ক্রিকেট-জুয়া, পাকড়াও ২

বিশাল ফ্ল্যাট, টিভিতে ক্রিকেট চলছে। দেখছেন দু’জন। সামনে পাঁচটি মোবাইলে অনর্গল ফোন আসছে। ফোনেই বলা হচ্ছে দর। সামনে খোলা ল্যাপটপেও চলছে দরের ওঠানামা। মঙ্গলবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালসের খেলা চলাকালীন বালিগঞ্জের এক অভিজাত বহুতলের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে এমন দৃশ্যই দেখেন লালবাজারের অফিসারেরা। পুলিশ জানায়, ক্রিকেট-জুয়া চালানোর অভিযোগে ওই ফ্ল্যাট থেকেই রাজেন্দ্রকুমার জাজোদিয়া ও পবনকুমার অগ্রবাল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

বিশাল ফ্ল্যাট, টিভিতে ক্রিকেট চলছে। দেখছেন দু’জন। সামনে পাঁচটি মোবাইলে অনর্গল ফোন আসছে। ফোনেই বলা হচ্ছে দর। সামনে খোলা ল্যাপটপেও চলছে দরের ওঠানামা।

Advertisement

মঙ্গলবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালসের খেলা চলাকালীন বালিগঞ্জের এক অভিজাত বহুতলের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে এমন দৃশ্যই দেখেন লালবাজারের অফিসারেরা। পুলিশ জানায়, ক্রিকেট-জুয়া চালানোর অভিযোগে ওই ফ্ল্যাট থেকেই রাজেন্দ্রকুমার জাজোদিয়া ও পবনকুমার অগ্রবাল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি ল্যাপটপ, একটি টিভি, একটি সিসিটিভি মনিটর, পাঁচটি মোবাইল, ৬টি অতিরিক্ত সিম কার্ড, দু’টি মেমরি চিপ, দু’টি ডিজিট্যাল ভয়েস রেকর্ডার ও দু’টি পেন ড্রাইভ। গত শনিবারও রাজস্থান বনাম বেঙ্গালুরুর খেলা চলাকালীন ক্রিকেট-জুয়ার অভিযোগে পোস্তা থেকে ন’জনকে ধরা হয়েছিল।

শহরে বেটিং-চক্রের কারবার নতুন নয়। প্রায় প্রতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সময়েই দু’-এক জন ক্রিকেট জুয়াড়ি ধরা পড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে তার রমরমা বেড়েছে। পোস্তা-বন্দর এলাকার বাইরে উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির নানা প্রান্তে এমন আসর বসার খবর মিলছে। হাওড়ার কিছু এলাকাতেও বেটিং-চক্রের রমরমার খবর পেয়েছে পুলিশ।

Advertisement

লালবাজারের এক সূত্রের বক্তব্য, এত দিন বড়বাজার-পোস্তা এলাকা বা বন্দর এলাকার ঘিঞ্জি গলিতেই বেটিং চক্রের হদিস মিলত। এ বার তা ছড়িয়ে পড়েছে অভিজাত পাড়াতেও। লালবাজারের এক কর্তা বললেন, “বালিগঞ্জের ওই ফ্ল্যাটের চেহারা দেখে চমকেই উঠেছিলেন অফিসারেরা।” আরও কিছু বহুতলে ক্রিকেট-জুয়ার আসর বসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, গত বছর আইপিএল চলাকালীন বেটিং-চক্রের সঙ্গে শহরের জুয়াড়িদের যোগসাজশের কথা জানা গিয়েছিল। তদন্তের সূত্রে এ রাজ্যে হানা দেয় দিল্লি পুলিশের বিশেষ দল। বেটিং-চক্রের চাঁই সন্দেহে অজিত সুরেখা নামে এক ব্যক্তি-সহ আট জনকে ধরা হয়। তার পর থেকেই এ শহরের বেটিং-চক্রের উপরে নজরদারি শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।

লালবাজার সূত্রে খবর, আইপিএল শুরু হতেই ফের বেটিং-চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এ খবর গোয়েন্দারা আগেই পেয়েছিলেন। তার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ‘সোর্স’দের কাজে লাগানো হয়েছে। তেমনই এক ‘সোর্স’ মারফত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বালিগঞ্জের ওই বহুতলের কথা জানা যায়। এর পরেই গুন্ডাদমন শাখার একটি দল ওই বাড়িতে হানা দেয়।

ধৃতদের প্রাথমিক ভাবে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তাঁরা নিজেরাই ওই চক্র চালাত। কিন্তু এই তথ্য পুরোপুরি বিশ্বাস করছে না পুলিশ। গোয়েন্দারা বলছেন, এর আগেও কলকাতা থেকে বারবার ক্রিকেট বুকির নাম উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক স্তরের বুকি ‘জুনিয়র কলকাতা’র সঙ্গেও এই শহরের জুয়াড়িদের যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার গ্রেফতার হওয়া জুয়াড়িদের সঙ্গে জয়পুর, মুম্বই ও হায়দরাবাদের জুয়াড়িদের যোগাযোগ আছে বলে জানা গিয়েছে। বালিগঞ্জ থেকে ধৃতদেরও এমন কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা নিয়েও খোঁজখবর শুরু করেছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন