চলছে উদ্ধারের কাজ। দুর্ঘটনার পর সোমবার কেষ্টপুর খালে। নিজস্ব চিত্র।
নানান ঘটনা-দুর্ঘটনা থেকে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন কতটা কী শিক্ষা নেয়, আদৌ নেয় কি না, আবার সেই প্রশ্ন উঠে গেল। এবং প্রশ্নটা তুলল কেষ্টপুর খাল।
সেই কেষ্টপুর বা বাগজোলা খাল, ২০০৮ সালের এপ্রিল এবং ২০১৪-র ডিসেম্বরের পরে সোমবার যেখানে আবার ঘটল দুর্ঘটনা। সন্ধ্যায় কেষ্টপুর মোড়ের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ওই খালে পড়ে যান। ডুবুরি নামিয়েও রাত পর্যন্ত তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ-প্রশাসন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পাঁকে আটকে যাওয়ায় তাঁকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। নিখোঁজের সন্ধানে আজ, মঙ্গলবার সকালে ফের ডুবুরি নামানো হবে।
অভিযোগ উঠেছে, সাত বছর আগে খালে বাস পড়ে বেশ কয়েক জনের প্রাণহানি এবং গত ডিসেম্বরে মোটরবাইক পড়ে এক জনের মৃত্যুর পরেও কোনও শিক্ষাই নেয়নি সেচ দফতর। তাই বাগজোলা খালের কার্যত কোনও সংস্কারই হয়নি। নতুন সরকার আসার পরে শহরের প্রায় সব খালে সংস্কারের কাজ হচ্ছে বলে সেচ দফতর দাবি করলেও সেই কাজ আদৌ হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
ঠিক কী ঘটেছে এ দিন?
পুলিশি সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি কেষ্টপুর মোড়ের কাছে বাগজোলা খালের ধারে কাগজ কুড়োচ্ছিলেন। হঠাৎই পা পিছলে খালে পড়ে যান তিনি। দেখতে পান ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মী। পুলিশ ছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, এবং কলকাতা বন্দরের ডুবুরিরা চলে আসেন। শুরু হয় তল্লাশি। কিন্তু খোঁজ মেলেনি ওই ব্যক্তির। বিধাননগর কমিশনারেটের এসিপি অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ট্রাফিক পুলিশকর্মী জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু হয়। কিন্তু ফল হয়নি।
কেষ্টপুর এলাকায় ভিআইপি রোড থেকে বাগজোলা খালকে দেখলে সেটি খাল না জঞ্জালের স্তূপ, বোঝা দায়। মরা গৃহপালিত পশু থেকে শুরু করে প্লাস্টিক, ছেঁড়া লেপ-কম্বল-কাঁথার পাহাড় খালের জলে। এ-হেন খালে নামলে কী অভিজ্ঞতা হতে পারে, রাতে হাড়ে হাড়ে সেটা টের পেয়েছেন ডুবুরিরা। খালের অবস্থা এমনই যে, ডুবুরিরা জলে নেমে কাজ করতেই পারেননি। এক ডুবুরি বললেন, “খালে যে-আবর্জনা ভাসছে, তা সাফ করতেই কেটে যায় অনেকটা সময়। খাল সাফাই না-হওয়ায় উদ্ধারে সমস্যা হচ্ছে।”
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্মীর কথায়, “খালে যে এত পাঁক ও নোংরার স্তূপ জমেছে, ভাবতেই পারিনি। ছোট একটু জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতেই হিমশিম অবস্থা।”
এই অবস্থা কেন? সেচ দফতরের বাগজোলা খালের দায়িত্বপ্রাপ্ত এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যিশু দত্তের দাবি, বর্ষায় দু’বার খালের সংস্কার হয়েছে। “কিন্তু মানুষের সচেতনতার এত অভাব যে, এর মধ্যে নোংরা ফেলে খাল ফের অপরিষ্কার করে দিয়েছে। শুধু তো খাল সংস্কার করলেই হবে না। মানুষকে সচেতনও হতে হবে,” বললেন যিশুবাবু।
এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, সংস্কার ভাল ভাবে হলে কয়েক মাসের মধ্যে খালে এত আবর্জনা জমতে পারত না। তাঁদের প্রশ্ন, জনতার ঘাড়ে দায় না-চাপিয়ে সেচ দফতর বা প্রশাসন এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঠিকঠাক কাজ করবে কি?