কলকাতার কড়চা

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বাংলা নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা সমিতি গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রফুল্ল-র শ্রুতি-অভিনয় করে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে। তার কুশীলবদের একটি ছবি ছাপা হয় ‘বেতার জগত্‌’ পত্রিকায়। ছবিতে ছিলেন শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমার রায়, সবিতাব্রত দত্ত, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কেয়া চক্রবর্তী প্রমুখ। দুর্লভ সেই ছবিটি পত্রিকার পাতা থেকে এখন গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়, শম্ভু মিত্রকে নিয়ে এক শতবার্ষিক প্রদর্শনীতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০০:০১
Share:

শম্ভু মিত্র: শতবার্ষিক প্রদর্শনী

Advertisement

প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বাংলা নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা সমিতি গিরিশচন্দ্র ঘোষের প্রফুল্ল-র শ্রুতি-অভিনয় করে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে। তার কুশীলবদের একটি ছবি ছাপা হয় ‘বেতার জগত্‌’ পত্রিকায়। ছবিতে ছিলেন শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমার রায়, সবিতাব্রত দত্ত, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কেয়া চক্রবর্তী প্রমুখ। দুর্লভ সেই ছবিটি পত্রিকার পাতা থেকে এখন গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়, শম্ভু মিত্রকে নিয়ে এক শতবার্ষিক প্রদর্শনীতে। বাংলা নাটকের ইতিহাসের উপাদান এমনিতেই খুব দুর্বল ভাবে সংরক্ষিত হয়। তারই মধ্যে এমন একটি প্রদর্শনী আশা জাগায়।

২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস উদযাপন এ ভাবেই করল পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি। নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা সমিতির পুস্তিকার প্রচ্ছদ, হিন্দি জবানবন্দি নাটকে অভিনয়রত শম্ভু মিত্র, নবান্ন-র স্টিল ইত্যাদিতে প্রদর্শনীটি শতবর্ষে নিছক শ্রদ্ধার্ঘ্য হয়েই থাকেনি। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ২৭ তারিখ সূচনা করলেন প্রদর্শনীটির। শম্ভু মিত্রের প্রিয় কবিতা আবৃত্তি করলেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মন। পরে শম্ভু মিত্র রচিত দুটি ছোট নাটক ‘গর্ভবতী বর্তমান’ ও ‘একটা দৃশ্য’-র অভিনয় হল যথাক্রমে অভি চক্রবর্তী ও শেখর সমাদ্দারের নির্দেশনায়।

Advertisement

হাতের কাছে

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবির বড় অংশই তো অদেখা, জমা হয়ে ছিল রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সংগ্রহে। সম্প্রতি এক দিকে প্রতিক্ষণ থেকে গগনেন্দ্র-চিত্রাবলি, অন্য দিকে লালমাটি থেকে ব্যঙ্গচিত্রগুলি সংকলিত হয়ে শিল্পীকে অনেকটা দৃশ্যমান করেছে। সে পথে আর এক ধাপ এগোনো সম্ভব হল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সৌজন্যে। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাজার পাঁচেক ছবির সংগ্রহটি এখন সেখানেই সংরক্ষিত, তা থেকেই ২০১২ সালে গগনেন্দ্র-চিত্রের একটি প্রদর্শনী হয়। এত দিনে রতন পরিমু-র মূল্যবান বিশ্লেষণী আলোচনা সহ প্রকাশিত হল সেই প্রদর্শনীর ১০৮টি ছবির ক্যাটালগ (সঙ্গে তার প্রচ্ছদ)। চমত্‌কার মুদ্রণে ছবিগুলি এত দিনে সবার নাগালে এল। ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় ভিক্টোরিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশিত হবে, আর রতম পরিমু বলবেন গগন-অবনের শিল্পসৃষ্টি নিয়ে।

শতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য

৮ জুলাই ১৯১৪ সালে কলকাতায় জন্ম। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করে জ্যোতি বসু কলকাতায় ফিরে যুক্ত হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৪৬ থেকে বিধানসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধি। ১৯৭৭ থেকে টানা ৮৫৪০ দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। একটানা মুখ্যমন্ত্রিত্বের অনন্য নজির। ১৭ জানুয়ারি ২০১০ সালে ৯৬ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন। ২৪ মার্চ অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর পাঁচটি গ্যালারিতে দেশবিদেশের শিল্পী ও ভাস্করদের ৫১৫টি শিল্পকর্মের এক সুবিশাল প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। শিল্পী ওয়াসিম কপূর কয়েক মাস ধরে এই শিল্পকর্ম সংগ্রহের দায়িত্ব সামলেছেন আহ্বায়ক হিসেবে। জ্যোতি বসুর জন্মশতবর্ষপূর্তিতে শিল্পীসমাজের এই শ্রদ্ধার্ঘ্য, জানালেন তিনি। প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আজ (৩-৮টা)।

পুনঃসৃজন

১৭ সেপ্টেম্বর একশো বছরে পা দিচ্ছেন তিনি। চার বছর আগে লন্ডনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন, তবু মকবুল ফিদা হুসেন আজও ভারতীয় চিত্রকলায় সমান প্রাণবন্ত। প্রায় নিঃশব্দে সেই শতবার্ষিকী-শ্রদ্ধার্ঘ্যের সূচনা হল এই শহরে। তারুণ্যের হাত ধরে। রামদুলারি পার্ক বাড়িতে ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের ফাইনাল ইয়ারের সাত ছাত্রকে নিয়ে ৪ এপ্রিল অবধি চলছে ‘রিক্রিয়েটিং হুসেনস কলকাতা’ নামে কর্মশালা। এ শহরে জ্ঞানদানন্দিনী থেকে মাদার টেরেসা, উত্তমকুমার, সত্যজিত্‌ রায়কে যে ভাবে রঙ তুলিতে ধরেছিলেন হুসেন, নবীন প্রজন্মের হাতে তারই পুনঃসৃজন। মিন্টো পার্কের আজাদ হিন্দ ধাবার দেওয়ালে আজও রয়েছে হুসেনের আঁকা নারী। ওয়ার্কশপের মেন্টর, আর্ট কলেজের শিক্ষক শমীন্দ্রনাথ মজুমদার জানালেন, ওই ছবির প্রাথমিক স্কেচে হুসেন সুন্দরীর পাশে এঁকেছিলেন যৌনতার প্রতীক এক দুর্দম ঘোড়া। পরে রঙ চাপানোর সময়, ’৯৯ সালে সেই ঘোড়া পরিণত হয় হাতিতে। গজগামিনীর প্রথম আইডিয়া তা হলে এই শহরেই? তাঁর প্রেম, প্যাশন, বর্ণময়তা সবেরই সাক্ষী মহানগর।

বিশেষ বক্তৃতা

যে ক’জন সমাজবিজ্ঞানী গোটা বিশ্বে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষকে তাঁদের কাজের মাধ্যমে গর্বিত ও সম্মানিত করেছেন, তাঁদের পুরোভাগে আছেন রাজনীতিশাস্ত্রী ও ইতিহাসবিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রায় চার দশক তিনি যুক্ত রয়েছেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে, সঙ্গে বছরে চার মাস পড়ানো কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চায় যেমন তাঁর কৃতিত্ব, ভারতীয় নেশন, জাতীয়তাবাদ গবেষণায় তেমনই তাঁর খ্যাতি। সমাজবিজ্ঞান অনুশীলনের পাশাপাশি নাট্য চর্চাতেও তাঁর দক্ষতা সুবিদিত। ২ এপ্রিল বেলা তিনটেয় তিনি বিশেষ বক্তৃতা দেবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে মরকতকুঞ্জ প্রাঙ্গণের কবিজননী সারদা কক্ষে, বিষয়: ‘ন্যাশনালিজম, কসমোপলিটানিজম, ইন্টারন্যাশনালিজম’। কবিগুরুর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির শতবর্ষ উপলক্ষে রবীন্দ্রভারতীর বিশেষ বক্তৃতামালার এটি অষ্টম বক্তৃতা।

কবিতা থেকে ছবি

বাবার কবিতায় উত্‌সাহিত হয়ে তুলি ধরেছিলেন শিল্পী। কবির শব্দবন্ধ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুমনা বিশ্বাসের ছবি সপ্তপর্ণী। শিল্পীর এই সপ্তম একক প্রদর্শনী, ‘অন দি এজ অব নকটারনাল ভয়েড’ অথবা কবিতাগ্রন্থ ‘রাত্রির শূন্যের প্রান্তে’ আগামী কাল শুরু হচ্ছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। ছবিগুলির নামলিপিও আহরিত হয়েছে কবিতা থেকেই। চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত, ৩-৮টা প্রতি দিন।

নতুন মূর্তি

তিন দশক ধরে কলকাতার সামাজিক চিত্র ফুটে উঠেছিল বিমল মিত্রের কলমে। কড়ি দিয়ে কিনলাম, সাহেব বিবি গোলাম, একক দশক শতক, বেগম মেরী বিশ্বাস তাঁর উল্লেখযোগ্য সব উপন্যাস। সম্প্রতি চলে গেল লেখকের ১০৪-তম জন্মবার্ষিকী। সে দিন সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবনের একতলায় শিল্পী সুব্রত কর্মকারের তৈরি লেখকের অর্ধাবয়ব মূর্তি (সঙ্গের ছবি) উন্মোচন করলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিত প্রমুখ।

গানের ভুবন

বাংলা গানকে উত্তুঙ্গ শিখরে পৌঁছে দেন রবীন্দ্রনাথ, কিন্তু ঠাকুর পরিবারে তিনিই একমাত্র নন। দেবেন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী, বলেন্দ্রনাথ, ইন্দিরা, সরলা, দিনেন্দ্রনাথও গান রচনা করেছিলেন। সর্বাধিক গান স্বর্ণকুমারীর তিন শতাধিক। অথচ সে সব গানের চর্চা সীমিত। এই নিয়েই ৫ এপ্রিল নজরুলতীর্থে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক সংগীতানুষ্ঠান: ‘ঠাকুরবাড়ির গান ও রবীন্দ্রনাথ’। পরিবেশনায় দেবারতি সোম-স্বপন সোম ও বৈতালিক শিল্পীগোষ্ঠী। অন্য দিকে নতুন করে নজরুলকে পাওয়া যাবে নতুন অ্যালবাম ‘লাভ অ্যান্ড ডিজায়ার কাজি নজরুল ইসলাম’-এ। প্রেম, অভিমান, দুঃখ ও কিছু স্মৃতি জড়ানো একটি চিঠি নজরুল লিখেছিলেন প্রেমিকা নার্গিসকে। সেই চিঠি ও তাঁর প্রেমের গান নিয়ে নজরুলের নাতনি অনিন্দিতা কাজি এবং সুরকার-গায়ক সৌম্য বসু তৈরি করেছেন এই অ্যালবাম। ৩ এপ্রিল সন্ধে ৬টায় উত্তম মঞ্চে এটি প্রকাশিত হবে।

অলীকবাবু

“রবিকাকা নিলেন অলীকবাবুর পার্ট, আমি ব্রজদুলাল...।” ড্রামাটিক ক্লাবে ‘অলীকবাবু’ নাটকের অভিনয় প্রসঙ্গে লিখেছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ফরাসি গল্প নিয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন সেটি। রবীন্দ্রনাথ অনেক অদলবদল করে সে নাটককে ফরাসি গন্ধ মুক্ত করেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নবতিতম প্রয়াণ দিবসে সম্প্রতি ‘অন্য থিয়েটার’ নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করল। নির্দেশনা ও সঙ্গীত: অর্ণ মুখোপাধ্যায়। ১ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ছ’টায় নাটকটি আবার দেখা যাবে অ্যাকাডেমিতে। নিবেদনে নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার বিভাস চক্রবর্তী।

সাড়া জাগানো

এই প্রথম। ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক টেলিভিশন— ‘ইনপুট’ নামে পরিচিত ও দুনিয়াব্যাপী প্রসারিত এ-সংস্থা কলকাতার মনস্ক মানুষজনের সামনে তাদের সেরা অনুষ্ঠানগুলি দেখানোর আয়োজন করেছে। সংস্থাটি নানান দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনকে টিভি’র ক্যামেরায় বিশ্লেষণ-বিতর্কের ভিতর দিয়ে তুলে আনে। ওদের এ দেশের ‘ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর’ অভিজিত্‌ দাশগুপ্ত জানালেন ‘ভারতে প্রথম কলকাতাবাসীর সামনেই খুলে যাচ্ছে দুনিয়ার সাড়া-তোলা সব টিভি-প্রতিবেদন।’ কখনও ফ্রান্সের ডকুমেন্টারিতে স্ট্যানলি কুব্রিক’কে নিয়ে নতুন তথ্য, কখনও-বা চিনের বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেন-এর জগত্‌, কখনও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট উগো শাভেজ-এর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। ‘নন্দনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ-আয়োজন।’ জানালেন অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ‘বেস্ট অব ইনপুট’: ১ এপ্রিল দুপুর ২.৩০ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। উদ্বোধনে থাকবেন প্রসার ভারতী-র সিইও জহর সরকার। ১ এপ্রিলেই বিকেল ৫টায় ম্যাক্সমুলার ভবনে ‘সপ্তম কল্পনির্ঝর বার্ষিক বক্তৃতা’ দেবেন জহর সরকার, বিষয়: ‘দ্য রোল অব পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টিং ইন দি এজ অব কমার্শিয়ালাইজড মিডিয়া’। কল্পনির্ঝর ফাউন্ডেশন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গ্যেটে ইনস্টিটিউট ও ভিভাদা।

পরিচালক

আমার ছবিই তো কথা বলবে, আমি বলব কেন? আমি আড়ালে থাকতেই ভালবাসি, ছবি-করিয়ের তাই ধর্ম হওয়া উচিত।’ বলছিলেন তরুণ মজুমদার, তাঁর নতুন ছবি ‘ভালবাসার বাড়ি’র শ্যুটিং শুরু করছেন এপ্রিলে। গল্পটি প্রচেত গুপ্তের, তাঁর কথায়: ‘এ-গল্পটার আগে আমার ‘চাঁদের বাড়ি’ নিয়েও তরুণবাবু ছবি করেছেন। আমার কাছে এ বড় গর্বের। এ-গল্পটা সেই বাড়ি নিয়ে যা ইট কাঠ পাথরের নয়, ভালবাসা দিয়ে তৈরি, সে বাড়িতে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখে মানুষজনের সম্পর্কের গাঢ়তা।’ স্বনামে ছবি-করার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করলেন তরুণ মজুমদার, তাঁর ‘আলোর পিপাসা’ মুক্তি পায় ১৯৬৫-র জানুয়ারিতে। ছবি করার কাজ শুরু পঞ্চাশের দশকেই। দিলীপ ও শচীন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘যাত্রিক’ গোষ্ঠীর ব্যানারে পরিচালনা শুরু করেন, ’৫৯-এ তাঁদের প্রথম ছবি ‘চাওয়া পাওয়া’। তরুণবাবুর অনবদ্য কমেডি ‘একটুকু বাসা’ মুক্তি পেল ’৬৫-র মার্চেই। একে-একে বালিকা বধূ, নিমন্ত্রণ, শ্রীমান পৃথ্বীরাজ, ফুলেশ্বরী, ঠগিনী, সংসার সীমান্তে, গণদেবতা, দাদার কীর্তি, অমরগীতি, আলো তাঁর অনেক ছবির লাবণ্য আজও মুগ্ধ করে রেখেছে বাঙালিকে। ‘অভিমন্যু’ ছদ্মনামে পরিচালনা করেন গোয়েন্দা-ছবি ‘কুহেলী’। ‘মানুষ যেমন নিশ্বাস নেয়, নিশ্বাস না নিলে সে বাঁচে না... তেমনই পরিচালকও তাঁর সম্পূর্ণ অজান্তে তাঁর জীবন-দর্শনের মূল সুরটি বার বার বাজাবেন তাঁর কাজের মধ্যে, অথচ বুঝতে পারবেন না এ সুরে ভুল হওয়ার অর্থই হল শিল্পী হিসেবে তাঁর মৃত্যু।’ মনে করেন তরুণ মজুমদার।

নাট্যকর্মী

হেলেন কেলার আমার জীবন বদলে দিয়েছেন।’— শুনে মনে হতে পারে, তাঁকে নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন তো কিসমত বানো, তাই এমনটা বলছেন। তাঁর রচিত-নির্দেশিত-অভিনীত ‘হেলেন’ দেখে মুগ্ধ কলকাতার দর্শক, নান্দীপট-এর ‘নারীর মঞ্চ’ নাট্যোত্‌সবে। ‘স্কুলে লেখাপড়ায় ভাল ছিলাম না, কলেজে হেলেন কেলারের জীবনী পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জোর পেলাম। তাঁকে নিয়ে নাটকই আমায় জনসমক্ষে নিয়ে এল।’ বানো অসম-নিবাসী, গুয়াহাটি থেকে কলকাতা ঘুরে গেলেন সদ্য। তাঁর নাট্যগোষ্ঠী ‘উইংস থিয়েটার’ প্রতিবন্ধী শিশু ও অনাথ-অবহেলিত বাচ্চাদের নিয়েও নাটকের নিয়মিত ওয়ার্কশপ আর মঞ্চায়ন করে। লেখাপড়ার সঙ্গে বেড়ে-ওঠা অসমে হলেও বানো আদতে রাজস্থানি, রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে, বাল্যবয়সে বিয়ে ঠিক হয়েও ভেস্তে যায়... ফর্সা, লম্বা, উন্নত নাসা নন বলে। ‘এতে আমার নতুন জন্ম হল, বাবাও আর বাধা দিলেন না সর্বক্ষণের নাট্যকর্মী হয়ে ওঠায়।’ পড়তে-পড়তেই যোগ দেন গুয়াহাটির সিগাল থিয়েটার-এ, সেখানেই শ্রীমতী ভাগীরথী আর বাহারুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নাটক শেখা। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার নাটকে নিয়মিত অভিনয়, তাঁর নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছে লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার ‘দুই বুদ্ধক’, টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স-এর শিক্ষার্থীদের নিয়ে করেছেন ‘সোচ’। কেন্দ্রীয় সরকারের বৃত্তি পেয়েছেন তরুণ নাট্যকর্মী হিসেবে, মেরি কম-এর কাছ থেকে পেয়েছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থিয়েটারের উন্নয়নের জন্য পুরস্কার। দিল্লির সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি’র অর্থানুকূল্যে তৈরি ‘হেলেন’ সেখানে মঞ্চস্থ করবেন বানো, এই এপ্রিলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন