কলকাতার কড়চা

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া/ কেবল শুনি রাতের কড়া নাড়া/ অবনী বাড়ি আছো?’ কলকাতা-কাঁপানো এ কবিতার অবনী কিন্তু কলকাতার মানুষ নন, বাঁকুড়ার, জন্মও বারাণসীতে, ১৯৩৩। শক্তি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই অবনী নাগকে নিয়েই তাঁর প্রিয় পদ্যটি লিখেছিলেন কি না, এমন কোনও হাতে-নগদ প্রমাণ মেলে না, তবু তাঁর সঙ্গে নাগমশাইয়ের সম্পর্ক কবিমহলে সুবিদিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৩৫
Share:

চলে গেলেন ‘ইলেকট্রিক কবি’

Advertisement

দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া/ কেবল শুনি রাতের কড়া নাড়া/ অবনী বাড়ি আছো?’ কলকাতা-কাঁপানো এ কবিতার অবনী কিন্তু কলকাতার মানুষ নন, বাঁকুড়ার, জন্মও বারাণসীতে, ১৯৩৩। শক্তি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই অবনী নাগকে নিয়েই তাঁর প্রিয় পদ্যটি লিখেছিলেন কি না, এমন কোনও হাতে-নগদ প্রমাণ মেলে না, তবু তাঁর সঙ্গে নাগমশাইয়ের সম্পর্ক কবিমহলে সুবিদিত। শুধু শক্তি কেন, বিমল কর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তারাপদ রায় সমরেন্দ্র সেনগুপ্তের মতো কলকাতার কবি-ঔপন্যাসিকদের নিত্য যাতায়াত ছিল বাঁকুড়ার মাসিক পত্রিকা পারাবত-এর দফতরে। ’৬৫-তে বাঁকুড়ানিবাসী কবি আনন্দ বাগচীর সঙ্গে যুগ্ম সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশ করা শুরু করেন অবনী। প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী। শিক্ষকতার কাজ ছেড়ে ছড়াকার-কবি এই মানুষটি প্রথমে পারিবারিক মিষ্টান্ন ব্যবসায় যুক্ত হন, পরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান খোলেন, পাশাপাশি সমান তালে চলতে থাকে কবিতা লেখা, ফলে বিমল কর তাঁর বিশেষণ দিলেন ‘ইলেকট্রিক কবি’। রামকিঙ্করের জীবন অবলম্বনে সমরেশ বসু তাঁর দেখি নাই ফিরে উপন্যাস লেখার সময় বারবার ছুটে গিয়েছেন বাঁকুড়ায় অবনীর কাছে, কত তথ্য নিয়েছেন তাঁর থেকে। নিজের লেখালেখির বাইরেও সম ও নতুন প্রজন্মের গবেষক-লেখকদের দিকে সব সময় বাড়িয়ে দিতেন সাহায্যের হাত। সত্তর দশকে বৃশ্চিক পত্রিকারও অন্যতম সম্পাদক ছিলেন তিনি। একমাত্র কাব্যগ্রন্থ মনে মনে (১৯৭৩), আর গদ্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে ছদ্মনামের চলন্তিকা (২০০৫)। ২০১০-এ ইলেকট্রিকের দোকান তুলে দিয়ে আনন্দ পাবলিশার্স-এর বিপণি খোলেন। প্রয়াত বন্ধু আনন্দ বাগচীর অসুস্থতার খবর পেয়ে হালিশহরে তাঁর বাড়িতে শুধু দেখাই করেননি অবনী, তাঁর জন্মদিনে তাঁকে ঘিরে কলকাতা-সহ এ বঙ্গের সাহিত্যিকদের স্মৃতিচারণ নিয়ে ফের পারাবত-এর বিশেষ সংখ্যা বের করেন। চলে গেলেন সদ্য। ৯ ডিসেম্বর বাঁকুড়ার বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, কলকাতা কি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে না? কলকাতায় বাস না করেও তো কলকাতাবাসীর অন্তরে ছিলেন তিনি।

Advertisement

পথিকৃৎ

মাত্র উনিশ বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়ে ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। অক্সফোর্ডের কৃতী ছাত্র আনন্দরাম বড়ুয়া ২৭ বছরে ইংরেজি-সংস্কৃত অভিধানের প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেন, যেটি ম্যাক্সমুলারের প্রশংসা পেয়েছিল। জন্ম ২১ মে ১৮৫০, উত্তর গুয়াহাটির রাজাদুয়ার গ্রামে। পনেরো বছরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। বাইশে ভারতের পঞ্চম ও অসমের প্রথম আইসিএস, আর তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি সম্পূর্ণ একটি জেলার দায়িত্বে ছিলেন। লিখেছেন এনসিয়েন্ট জিওগ্রাফি অব ইন্ডিয়া, ধাতুবৃত্তিসার। তাঁর লেখা হায়ার স্যান্সক্রিট গ্রামার-জেন্ডার অ্যান্ড সিনট্যাক্স প্রতিটি হাজার পাতায় বারোটি খণ্ড। মাত্র ৩৮ বছরে মারা যান আনন্দরাম। সমাবর্তন উপলক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৯ ডিসেম্বর তাঁর নামে পদক পুনরায় চালু করছে। আজ বিকেল তিনটেয় সংস্কৃত বিভাগের উদ্যোগে হার্ডিঞ্জ ভবনের ঋত্বিক প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে অমলেশ দাশগুপ্ত ও স্বপন সাহার পরিচালনায় ‘আনন্দরাম বড়ুয়া— আ ফোররানার অব মডার্ন অসম’ তথ্যচিত্রটি।

গাঁধী চর্চা

কলকাতায় বসেই মাউস ক্লিকে পড়া যাবে আমদাবাদ সবরমতী আশ্রমে সংরক্ষিত শত খণ্ড গাঁধী রচনাবলি। পড়া যাবে তাঁর কারাবাস, অনশন বৃত্তান্ত এবং চিঠিপত্র—www. gandhiheritageportal.org-এ গেলে। পাওয়া যাবে তাঁর সম্পাদিত গুজরাতি ‘নবজীবন’ থেকে ইংরেজি ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ বা ‘ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন’ কাগজও। ‘সবরমতী আশ্রম প্রিজারভেশন অ্যান্ড মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর অধিকর্তা ত্রিদীপ সুরহুদ (সঙ্গের ছবি) জানালেন, প্রায় ৭ লক্ষ ৭৫ হাজার পৃষ্ঠা ইতিমধ্যেই তাঁরা ডিজিটাইজ করে ফেলেছেন। গাঁধী বিশারদ হিসাবে কলকাতা দূর থেকে ত্রিদীপকে বিভিন্ন ভাবে দেখেছে। কখনও হরিলাল গাঁধীর জীবনী, কখনও বা ‘হিন্দ স্বরাজ’-এর সটীক ভাষ্য। শুধু গুজরাতি থেকে ইংরেজিতে গাঁধী অনুবাদ করেন না, আশিস নন্দীর ‘ইন্টিমেট এনিমি’ও এনেছেন গুজরাতি ভাষায়। তিরিশের দশকে গাঁধী কী ভাবে জন্মভূমি গুজরাতের কাছে বোঝা হয়ে উঠছিলেন, আমদাবাদ শহর তাঁকে সহ্য করে উঠতে পারছিল না সে বিষয়ে ‘আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজ’-এর উদ্যোগে সম্প্রতি বক্তৃতা দিলেন তিনি, এখানে তাঁর প্রথম পাবলিক লেকচার।

স্মারক আলোচনা

অখণ্ড ২৪ পরগনার মৌন অতীত উদ্ধারে কালিদাস দত্ত (১৮৯৫-১৯৬৮) ছিলেন পথিকৃৎ। পাথুরে সাক্ষ্য উপস্থিত করে প্রমাণ করেছিলেন পশ্চিম সুন্দরবনের প্রাচীন সভ্যতার কথা। জয়নগর-মজিলপুরের এই ইতিহাসবিদের জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ আঞ্চলিক ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। এ বারে ১০ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায় সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে বলবেন সৌমিত্র শ্রীমানী, বিষয় ‘ক্যালকাটা ডিস্ট্রিক্ট চ্যারিটেবল সোসাইটি’। সে দিনই যাদবপুরের অনিতা ব্যানার্জি মেমোরিয়াল হলে, দুপুর ২টোয় টেলিভিশন সাংবাদিক সন্দীপ্তা চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে স্মারক বক্তৃতায় ‘সমাজ, সংবাদ, সংলাপ’ বিষয়ে বলবেন সুকান্ত চৌধুরী। তিন বছর আগে সন্দীপ্তার অকালমৃত্যুর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড কালচার’ এই আয়োজন করে। সংবাদমাধ্যম বিষয়ে ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করবেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। অন্য দিকে, ফ্রেন্ডস অব ডেমোক্রেসি-র আয়োজনে ‘মুক্ত চিন্তা ও যুক্তিবাদী শহিদদের স্মরণে’ ১০ ডিসেম্বর ৫ টায় অবনীন্দ্র সভাগৃহে বলবেন পার্থসারথি সেনগুপ্ত ও সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।

সাংস্কৃতিক

শান্তিনিকেতনের পৌষমেলার আদলে কলকাতার ‘রবীন্দ্রতীর্থ’-তে এই প্রথম ‘পৌষ উৎসব’। থাকবে বাংলার পুতুল, মুখোশ, কাঁথাস্টিচ থেকে কলমকারি-সহ নানা ধরনের শাড়ি, পিঠেপুলি থেকে রসমালাই, আরও কত কী! থাকছে বাউলদের আখড়া আর ঢাকের বাদ্যি। আয়োজনে ‘হ্যালো হেরিটেজ’, সহযোগিতায় হিডকো ও আইসিসিআর। ৭-১৪ ডিসেম্বর, ১২-৭.৩০। এদিকে রাজস্থান ও বাংলার বন্ধন সুদৃঢ় করতে দুই প্রদেশের সংস্কৃতি ও শিল্পকলা দেখা যাবে বিড়লা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে। রাজস্থানের কাঠের পুতুল, ব্লু পটারি, গালার চুড়ি-গয়না, শাড়ি, কালবেলিয়া ঘুঙুর ও ঘোড়ানাচ। আর বাংলার ডোকরা, পুতুল, তাঁতবস্ত্র। এ ছাড়া, রাজস্থানি নাচের সঙ্গে ছো ও বাউলের মিশেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজনে ক্রাফটস কাউন্সিল। ১১-৮টা, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সঙ্গে ডোকরার কাজ, শিল্পী পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজীবকুমার মাইতি। গত বছর থেকে কলকাতায় বইমেলার তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি, বৃহত্তর বেহালা বইমেলা৷ ‘বেহালা অথর্স আর্টিস্টস পাবলিশার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে এ বারের বইমেলার সূচনা করলেন ভগীরথ মিশ্র, ৪ ডিসেম্বর, মেলা চলবে ১৩ তারিখ পর্যন্ত৷ এ বারের থিম ‘আমাদের বাংলাভাষা’৷ বাংলা ভাষা নিয়ে আলোচনাচক্র, থাকছেন পবিত্র সরকার তপোধীর ভট্টাচার্য পঙ্কজ সাহা৷

ইতিহাসবিদ

বীরভূমের ইতিহাস নিয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চর্চা শুরু তাঁরই হাতে। বিনয়ভূষণ চৌধুরীর কাছে গবেষণা করেন রঞ্জন গুপ্ত, বিষয় ছিল দি ইকনমিক লাইফ অব আ বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট/ বীরভূম ১৭৭০-১৮৫৭। আঞ্চলিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই বই তাঁকে গবেষক মহলে বিশেষ মর্যাদা দেয়। ১৯৩২-এ ঢাকার কাছে মাধবদি-তে জন্ম, ’৫০-এ পাকাপাকি এ বাংলায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করে ১৯৫৮-’৯৬ সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। অবসরের পর ২০১০-এ চলে এসেছিলেন সোদপুরের অমরাবতীতে, আশি পেরিয়েও লেখাপড়ায় বিরতি ছিল না। রা়ঢ়ের সমাজ অর্থনীতি ও গণবিদ্রোহ, অরণ্যবহ্নির ঐতিহাসিকতা ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বীর সাভারকর, ভাই গিরিশচন্দ্র, স্মৃতিমঞ্জুষা তাঁর উল্লেখ্য বই। ‘সিউড়ির নগরায়নের ইতিহাস’ নিয়ে তাঁর শেষ কাজটি প্রকাশের অপেক্ষায়। ইংরেজি বাংলা দুই ভাষাতেই লিখেছেন বেশ কিছু গবেষণা নিবন্ধ। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে কলকাতাতেই প্রয়াত হলেন এই অকৃতদার ইতিহাসবিদ।

শিল্প কথা

মহীশূর রোড-এ অনিলবরণ সাহার বৈঠকখানা থেকে যাত্রা শুরু সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর। সেটা ১৯৬০ সাল। প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন শ্যামল দত্তরায়, সনৎ কর, সোমনাথ হোর, অজিত চক্রবর্তী, সুনীল দাস ও আরও অনেকে। পরে স্থায়ী ঠিকানা হল লেনিন সরণিতে অজিত চক্রবর্তীর স্টুডিয়োয়। সেখানেই শুরু ছাপাই ছবির পরীক্ষানিরীক্ষা। যুক্ত হলেন গণেশ পাইন, বিকাশ ভট্টাচার্য, গণেশ হালুই, লালুপ্রসাদ সাউ, বি আর পানেসর। পঞ্চাশ পেরনো এই শিল্পীদলের ৫৬ তম বার্ষিক প্রদর্শনী বিড়লা অ্যাকাডেমিতে, প্রয়াত সুনীল দাসের স্মরণে (সঙ্গে তাঁর ছবি), ৮-২২ ডিসেম্বর। অন্য দিকে বিড়লা অ্যাকাডেমিতে কাল থেকে শুরু হচ্ছে ঋত্বিজ ভৌমিকের আঁকা ছবির প্রদর্শনী ‘শেডস অব গ্রে’। আইআইটি কানপুরের শিক্ষক ঋত্বিজের এই প্রদর্শনীর বিশেষত্ব প্রতিটি ছবিই ধূসর। ওঁর কথায়, ধূসর আবেগহীন রং। তাই ছবির চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তিনি এই রংটিই বেছেছেন। প্রদর্শনী চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত (প্রতি দিন ৩-৮টা)।

রঙিন

বাংলা গানের ঐতিহ্যকে পুরনো গায়কীর মাধ্যমে ধরে রাখতে চেয়ে গত বছর তৈরি হয়েছিল বাংলা গানের দল ‘রঙিন’। কথা ও সুর নিজস্ব হলেও গায়কী হবে ঐতিহ্যবাহী। সম্প্রতি প্রথম জন্মদিনে রঙিন-এর সদস্যরা মিলিত হয়েছিলেন শিশির মঞ্চে। প্রথম ভাগে একক কবিতা পাঠ করলেন জয় গোস্বামী। দ্বিতীয় ভাগে গাইলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়, শ্রুতি গোস্বামী ও শঙ্খমালা রায়। সঙ্গে ভাষ্যপাঠে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

নেতাজিকে নিয়ে

নেতাজি বিষয়ক ছোটবড় নানা তথ্য প্রকাশ্যে আসায় শুরু হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা, তর্কবিতর্ক। সম্প্রতি কলকাতা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ সুব্রত বসুর যোধপুর পার্কের বাড়িতে বিশিষ্টজনেরা সুভাষচন্দ্র প্রসঙ্গে নানা কথা শোনালেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বললেন, বিদেশ, বিশেষ করে রাশিয়ার লেখ্যাগার থেকে নেতাজি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ হওয়া উচিত। নেতাজির ভাইঝি চিত্রা ঘোষের কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার ফাইল প্রকাশ করলে বহু ধারণার ভ্রান্তি কাটবে। অনুষ্ঠানে নেতাজি-গবেষক বিজয় নাগ, জয়ন্ত চৌধুরী, দেবাশিস ভট্টাচার্য অংশ নেন।

শতবর্ষে

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘তোমার কবিতাগুলি পড়িয়া অত্যন্ত প্রীত হইয়াছি। ভাব, ভাষা এবং ছন্দমাধুর্যে প্রতিটি কবিতাই অপূর্ব।’ রবীন্দ্রোত্তর যুগে রবীন্দ্রানুসারী কবিদের মধ্যে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। শেলি, কিটস ও ওয়ার্ডসওয়ার্থের অনুরাগী। মরমি ভাবুক ও রোম্যান্টিক গীতিকবি। সরোজরঞ্জন চৌধুরীর জন্ম ১৯১৫-র ১২ ডিসেম্বর, অবিভক্ত বাংলার নদিয়ার জানিপুরে। ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যানুরাগী। ১৯৩১-এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে ওই বয়স থেকেই ‘প্রবাসী’, ‘বিচিত্রা’ ‘মাসিক বসুমতী’, ‘দেশ’, ‘আনন্দবাজার’ ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। যতীন্দ্রমোহন বাগচী, অন্নদাশঙ্কর রায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, চপলাকান্ত ভট্টাচার্যের স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। কলকাতায় স্থায়ী চাকরি হল না, কিছু দিন শিক্ষকতা করলেন গ্রামে গিয়ে। রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ নিয়ে ১৯৪০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ বনযূথী প্রকাশ পেল। ১৯৪৭-এ কবি ঘরছাড়া হলেন। ১৯৪৯-এ হেমন্তকুমার বসুর আনুকূল্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যবিভাগে কাজ শুরু করলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবৃত্তি ও অভিনয়েও ছিলেন দক্ষ। ১৯৭১-এ মৃত্যুর অনেক আগে ‘বিদায়’ কবিতায় লিখলেন, ‘এবার চলিনু, আসিব আবার ফিরে/দেখা হবে পুন এই সাগরের তীরে...।’ ১২ ডিসেম্বর পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের ‘ঐক্যতান’ প্রেক্ষাগৃহে কবির শতবার্ষিক স্মৃতি তর্পণ।

অভিনেত্রী

অ্যাকশন এবং ‘কাট’— শব্দযুগল শুনতে শুনতেই তিনি বড় হয়েছেন। ছোট থেকেই সিনেমার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। বাবা থিয়েটার ব্যক্তিত্ব ও সিনেমা পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। আর মা শতরূপা সান্যাল এক দিকে সিনেমা পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেত্রী। অন্য দিকে কবি এবং সমাজসেবী। ঋতাভরী বলছিলেন, ‘আমার তখন তিন বছর বয়স আর দিদির ছয়। বাবা একটি প্রোজেক্টে ডিরেকশন দিচ্ছিলেন। নাম ছিল ‘ভাঙা আয়না’। মা ও দিদি চিত্রাঙ্গদা তাতে অভিনয় করছিলেন। সবাই একটা কাজে অংশগ্রহণ করছে আর আমি কিনা বাদ! হাপুস নয়নে কান্না জুড়লাম। কিছুতেই থামানো যায় না। তখন একটা পুতুল টেবিলের ওপর রেখে বলা হল, ‘অ্যাকশন’ বললেই আমি গিয়ে ওটা নিয়ে আসব। আর ‘কাট’ বললেই আবার রেখে আসব। আমি মহা উৎসাহে শট দিলাম। বড় হয়ে বুঝেছিলাম সবাই ‘অভিনয়’ করছিল। যাকে বলে শুটিংয়ের মধ্যে শুটিং।’ ইতিহাস নিয়ে যাদবপুর থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মডেলিং এবং টেলিভিশন দিয়ে কেরিয়ার শুরু। ভরতনাট্যম শিখেছেন। ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি মূক-বধির শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। এবং ‘ডগ ওনার্স অ্যান্ড লাভার্স’ সংস্থার দূত। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবি, ‘তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন কলকাতা’, ‘চতুষ্কোণ’, ‘বাওয়াল’, ‘বারুদ’। সিরিয়াল ‘ওগো বধূ সুন্দরী’, আর থিয়েটার করেছেন গৌতম হালদারের নির্দেশনায় ‘নষ্টনীড়’-এর ‘চারুলতা’ চরিত্রে। ‘হয়তো বাবার সঙ্গে কাজ করবার সৌভাগ্য হল না, কিন্তু মায়ের পরিচালনায় ‘অন্য অপালা’য় অভিনয় করেছি।’ ছবিটি মুক্তি পেল ২৭ নভেম্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন