কলকাতার কড়চা

...

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০২:০৮
Share:

অরোরা: শতবর্ষ পেরিয়ে ফিরে দেখা

Advertisement

গত শতকের ঘটনা, প্রায় গল্পকথার মতোই! এ শহরে খোলা আকাশের নীচে তাঁবু খাটিয়ে ছবি দেখানো হত। কখনও বা কোনও বনেদি বাড়ির অনুষ্ঠানে। বিদেশ থেকেও পুরনো ছবি আনিয়ে দেখানো হত। এই উদ্যোগে আরও অনেক কোম্পানির সঙ্গেই ছিল অরোরা-ও। ১৯১১, যে বছর সাহেবদের হারিয়ে শিল্ড জিতল মোহনবাগান, সে বছরই ৪৭ কাশী মিত্র ঘাট রোডে অরোরা সিনেমা কোম্পানি-র গোড়াপত্তন করলেন অনাদিনাথ বসু। শুরু অবশ্য ১৯০৬-এ, তখন নাম ছিল ‘অরোরা বায়োস্কোপ’, পাঁচ বছর পরে নাম বদল। ছবি বানানোও শুরু হল ১৯১৬-য়, হীরালাল সেনের দু’টি ক্যামেরা কোম্পানির সংগ্রহে নিয়ে এলেন অনাদিনাথ। বাঙালি ফিল্ম সংস্থার প্রথম প্রয়াস হিসেবে উঠে এল ‘রত্নাকর’, নির্বাক যুগের পূর্ণাঙ্গ ছবি। ‘সম্পূর্ণ বাঙালির অর্থে ও শ্রমে নির্মিত সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাক চিত্র।’ লিখেছেন কালীশ মুখোপাধ্যায় তাঁর বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস/ ১৮৯৭ থেকে ১৯৪৭-এ (পত্র ভারতী)।

যদিও বানানোর বেশ কিছু পরে ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯২১ থেকে প্রায় পূর্ণোদ্যমে চলতে লাগল বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে কাহিনির ভিতর দিয়ে ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা। তাতে আবার নানা ধরনের সংবাদচিত্র বা নিরীক্ষামূলক সৃজনও থাকত, সে সবের নাম হয়েছিল ‘অরোরা-র টুকিটাকি’। কাঁটাপুকুরে ফিল্ম ল্যাবরেটরিও তৈরি হল অরোরা’র, ১৯২৯-এ। একই বছরে অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন খুললেন অনাদিনাথ, ছবির পরিবেশনা ও প্রদর্শনের জন্যে, শুধু এদেশে নয় বিদেশেও। ধর্মতলা স্ট্রিটে নতুন অফিস হল। অনাদিনাথের মৃত্যুর পর, অরোরা’র ভার এল পুত্র অজিতের হাতে, স্বাধীনতার প্রাক্বালে, ১৯৪৬। স্বাধীনতার পর আজও অরোরা অটুট, সম্প্রসারণ ঘটেছে তার নানা ভাবে... রাইকমল (বাঁদিকে সে ছবিরই বুকলেট-এর প্রচ্ছদ। কাবেরী বসুর প্রথম অভিনয় ছবিটিতে), জলসাঘর, ভগিনী নিবেদিতা, রাজা রামমোহন (ডানদিকে সে ছবির স্থিরচিত্রে রামমোহনের ভূমিকায় বসন্ত চৌধুরী), আরোগ্য নিকেতন-এর মতো ছবি প্রযোজনা করেছে; মুক্তির পর পথের পাঁচালী-র পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়েছে। বাংলা সিনেমায় বাঙালির স্টুডিয়োর গুরুত্ব তুলে ধরতে অরোরা-র নির্বাচিত কয়েকটি ছবি দেখাবে নন্দন, ২৭-২৮ মার্চ। সঙ্গে অরোরা প্রযোজিত ও পরিবেশিত ছবিগুলির ফিল্মস্টিল-বুকলেট-পোস্টার ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রদর্শনীও। অধিকর্তা যাদব মণ্ডল জানালেন ‘শিক্ষিত সংস্কৃতিমনস্ক বাঙালির জীবনযাপনে গত এক শতক ধরে কী ভাবে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে অরোরা, তা নিয়ে শুরুর দিনই বলবেন বর্তমান কর্ণধার অঞ্জন বসু।’

Advertisement

রবীন্দ্র-দর্শন

নতুন করে রবীন্দ্রনাথকে দেখা, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। এমনই এক আয়োজন গ্রন্থরূপ পেল বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ থেকে। ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, মার্টিন কেম্পশেন, কে জি সুব্রহ্মণ্যম, উমা দাশগুপ্ত, বাসবী ফ্রেজার, সুকান্ত চৌধুরী, সুপ্রিয়া চৌধুরী, ভারতী রায়, কেতকী কুশারী ডাইসন, উইলিয়াম রাদিচে, বিকাশ সিংহ, পার্থ ঘোষ প্রমুখের লেখায় নতুন করে রবীন্দ্র-দর্শন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে টুওয়ার্ডস টেগোর (সম্পা: সংযুক্তা দাশগুপ্ত, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়)। মুখবন্ধ লিখেছেন বিশ্বভারতী-র উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। বইটির প্রচ্ছদ-পরিকল্পনাও অভিনব। কাপড়ের প্রচ্ছদে ১৯৩১-এ মুকুল দে অঙ্কিত রবীন্দ্রনাথের ছবি কাগজে ছেপে আটকে দেওয়া হয়েছে। নব্বই-পেরনো গ্রন্থনবিভাগের প্রকাশনার ধারায় অন্য রকম কাজ বইকী!

ভাষা-বিতর্ক

উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশের দুই দশক অবধি বাঙালি পণ্ডিতদের অধিকাংশেরই ধারণা ছিল, অসমিয়া স্বতন্ত্র ভাষা নয়, তা বাংলার উপভাষা। অসমিয়া সাহিত্যও তুলনায় অর্বাচীন। আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের স্রষ্টা লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া (১৮৬৪-১৯৩৮) আজীবন এই ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ-সহ যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, দীনেশচন্দ্র সেন, পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ কাউকেই রেয়াত করেননি তিনি। সম্প্রতি এই ইতিহাস নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে মন্দিরা দাসের ভাষা- বিতর্ক: বেজবরুয়া আরু বঙ্গর পণ্ডিত সমাজ (ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়)। প্রবীণ বেজবরুয়া-বিশেষজ্ঞ নগেন শইকীয়ার ভূমিকাসমৃদ্ধ বইটিতে সংগৃহীত হয়েছে বাংলা ও অসমীয়ায় লেখা এই বিতর্কযুদ্ধের যাবতীয় সমসাময়িক উপাদান। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা লক্ষ্মীনাথের স্কেচ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সৌজন্যে।

ভাস্কর

প্রথম দর্শনেই অভিভূত তিনি। ভাস্কর রাঘব কানেরিয়া সম্প্রতি বিড়লা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত একটি ভাস্কর্য কর্মশালায় এসেছিলেন। গুজরাতের এই শিল্পী ভাদোদরার এম এস ইউনিভার্সিটি থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন ১৯৫৯-এ। তারপর কাজ করেন শঙ্খ চৌধুরীর কাছে, পরে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব আর্টে। শিক্ষান্তে যোগ দেন নিজের কলেজেই। শঙ্খ চৌধুরীর কথা এখনও ওঁর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ‘সেই সময় নতুন কী পদ্ধতিতে কাজ চলছে সারা বিশ্বে, স্যার সেগুলি খুঁজে খুঁজে আমাদের কাছে বলতেন-শেখাতেন’, বলছিলেন তিনি, ‘ওই রকম ছাত্র দরদি মানুষ খুব কম দেখা যায়’। আশি ছুঁয়েও এই শিল্পী এখনও অক্লান্ত। কর্মশালার প্রধান উদ্যোক্তা ভাস্কর অখিলচন্দ্র দাস জানালেন, সারা দেশ থেকে ১৫ জন ভাস্কর যোগ দিয়েছেন, এঁরা সকলেই ওঁর ভাদোদরার ছাত্র, এর মধ্যে ৫ জন এই শহরের। ১১ মার্চ ওঁকে সংবর্ধনা জানাল সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস। জানা গেল, এই বছরের কালিদাস সম্মানও পাচ্ছেন তিনি। ছবি: গোপী দে সরকার

রসচর্চা

‘শক্তিকে হিমানীশদা এতই ভালোবাসতেন যে তার চালচলনের অসংগতির মধ্যেও তার বাকচাতুরিতে তিনি মজা খুঁজে নিয়েছেন এবং তা দৈনিক ডায়েরিতে লিপিবদ্ধও করতেন।’—শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা হিমানীশ গোস্বামীর শাক্ত পদাবলি-র (দীপ) শুরুতেই লিখেছেন কবি-পত্নী মীনাক্ষী। এ বইটির সঙ্গে হিমানীশের লেখা দার্জিলিং-সঙ্গী (সপ্তর্ষি), পরিমল গোস্বামীর রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান (দীপ) ও তাঁকে লেখা বনফুলের চিঠির সংকলন চিঠি-চিত্র (সম্পা: হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। দীপ) প্রকাশ পাচ্ছে বাংলা আকাদেমিতে ১৮ মার্চ সন্ধে ৬টায়। সে সন্ধ্যায় ‘হিমানীশ গোস্বামী রসচর্চা পুরস্কার’ পাবেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। আর ‘পরিমল গোস্বামী স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘কার্টুনের রাজনীতি’। ‘গত বছর বার্লিনে এক শিল্প-প্রদর্শনীতে দেখেছিলাম একটা ঘর জুড়ে শুধু গগনেন্দ্রনাথের আঁকা কার্টুন। আঠেরো শতকের শেষের দিকে ইউরোপে কার্টুন একটা আলাদা চিত্রভাষা হয়ে উঠেছিল।’ এই চিত্রভাষার রাজনৈতিক বিবর্তন নিয়েই বলবেন শমীক। নিবেদনে ‘হিমানীশ গোস্বামী স্মরণ সংসদ’। সঙ্গে পরিমল গোস্বামীর ছবি, হিমানীশ গোস্বামীর ক্যামেরায়।

শ্রদ্ধার্ঘ্য

মাত্র ৪৬ বছরে গলার ক্যানসারে মারা যান রজনীকান্ত সেন। এ বছর তাঁর জন্মের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ সন্ধে সাড়ে ছ’টায় আইসিসিআর-এ আয়োজন ‘পঞ্চকবির প্রেমের গান প্রেমের কবিতা’। রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত ও নজরুলের পারস্পরিক সম্পর্ক ও তাঁদের গানের গল্প নিয়ে অনুষ্ঠান সাজিয়েছেন ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর গানের সঙ্গে থাকবে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেমের কবিতা। প্রকাশিত হবে রজনীকান্তের প্রতিকৃতি সহ রৌপ্য মুদ্রা এবং পেরিনিয়াল রেকর্ডস এর উদ্যোগে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত অতুলপ্রসাদ রজনীকান্ত নজরুলের গানের সঙ্গে ঋদ্ধির গাওয়া ‘পঞ্চকবির গানে পরম্পরা’। আয়োজনে ‘ঋদ্ধি: আ স্টেপ ফর মিউজিক’। অন্য দিকে, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী অখিলবন্ধু ঘোষের প্রয়াণ দিবসে ২০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় আশুতোষ মেমোরিয়াল হলে প্রতি বছরের মতো ‘সারাটি জীবন কী যে পেলাম’ শীর্ষকে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ।

আঞ্চলিক

ছোট থেকেই আঞ্চলিক ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চিঠি লিখতেন বিশিষ্ট পণ্ডিতদের। উত্তরও পেয়েছিলেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুকুমার সেন, আশুতোষ ভট্টাচার্য, সুধীরকুমার মিত্র, অমর্ত্য সেনের কাছ থেকে। ষাটের দশকের সেই সংস্কৃতি-জিজ্ঞাসু যুবক মণীন্দ্রনাথ আশ বর্তমানে অঞ্চলচর্চার এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। হুগলি জেলার রিষড়ায় আদি নিবাস। জেলায় জেলায় ঘুরে বহু ক্ষেত্রসমীক্ষা করেছেন। পাঁচ দশক ধরে ইতিহাস ও পুরাকীর্তি বিষয়ে ছোট পত্রপত্রিকায় লিখছেন, তারাপদ সাঁতরার উৎসাহে লেখেন ‘কৌশিকী’ পত্রিকায়। কবিয়াল কৈলাস বারুই ও বিদ্যাসুন্দর যাত্রা (১৯৬৭) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ইতিহাসের আলোকে রিষড়া গ্রন্থটিরও তিনি অন্যতম লেখক। জেলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে যে কোনও তথ্যের চটজলদি উত্তর তাঁর কাছে। অঞ্চল চর্চার স্বীকৃতিতে পেয়েছেন ‘সুধীরকুমার মিত্র শতবর্ষ অঞ্চলচর্চা পদক’। সম্প্রতি আশি বছর পূর্ণ করলেন তিনি।

সংগ্রাহক

শিক্ষকতা আর সংসার সামলে ছোট্ট অবসরে জুটেছিল কিছু খেয়াল। তারই জেরে একের পর এক জমতে থাকে নানা বিচিত্র উপাদান। কলকাতার সংগ্রাহক ঈশিতা বসু রায়ের সংগ্রহে এখন রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত এযাবৎ প্রকাশিত ডাকটিকিট, ক্যান্সেলেসন, স্পেশাল কভার, ছবির কার্ড, লেবেল, দেশলাই সঙ্গে বিভিন্ন কর্তিকা সংগ্রহ। এই নিয়ে সম্প্রতি আয়োজিত হল প্রদর্শনী: ভারতীয় ডাক বিভাগের পূর্ব কলকাতা মণ্ডলের উদ্যোগে কোলপেক্স ২০১৫, রাজারহাটের নজরুল তীর্থে। এখানে আরও ছিল মুদ্রণশিল্প নিয়ে দীপক দে’র বিখ্যাত সংগ্রহ, মলয় সরকারের তাজমহল এবং সৌভিক রায়ের সংগ্রহ থেকে অরবিন্দ, রবীন্দ্রনাথ ও বুদ্ধ এবং বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত ডাকটিকিট। অনুষ্ঠানে প্রকাশ পেল ডাক পরিষেবা এবং হাওড়া ব্রিজের ওপর দুটি স্পেশাল কভার।

ছবির ভুবন

কুড়ি কুড়ি বছরের পার ক্যানভাসে তেলরঙে একটা ছবি এঁকেছিলেন সতীশ গুজরাল। নাম দিয়েছিলেন ‘দি ওয়ার্ল্ড অব সতীশ গুজরাল’। সেই ছবির ভুবনের ভেতরের কথাটা বোধহয় সবচেয়ে ভাল বলেছিলেন সতীশই। প্রয়াত চিত্র-সমালোচক রিচার্ড বার্থোলোমিউকে এক সাক্ষাৎকারে সতীশ বলেছিলেন, ‘ফিলিং মাস্ট কাম ফার্স্ট, অ্যান্ড ফিলিং ইজ ফর্ম অব অ্যান আর্টিস্ট’। এ বার তাঁর নব্বইয়ে পদার্পণ উপলক্ষে আকৃতি আর্ট গ্যালারিতে যে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে তার শীর্ষকও ‘দি ওয়ার্ল্ড অব সতীশ গুজরাল’। ছয় দশক ধরে ছবি আঁকছেন, ভাস্কর্য গড়ছেন যে শিল্পী তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই প্রদর্শনীতে থাকছে ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকের বেশ কিছু কাজ (সঙ্গে তারই একটি) এবং কয়েকটি পেন্সিল ড্রয়িং। আছে দুটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যও। এই উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে একটি সুদৃশ্য ক্যাটালগ। প্রদর্শনীর কিউরেটর নানক গঙ্গোপাধ্যায়, এটি চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

সমকালীন

আমি আসলে ক্রাইম ফিকশন-এর খুব ভক্ত। দেশি তো বটেই, বিদেশিও পড়ি। আমার বরাবরের ইচ্ছে এ ধরনের কাহিনিতে কাজ করার। মিস্ট্রি আর কমেডি-তে অভিনয় করার খুব শখ। তেমন ভাবে তো পাই না এমন চরিত্র... ’, বলছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। সন্দীপ রায়ের ‘হিট লিস্ট’-এ তাঁর গোয়েন্দা চরিত্রটি মনে করাতেই বললেন ‘হ্যাঁ, আমি তো সন্দীপকে সব সময় বলি এরকম ছবি আরও করতে, এমন চরিত্র আমায় আরও দিতে।’ সন্দীপের পিতৃদেবের ছবিতেই প্রথম আত্মপ্রকাশ ধৃতিমানের, পঁয়তাল্লিশ বছর আগে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’। আবার সত্যজিৎই প্রথম শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ-কে নিয়ে ছবি করেছিলেন। এই মুহূর্তে ধৃতিমানই ব্যোমকেশ, শৈবাল মিত্রের ‘শজারুর কাঁটা’য়। ‘সত্যজিতের ‘চিড়িয়াখানা’ই বেঞ্চমার্ক আমার কাছে, সেখানে মধ্যবয়স্ক ব্যোমকেশ। আর ‘শজারুর কাঁটা’ শরদিন্দুর দ্বিতীয় পর্যায়ের রচনা, এখানে ব্যোমকেশের বয়স বেড়েছে। আমার ছবিতে তাই ব্যোমকেশ প্রবীণ, সত্যান্বেষী, সমকালীনও। ফলে ধৃতি’দা ছাড়া আর কাউকে ভাবতেই পারিনি।’ জানালেন শৈবাল। ‘ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের বোঝাপড়া, পরিচালক-অভিনেতার পারস্পরিক সম্পর্কে যেটা খুব জরুরি। অনেক অধ্যবসায় আর পরিশ্রমে ছবিটা করেছে শৈবাল। আমি শুধু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমার এই সমকালীন প্রবীণ ব্যোমকেশকে কী ভাবে নেয় দর্শক।’ ধৃতিমান হালে অতনু ঘোষের ‘একফালি রোদ’-এ ফের মুগ্ধ করেছেন বাঙালিকে। এ বারে তাঁর ব্যোমকেশ শহরে আসছে, ২০ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে ‘শজারুর কাঁটা’।

লোকসংস্কৃতিবিদ

বাংলার বিখ্যাত নকশি কাঁথা ছড়িয়ে আছে দুই বাংলা ছাড়াও পৃথিবীর নানা সংগ্রহে। তাতে কী, তিনি পশ্চিমবঙ্গের পর বাংলাদেশকে নিজের ঘরবাড়ি করে তুলেছিলেন কাঁথা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে। বিদেশে কোন সংগ্রহে কেমন কাঁথা আছে, তা ছিল শীলা বসাকের নখদর্পণে। সেই আশ্চর্য ক্ষেত্রসমীক্ষার ফল বাংলার নকশি কাঁথা (আনন্দ) বইটি। সত্যিকারের কাঁথা দিয়ে বাঁধানো ‘সীমিত সংস্করণ’ পর্যন্ত হয়েছে সে বইয়ের!

শুধু কাঁথা কেন, শীলা বসাক বাংলার লোকসংস্কৃতির অনালোকিত নানা দিকেই আলো ফেলেছেন। স্বাধীনতার বছরে কলকাতায় জন্ম, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ, পিএইচ ডি এবং রবীন্দ্রভারতী থেকে ডি লিট অর্জন করেন। পড়িয়েছেন সুশীল কর কলেজ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো শীলা যুক্ত ছিলেন বহু আন্তর্জাতিক বিদ্বৎ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বাংলার ব্রতপার্বণ বইটির জন্য তিনি পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। খুঁটিয়ে দেখেছেন বাংলা ধাঁধার বিষয়বৈচিত্র্য ও সামাজিক পরিচয়। মাত্র দু’বছর আগে প্রকাশিত বাংলার কিংবদন্তি বইয়ে তিনি দুই বাংলা থেকে তুলে এনেছিলেন লোকমানসে সম্পৃক্ত বিচিত্র কাহিনির ভাণ্ডার। সেই ধারাতেই সম্প্রতি বড় আকারে কাজ করছিলেন লোকবিশ্বাস ও লোকসংস্কার নিয়ে। সে কাজ অসমাপ্ত রেখে মাত্র ৬৮ বছর বয়সে চলে গেলেন এই লোকসংস্কৃতিবিদ। ২১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় রাজা বসন্ত রায় রোডের ‘ত্যাগরাজ হল’-এ শীলা বসাকের স্মরণ-অনুষ্ঠান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন