আটক হওয়া সিলিন্ডার। রবিবার, নেতাজিনগর থানায়। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার অটোয় বেআইনি ‘কাটা-গ্যাস’-এর রমরমার অভিযোগ ছিলই। এ বার হাতেনাতে তার প্রমাণ পেল পুলিশ। নেতাজিনগর থানায় একটি অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৮ জুলাই বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে ‘কাটা-গ্যাস’-এর বড়সড় এক চক্রের হদিস মিলেছে। সোনারপুর, কামালগাজি এবং নরেন্দ্রপুরে। শনিবার রাত থেকে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে ‘কাটা-গ্যাস’-এর এমন বেশ কিছু বেআইনি ঠেকের হদিস পেয়েছে পুলিশ। তল্লাশিতে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে আরও চার জন। এর মধ্যে কাটা-গ্যাস চক্রের পাণ্ডা অমিত মণ্ডলও রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ধৃত বাকি তিন জনের নাম বাপি সরকার, সহদেব নস্কর এবং রানা ঘোষাল।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎকে জেরা করে প্রথমে রাজপুর থেকে অমিত এবং বোড়াল থেকে বাপিকে ধরা হয়। তাদের দু’জনকে জেরা করে খোঁজ মেলে বাকি দু’জনের। সহদেব ও রানা নয়াবাদ উত্তরপাড়া গঙ্গাজোয়ারা নামে একটি জায়গায় দু’টি গুমটিতে কাটা-গ্যাসের কারবার চালাত। ওই গুমটি দু’টি থেকে ৯১টি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে। মিলেছে সিলিন্ডারের গ্যাস ওজন করার যন্ত্র, বিভিন্ন মাপের পাইপ, বেশ কিছু সিল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এলপিজি সরবরাহকারী বেশ কিছু সংস্থার ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল এই সব চোরাকারবারিদের। ডিলারদের থেকে সিলিন্ডার আনার পরে সহদেব ও রানার গুমটিতে তা থেকে গ্যাস একটি ওজন মাপার যন্ত্রের মাধ্যমে মেপে পাইপ দিয়ে ভরা হত অটোতে। ডিলারদের কাছ থেকে অবৈধ ভাবে সিলিন্ডার আনা, কাটা-গ্যাস সরবরাহের জন্য ক্রেতা অটোচালকদের জোগাড় করার কাজে সাহায্য করত অমিত, বাপি ও বিশ্বজিৎ। চক্রের সকলেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করত।
কোন কোন গ্যাস ডিলার এই ‘কাটা- গ্যাস’-এর কারবারে যুক্ত, বিশ্বজিৎদের জেরা করে তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এমনকী, কলকাতাতেও অন্য কোথায় কোথায় এই ব্যবসার রমরমা শুরু হয়েছে, তা-ও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, কিলোগ্রাম-প্রতি কাটা এলপিজি-র দাম নেওয়া হয় ৬০ টাকা পর্যন্ত। এখন অটোতে যে এলপিজি ব্যবহার হয়, বাজারে তার দাম কেজি পিছু ৪৯ টাকার মতো। তা হলে কেজি-পিছু ১১ টাকা বেশি দাম হওয়া সত্ত্বেও অটোচালকেরা ‘কাটা-গ্যাস’ ভরেন কেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের কোর কমিটির নেতা বিতান হালদার বলেন, “গ্যাস-বিমা এবং অন্য খরচ বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে পুলিশি অত্যাচার। প্রতি মাসে এক-এক জন চালকের কাছ থেকে প্রচুর জরিমানা আদায় করে পুলিশ। বাধ্য হয়েই খরচ সামলাতে চালকদের অনেকে কাটা-গ্যাস ব্যবহার করেন।” বিভিন্ন রুটের অটোচালকেরা জানাচ্ছেন, দাম বেশি হলেও বাজারে বিক্রি হওয়া গ্যাসের চেয়ে কাটা-গ্যাসে অটো অনেক বেশি চলে। সাধারণ এলপিজিতে যেখানে কেজি-পিছু গ্যাসে অটো চলে ১৮-২০ কিলোমিটার, সেখানে কাটা-গ্যাসে তা চলে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। তাই কাটা -গ্যাসই প্রথম পছন্দ অটোচালকদের।