা দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমাবাজি ও হাঙ্গামার অভিযোগ উঠল। পুলিশ জানায়, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বেলেঘাটা রাসমণি বাজারে দু’দল লোকের মধ্যে বোমাবাজি ও মারামারি হয়।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:৩৯
Share:

নিউ টাউনের পর এ বার বেলেঘাটার রাসমণি বাজার।

Advertisement

শনিবার সকালে নিউ টাউনে সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে মারামারির অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাতে ২২ জন গ্রেফতার হয়। রাত পেরোনোর আগেই বেলেঘাটাতেও এলাকা দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমাবাজি ও হাঙ্গামার অভিযোগ উঠল।

পুলিশ জানায়, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বেলেঘাটা রাসমণি বাজারে দু’দল লোকের মধ্যে বোমাবাজি ও মারামারি হয়। হাঙ্গামাকারীদের মধ্যে অনেকেই তৃণমূলকর্মী। এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

রবিবার দুপুরে রাসমণি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা থমথমে। এক গাড়ি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সামনে তৃণমূলের একটি দলীয় অফিসে কয়েক জন বসে রয়েছেন। দু’একটি দোকানও খোলা। তবে শনিবার রাতের ঘটনা নিয়ে কেউই কথা বলতে চাইছেন না।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকার গাড়ির পার্কিং কার দখলে থাকবে, তা নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল বেধেছিল। একই রকমের গোলমাল বেধেছিল শুক্রবার দুপুরেও। পুলিশ জানায়, বেলেঘাটার চাউলপট্টি রোডে একটি গুদামে লরি থেকে মালপত্র নামানো নিয়ে গোলমাল বাধে ওই দিন। অভিযোগ, তৃণমূলের কোন গোষ্ঠী মাল খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করবে, তা নিয়েই প্রকাশ্যে মারামারি ও বোমাবাজি হয়েছিল। কয়েক জন আহতও হন। সেই ঘটনাতেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

পুলিশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বেলেঘাটা উত্তপ্ত হয়েছিল। প্রায় দিনই সিপিএমের দলীয় অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ মিলত। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তখন থাকলেও এতটা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু ফল বেরোনোর পর এলাকা বিরোধীশূন্য হয়ে যাওয়ায় শাসক দলের কর্মীরাই নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন বলে পুলিশের একাংশের অভিযোগ। কেন?

পুলিশের বক্তব্য, এলাকা দখল নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল। এই গোলমালে রাজু নস্কর ও শঙ্কর চক্রবর্তী নামে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতার নাম উঠে এসেছে বলে পুলিশের অভিযোগ। দলের অন্দরে রাজু নস্কর স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক দাস ও জীবন সাহা গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ এবং শঙ্কর চক্রবর্তী স্থানীয় বিধায়ক পরেশ পালের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, নির্মাণ ব্যবসায়ী রাজু নস্কর বাম আমলে অনেক সিপিএম নেতার সঙ্গেই ঘোরাফেরা করতেন। পালাবদলের পরে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। অলোকবাবু অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বলছেন, বেলেঘাটা এলাকায় অনেক নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে কার নিয়ন্ত্রণ থাকবে বা এলাকার গুদামে কে শ্রমিক সরবরাহ করবে, তা নির্ভর করে এলাকা দখলের উপরেই। সেই কারণেই নিত্য গোলমাল লেগে রয়েছে এই এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে বেলেঘাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা বলা হলেও তৃণমূল নেতারা এই অভিযোগ মানতে নারাজ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা জীবন সাহা বলেন, “দলে সবাই আমার ঘনিষ্ঠ। এই ঘটনার সঙ্গে গোষ্ঠীকোন্দলের সম্পর্ক নেই।” বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশবাবুর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।

এই ঘটনা নিয়ে উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি থেকে বলেন, “খবর শুনে খোঁজ নিয়েছি। একটা ঘটনা ঘটেছে। পরেশ পালদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি। তবে যেটুকু জেনেছি, দু’পক্ষ বসে মিটিয়ে নিয়েছে। আর এমন হবে না বলেও জানিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন