কলকাতা পুলিশের ভাঁড়ার ভরাচ্ছে লোক আদালত

ছ’মাসেই দেড় কোটি! সৌজন্যে লোক আদালত। লোক আদালতের দৌলতে শুধু কলকাতার একটি আদালত থেকেই এই টাকা আয় করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, শিয়ালদহ ও আলিপুর আদালত মিলিয়ে এই অঙ্কটা প্রায় তিন কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। লোক আদালত চালু করেছে রাজ্য পুলিশও। কিন্তু আয়ের নিরিখে এখনও কলকাতার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে তারা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৬
Share:

ছ’মাসেই দেড় কোটি! সৌজন্যে লোক আদালত।

Advertisement

লোক আদালতের দৌলতে শুধু কলকাতার একটি আদালত থেকেই এই টাকা আয় করেছে কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, শিয়ালদহ ও আলিপুর আদালত মিলিয়ে এই অঙ্কটা প্রায় তিন কোটি ছুঁয়ে ফেলবে। লোক আদালত চালু করেছে রাজ্য পুলিশও। কিন্তু আয়ের নিরিখে এখনও কলকাতার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে তারা। গত পাঁচ মাসে রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা বাবদ আয় হয়েছে প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা। রাজ্য পুলিশের অবশ্য যুক্তি, পরিকাঠামোগত কারণেই তারা লালবাজারের থেকে পিছিয়ে পড়ছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতায় দীর্ঘ দিন ধরেই ছোটখাটো ট্রাফিক আইনের মামলা জমে থাকত। তার ফলে প্রচুর জরিমানার টাকাও বকেয়া পড়ে যেত। মামলা জমে যাওয়ার পাশাপাশি যথারীতি ঘাটতি পড়ত ভাঁড়ারেও। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ভাঁড়ারের ঘাটতি মেটানোর তাগিদেই ২০১৩ সালে লোক আদালত বসিয়ে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা শুরু করে কলকাতা পুলিশ। সেই মতো নগর দেওয়ানি আদালত (সিটি সিভিল কোর্ট), আলিপুর ও শিয়ালদহ আদালতে লোক আদালত শুরু হয়। আদালত সূত্রের খবর, প্রথম দিকে খুব বেশি আয় হয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোক আদালত থেকে অনেক বেশি জরিমানা আদায়ও শুরু হয়েছে।

Advertisement

কলকাতা জেলা আইনি পরিষেবা সংস্থার সচিব মৌ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত নগর দেওয়ানি আদালতে তিনটি লোক আদালত বসানো হয়েছে। জুন মাসে লোক আদালত থেকে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। প্রায় তিন লক্ষ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।”

আলিপুর ও শিয়ালদহ আদালত থেকেও ক্রমশ আয় বাড়ছে বলে লালবাজারের কর্তারা জানান। আগামী দিনে ভাঁড়ার পূরণে লোক আদালতের উপরে আরও জোর দেওয়া হবে বলেই লালবাজারের কর্তাদের দাবি।

এই ব্যবস্থায় শুধু পুলিশেরই আয় বাড়ছে না, সুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষেরও। পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, অনেক গাড়ি-মালিকেরই ছোটখাটো একগুচ্ছ মামলা জমে থাকে। সেগুলি সাধারণ ভাবে মেটাতে হলে বহু ঘোরাঘুরি করতে হয়। “লোক আদালতে এলে ঝক্কি এড়িয়ে অনেক সহজেই জরিমানা মেটানো সম্ভব হয়”, বলছেন মৌ চট্টোপাধ্যায়।

এ ভাবে আয় বাড়ানো যে সম্ভব, তা মেনে নিচ্ছেন রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক-কর্তারাও। তা হলে তাঁরা আয় বাড়াতে পারছেন না কেন? রাজ্য পুলিশের এডিজি (ট্রাফিক) কুন্দনলাল টামটার বক্তব্য, “রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদেরও লোক আদালত রয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত খামতির কারণেই তাঁরা সেই সুবিধা সে ভাবে কাজে লাগাতে পারছেন না।”

পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ্য ট্রাফিক পুলিশে অফিসারের খামতি রয়েছে। তাই লোক আদালত বসিয়ে টাকা আয় করা তো দূর অস্ৎ, ঠিক মতো জরিমানা করাও দুষ্কর হয়ে ওঠে।

তবে রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং জরিমানা আদায়ে আরও সক্রিয় হতে চান তাঁরা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আমরা প্রায় ৬২ লক্ষ টাকা আদায় করেছি। এটা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।” বস্তুত, গত বছরেও প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা জরিমানা বাবদ আদায় করেছিল রাজ্য ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু তাদের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, “গোটা রাজ্যে যে পরিমাণ গাড়ি চলে, তাতে এই আয় আরও বাড়ানো সম্ভব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন