শহরে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ছোঁয়া
আমাদের দৈনন্দিন প্রায় ভ্রমণই হয়ে ওঠে কখনও কখনও। রোজকার একঘেয়েমি থেকে সরে এসে মন পরিযায়ী পাখির ডানায় ভর করে উড়ে যেতে চায়। আবার কত ভিন্দেশি ভূগোলের মানুষজন অতিথি হয়ে কড়া নাড়েন দরজায়। সিনেমা সেই দরজা খুলে দেয়, টেনে নিয়ে যায় আশ্চর্য ভ্রমণে। আজ তেমনই দিন, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে ২০তম ‘কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। চলবে ১৭ নভেম্বর অবধি। নন্দন-সহ শহরের নানা প্রান্তে অবিরাম ছবি দেখবেন দর্শকেরা। ওমরকে ছুঁতে পারবেন তাঁরা।
প্যালেস্তাইনের তরুণ ওমর, পালিয়ে বেড়ায় মিলিটারির চোখে ধুলো দিয়ে, আবার পাগলের মতো ভালবাসে নাদিয়াকে। প্যালেস্তাইনের ছবি ‘ওমর’-এর সঙ্গে আরব দেশগুলির একগুচ্ছ ছবি, যেমন মিশর, আলজিরিয়া, সৌদি আরব, ইরাক (নীচে সে দেশের ‘বিফোর স্নোফল’ ছবির একটি দৃশ্য)। “এ বারের উত্সবে ‘ফোকাস’-ই আরব। আর এ বারের থিম ‘সিনেমায় নারী’, বিশ্বের সাম্প্রতিক নারী-চলচ্চিত্রকারদের সেরা ছবির প্রতিযোগিতা শুরু হল এ বছর। সেরা ছবি, পরিচালককে ট্রফির সঙ্গে যে অর্থমূল্য দেওয়া হবে, এ দেশে তা সর্বোচ্চ।
‘বেঙ্গলি প্যানোরামা’ও এ বারে প্রথম, নতুন প্রজন্মের পাঁচ বাঙালি পরিচালকের নতুন ছবির (একেবারে উপরে ‘ঘুড়ি’ ছবির দৃশ্য) ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার এখানে। শর্ট-ডকুমেন্টারিরও নিয়মিত বিভাগ, পুরস্কার সেখানেও। শুদ্ধ বিনোদন থেকে মস্তিষ্কের খোরাক সবই থাকছে উত্সবে,’ জানালেন উত্সব-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ফ্রেঞ্চ ক্লাসিকস-এ জাঁ রেনোয়া, জাক দেমি-র মতো ধ্রুপদী পরিচালকের ছবি, ওয়ার্ল্ড সিনেমা-য় গোদার-সহ দিকপাল পরিচালকদের নতুন ছবি। আছে সেমিনার, ওপেন ফোরাম। ‘সত্যজিত্ রায় স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন গোবিন্দ নিহালানি।
শতবর্ষে
‘দ্য হিলস আর অ্যালাইভ উইথ দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’—এই গান তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম আজও মুখে মুখে ফেরে। নাতসি-কবলিত অস্ট্রিয়ার ভন ট্র্যাপ পরিবারের কাহিনি নিয়ে তুমুল জনপ্রিয় ‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’ (১৯৬৫) ছবির (সঙ্গে স্থিরচিত্র) বয়স হতে চলল প্রায় পঞ্চাশ, আর সে-ছবির স্রষ্টা রবার্ট ওয়াইজ-এর (১৯১৪-২০০৫) বয়সও একশো। শতবর্ষ লি টমসন-এরও (১৯১৪-২০০২), তাই তাঁর ‘দ্য গানস অব নাভারন’ (১৯৬১) কলকাতা চলচ্চিত্রোত্সবে দেখানো হচ্ছে ‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’-এর সঙ্গে। ‘হলিউডের ক্লাসিক বড় পর্দায় নতুন প্রজন্মকে দেখানোর জন্যেই এ আয়োজন। স্ট্যানলি কুব্রিক-এরও রেট্রো শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে।’ মন্তব্য অধিকর্তা যাদব মণ্ডলের। সায়েন্স ফিকশন-এ কারিগরি-প্রযুক্তির যে শীর্ষে পৌঁছেছে আজ হলিউড, আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার কুব্রিক (১৯২৮-১৯৯৯) ছিলেন তার পথিকৃত্।
ইরানের ছবি
সোমালিয়ায় গিয়েছিলেন এক অভিনেত্রী, দেখার আগে ভাবতেই পারেননি সেখানকার দারিদ্র কতটা দাঁতনখ বার করা। কোনও এক মা তার দু’-একজন সন্তানকে ফেলে রেখে যাচ্ছে, বাকি বাচ্চাদের ঠিক মতো খাওয়াবে বলে। এমনই এক দুঃসহ বেঁচে থাকার ছবি ‘দ্য ফোর্থ চাইল্ড’ (সঙ্গে স্থিরচিত্র)। পরিচালক ইরানের ওয়াহিদ মউসাইয়ান। ইরানের ছবির উপর ‘ফোকাস’ এ বারে সিনে সেন্ট্রাল-এর ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অব নিউ সিনেমা-য়। কলকাতা চলচ্চিত্রোত্সবের অঙ্গ এ-উত্সব, বসুশ্রী সিনেমায়, ১১-১৮ নভেম্বর, রোজ তিনটি শো-তে ছ’টি করে ছবি। তুরস্কের সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষে সেখানকার একগুচ্ছ ছবি, তেমনই গুচ্ছ ছবি ব্রাজিল ও হাঙ্গেরিরও। ব্যাটলশিপ পটেমকিন, বাইসাইকেল থিভস থেকে ব্রিফ এনকাউন্টার অবধি বেশ কিছু ধ্রুপদী ছবি। ‘ওয়ার্ল্ড সিনেমা’র ছবিগুলির সঙ্গে ফ্রান্সের মরিস পিয়ালাত ও আমেরিকার জিম জারমুশ-এর রেট্রো। উদ্বোধন করবেন অমলাশঙ্কর। আর সৌমেন্দু রায় পাবেন সত্যজিত্ রায় নামাঙ্কিত ‘সারা জীবনের সম্মান’।
নতুন সংস্কৃতি
ছিন্নমূল হলে সকলেই হারিয়ে যান না! বরং নতুন স্থানে সেখানকার সংস্কৃতিরই স্থপতি হয়ে ওঠেন তাঁরা। জীবন গড়তে অনেক ভারতীয় একদা পেরিয়েছিলেন কালাপানি। ১৭৯০-এ প্রথম ভারতীয় পা রাখেন আমেরিকায়। আর এখন সেখানে মোট জনসংখ্যার এক শতাংশই এশীয়, মার্কিন উন্নতির সঙ্গে যাঁরা মিশে গেছেন গভীর ভাবে। এই নিয়ে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটে গবেষণা করেছিলেন মাসুম মোমেয়া। তারই উপাদান নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয় আমেরিকার ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। সম্প্রতি সেই প্রদর্শনীর অংশবিশেষ দেখা গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে। আমেরিকান সেন্টারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ছিল আলোচনাসভা ‘বিয়ন্ড বলিউড’। বললেন ভিক্টোরিয়ার কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত এবং মার্কিন দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর ডেভিড মিজ।
যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সালটা ১৯১৪। দুনিয়া প্রথম জেনেছিল বিশ্বযুদ্ধের অর্থ, অভিঘাত। তার পর শতক পেরিয়েছে। কিন্তু যুদ্ধে বিরতি নেই আজও। গাজা, ইজরায়েল, ইরাক, সিরিয়া, কখনও বা ইউক্রেন। ১১ নভেম্বর ১৯১৮-এ প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হলেও থামছে না লড়াই লড়াই খেলা। যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই ১১ নভেম্বর জ্ঞান মঞ্চে হাজির থাকবেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়তী চক্রবর্তী, শৌনক চট্টোপাধ্যায়, শ্রাবন্তী বসু ও সাম্য কার্ফা। অডিয়ো-ভিসুয়াল এই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা এবং রূপায়ণে সাম্য। প্রতিবাদের তো কোনও নির্দিষ্ট সময়কাল হয় না। ভাষা হয় না। তাই রবীন্দ্রনাথ থেকে জন লেনন, সকলেই থাকছেন এই প্রতিবাদী যুদ্ধে।
কবিতাস্কোপ
কবিতা শুধু শোনার নয়, দেখারও। সে ভাবনা থেকেই তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে নতুন করে এ সাহিত্য ধারার পরিচয় করাতে চায় ‘কবিতাস্কোপ’। কবিতা ফুটে উঠবে কখনও ভিডিয়ো, কখনও নাচে। রোজের জীবনে কবিতা কতটা প্রাসঙ্গিক, তা চিনিয়ে দিতেই এই অনুষ্ঠানের ভাবনা, জানালেন আবৃত্তিকার সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৬ নভেম্বর, জি ডি বিড়লা সভাগারে এ বারের বিষয় ‘শ্রীমতি থেকে বিনোদিনী’। নটী বিনোদিনীর ১৫০ বছর উদ্যাপনে তাঁর কিছু চিঠি পড়া হবে এই অনুষ্ঠানে। পাঠ হবে রবীন্দ্রনাথ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা থেকেও। কিছু কবিতার সঙ্গে থাকবে দেবলীনা কুমারের নাচ।
কাঠের কাজ
বাংলায় কাঠের ভাস্কর্যের ধারা অনেক পুরনো। কাঠের কাজ মন্দির-মণ্ডপে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে তেমনই হয়েছে গৃহসজ্জাতেও। লোকশিল্পরসিক গুরুসদয় দত্ত অবিভক্ত বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে কাঠের ভাস্কর্য, মূর্তি অথবা দরজা প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। সেগুলি সযত্নে রক্ষিত জোকায় ওঁরই নামাঙ্কিত সংগ্রহশালায়। ভাস্কর গুরুপদ সরকার এখনও এই কাজ করে চলেছেন। আশি বছরের এই শিল্পীর নটরাজ, গণেশ, সরস্বতী, ব্যায়ামবীর প্রভৃতি দারুমূর্তি নজর কাড়ে। সম্প্রতি তিনি তাঁর শিল্পকর্ম দান করে দিলেন এই সংগ্রহশালায়। সে সব নিয়েই আয়োজিত হয়েছে প্রদর্শনী ‘তির্যক তরঙ্গ’। (১৪-৩০ নভেম্বর, ১১টা-৫ টা। সঙ্গের ছবিতে ‘ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ’, প্রদর্শনী থেকে।
শ্রীপান্থদর্পণ
শ্রীপান্থনামা নিখিল সরকারের প্রয়াণের পর কেটে গেল এক দশক। তাঁর অনুরাগীজন বিস্মিত হবেন, সত্যি, এত দিন হয়ে গেল! পাঠকের কাছে তাঁর বিচিত্র বিদ্যাচর্চা যে এখনও বড্ড টাটকা। তবু তাঁকে নিয়ে আলোচনার, ফিরে দেখার বোধহয় এটাই উপযুক্ত সময়। আর সে কথা ভেবেই দীর্ঘ আয়াসে সমৃদ্ধ আয়োজন থীমা-র-- রতন খাসনবিশ, সুবীর দত্ত ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে শ্রীপান্থদর্পণ: শ্রীপান্থ স্মারক নিবন্ধসংগ্রহ। এ বইয়ে এক দিকে যেমন ‘সত্যানুসন্ধানী, বিচারশীল স্বাধীন চিন্তার ধারাকে নানা ভাবে অবারিত বহতায় মুক্ত করার দায়’ পালনের ক্ষেত্রে তাঁর নিষ্ঠার কথা উঠে এসেছে, তেমনই রয়েছে কলকাতার ইতিহাস চর্চায় তাঁর একান্ত নিজস্ব পথের কথা।
সম্পাদকদের কথায়, শহরের ইতিহাস চর্চায় এই পদ্ধতি পাঠক-নাগরিকদেরও এই ইতিহাসের সঙ্গে এক দায়বোধে যুক্ত করতে পারে। আর সেখানেই শ্রীপান্থর সব থেকে বড় সার্থকতা। লেখক তালিকায় আছেন গৌতম ভদ্র, চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, আনিসুজ্জামান, ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী, গণেশ হালুই, রমাকান্ত চক্রবর্তী, পবিত্র সরকার, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, রতন খাসনবিশ, বুদ্ধদেব গুহ থেকে অভিজিত্ গুপ্ত প্রমুখ। আছে নানা জনের অনেক চিঠি, আর শ্রীপান্থর আঁকা ছবি। ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় থীমার সভাঘরে বই-প্রকাশ উপলক্ষে ঘরোয়া আড্ডা। সঙ্গের ছবিতে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয় দফতরে নিখিল সরকার।
মোহিত স্মরণ
২০১২-য় নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর তাঁর সৃজনকৃতি নিয়ে বর্ণাঢ্য উত্সব করেছিল রঙ্গপট। প্রবর্তন করেছিল মোহিত সম্মান, মোহিত স্মারক বক্তৃতা, মোহিত স্মরণ প্রকাশনা, মোহিত নাট্য বিদ্যালয়—পাঁচটি মোহিত নাট্যাভিনয় ও প্রদর্শনী ছাড়াও। এ বার মোহিত-জায়া শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ের প্রেরণায় রঙ্গপট ও আরও চারটি নাট্যদল, সংস্তব-নিভা আর্টস-কৃষ্টি সংসদ ও রঙরূপ, ব্রতী হয়েছে সম্মিলিত মোহিত স্মরণে। তপন থিয়েটারে, ১৪-১৭ নভেম্বর। মোহিতের নাট্যকর্ম, কাব্যকৃতি ও সমাজচিন্তার চর্চা হবে নতুন করে—নাট্যাভিনয়, প্রদর্শনী, আলোচনা, কবিতা পাঠ ও নাটকের গানের মধ্য দিয়ে। মঞ্চস্থ হবে পাঁচটি নাটক ‘নীল রঙের ঘোড়া’, ‘সুন্দর’, ‘তুষের আগুন’, ‘আয়ু দান’ এবং ‘ভূতনাথ’। সমাপ্তি সন্ধ্যায় মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যদর্শন নিয়ে বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।
জীবন থেকে
আমার ছবির ভাবনা? একেবারে জীবন থেকে নেওয়া।’ বলে ফেলেন সোহিনী দাশগুপ্ত। তাঁর প্রথম ছবি ‘ছোটি মোটি বাতেঁ’ এ বার কলকাতা চলচ্চিত্র উত্সবে। ১৬ নভেম্বর বেলা ১১টায় দেখানো হবে নন্দন-১-এ। মেয়ে-পরিচালকদের ছবি নিয়ে যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এ-উত্সবে, তাতে বাকি সব ছবিই ভিন্দেশি, একমাত্র সোহিনীরটি ভারতীয়। ১০৩ মিনিটের হিন্দি ছবি, পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি-চিত্রনাট্যও সোহিনীর, দৃশ্যশিল্পের দায়িত্বে কেরলের বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফার সানি জোসেফ। সোহিনী ওড়িশি ধ্রুপদী নৃত্যে তালিমপ্রাপ্ত, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী। ছবি তৈরির ফাঁকে নিরীক্ষাময় নাচের অনুষ্ঠানও করেন নিজস্ব নৃত্যগোষ্ঠীর উদ্যোগে। তাঁর একাধিক তথ্যচিত্রের মধ্যে বছর দশেক আগে রূপান্তরকামীদের নিয়ে ছবিটি নাড়া দিয়েছিল। দীর্ঘ দিন ধরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চলচ্চিত্র রূপায়ণে সহযোগী, ‘ওঁর কাছেই আমার ছবি-করার হাতেখড়ি। শিল্পী হিসেবে তিনি নিরন্তর প্রাণিত করেন আমায়।’ মন্তব্য সোহিনীর। ‘কিছু কাল আগে একটা খবর খুবই বিচলিত করেছিল। এক আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে দুই অবিবাহিত বোন নিজেদের বন্ধ করে রাখার বছর খানেক পর যখন তাদের নাগাল পাওয়া গেল, তখন তারা রীতিমতো অসুস্থ। বড় বোনটি মারা যায়, ছোটটি বেঁচে যায় শুশ্রূষায়। কিন্তু তাদের ওই পারস্পরিক বেঁচে থাকা কেমন ছিল? কী ভাবে তারা সময় কাটাত, কী কথা বলত, কী ভাবত? স্বপ্ন দেখত? উত্তরহীন এই দিকগুলো থেকেই জন্ম নিয়েছে আমার কল্পনার ইমেজ। বাস্তবকে ভর করেই আরও এক গহন রহস্যময় বাস্তবের পথে পা বাড়িয়েছে আমার ছবি।’
অক্লান্ত
মাত্র একুশ বছর বয়সে বন্ধুর সঙ্গে একত্রে লিখে ফেললেন নেতাজিকে নিয়ে বই (২৩ জানুয়ারি), সালটা ১৯৪৬। সত্তর বছর পরেও তাঁর লেখালেখি অক্লান্ত। কাশীকান্ত মৈত্রর জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫-এ পাবনায়। বাবা স্বনামধন্য বাগ্মী ও সাংসদ লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র। ছোট থেকেই বাড়িতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও নানা বই পড়তেন। মেধাবী ছাত্রটিকে স্কুলের পড়াশুনোর পাশাপাশি বাংলার বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ এবং দেশপ্রেম উদ্দীপ্ত করত। বিশেষত ইংরেজদের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্রের লড়াই। কৃষ্ণনগর কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও আইন নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। ১৯৫০-এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সুভাষবাদী ছাত্র সংগঠন’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ‘জয়শ্রী’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার সূত্রে নানা বিষয়ে চিন্তাশীল নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ছয় দশক ধরে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ছিলেন। ছয় বার বিধায়ক ও তিন বার বিভিন্ন মন্ত্রিসভায় ছিলেন। যুক্তি , তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ তাঁর ভাষণ ও বাগ্মিতা সকলের দৃষ্টি কাড়ত। বাঘা যতীন, সুভাষবাদ, বাংলার লুপ্ত অঞ্চল, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ: কৃষক ও কৃষিনীতি, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ তত্ত্বে ও প্রয়োগে প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিন দশক ধরে রাজনীতি থেকে বিযুক্ত। নব্বই পেরিয়েও দেশ-বিদেশের বই ও বিবিধ লেখালেখি পড়েন। ফুটবল ও হকি খেলার আজও তিনি নিয়মিত দর্শক। বিশিষ্ট চিকিত্সক সুব্রত মৈত্র তাঁর একমাত্র পুত্র। একানব্বই বছরের প্রবীণ এই মানুষটি আজও কোর্ট থেকে ফিরে প্রতি সন্ধ্যায় কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়েন। ব্যস্ত রয়েছেন প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি শেষ করার কাজে।