খেলার মাঠে ফিরল স্মৃতি, খোঁজ মিলল দাদুর

সোনার কেল্লায় মুকুলের কথা শুনে মনোচিকিৎসক হেমাঙ্গ হাজরা তার পূর্বজন্মের বাড়ি খুঁজতে রাজস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ির দেখা পেলেও পরিবারকে পায়নি মুকুল। শুক্রবার, ছোট্ট মেয়ে রূপার কথা শুনে একই ভাবে খোঁজ শুরু হল। এ বারও বাড়ি মিলল। মিলল বছর আটেকের রূপা এবং তার ভাই সুমিতের হারিয়ে যাওয়া দাদুও।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share:

ফিরে পাওয়া। —নিজস্ব চিত্র।

সোনার কেল্লায় মুকুলের কথা শুনে মনোচিকিৎসক হেমাঙ্গ হাজরা তার পূর্বজন্মের বাড়ি খুঁজতে রাজস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাড়ির দেখা পেলেও পরিবারকে পায়নি মুকুল। শুক্রবার, ছোট্ট মেয়ে রূপার কথা শুনে একই ভাবে খোঁজ শুরু হল। এ বারও বাড়ি মিলল। মিলল বছর আটেকের রূপা এবং তার ভাই সুমিতের হারিয়ে যাওয়া দাদুও।

Advertisement

কী ভাবে হল এই অসাধ্য সাধন?

এ দিন প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ করা বেহালার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে লাহা কলোনির মাঠে ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। এই সংস্থার হোমেই থাকে বছর আটেকের রূপা এবং তার ভাই সুমিত। তারাও খেলায় অংশ নিতে মাঠে আসে।

Advertisement

খেলার মাঠে ঢুকেই বছর আটেকের রূপা বলে, ‘‘আমি আগেও এই মাঠে খেলেছি। এখানে একটি বাড়িতে টিয়া পাখি আছে, কাকাতুয়াও আছে। সেটা আমার দাদুর বাড়ি।’’ প্রথম দিকে রূপার কথার খুব একটা পাত্তা দিতে চাননি উদ্যোক্তারা। কিন্তু রূপা বার বার একই কথা বলায় সংস্থার সম্পাদক গার্গী গুপ্ত খোঁজ নিতে শুরু করেন। সেই খোেঁজই মেলে তাদের দাদু গোবিন্দদাস পাত্রের সন্ধান।

শুক্রবার লাহা কলোনির মাঠে গোবিন্দবাবু জানালেন, বছর তিন আগে দুর্ঘটনায় মৃত ছেলের দেহ পেতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে হারিয়ে যায় তাঁর বছর পাঁচের নাতনি আর বছর সাড়ে তিনের নাতিও। স্ত্রী-বিয়োগের পর পরই ছেলে এবং তার আগে ডায়ারিয়ায় বৌমার মৃত্যু সব কিছু মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সব মিটতে জোড়াবাগান থানার অফিসার জানান, তাঁর নাতি-নাতনিকে পুলিশ একটি হোমে রেখে এসেছে। কিন্তু কোন হোমে তা সেই অফিসার জানাননি। ফলে নাতি-নাতনি বেঁচে থাকলেও যোগাযোগ করতে পারেননি গোবিন্দবাবু। ছোট রূপা বা সুমিত তাদের বাড়ি বলতে পারেননি। কষ্ট নিয়ে একা কোনও মতে দিন কাটাচ্ছিলেন গোবিন্দদাসবাবু।

তিন বছর পরে নাতি-নাতনি পেয়ে কেঁদেই ফেললেন তিনি। তিনি জানালেন, অসুস্থতার জন্য গত কয়েক বছর বিশেষ কাজও করতে পারেননি। কোনও দিন খাবার জুটত। কোনও দিন জুটত না। হোমে থাকায় ওরা ভালোই ছিল দেখে আনন্দ হচ্ছে তাঁর। এর পর হোমে থাকলেও তাদের দেখতে যাবেন বলে জানালেন গোবিন্দদাসবাবু। সায় মিলেছে হোমের তরফেও। তবে বাচ্চাদের দাদুর হাতে তুলে দিতে গেলে আইন মেনে এগোতে হবে। দাদু চাইলে হোম তার ব্যবস্থা করবে। না হলে হোমেই দাদু, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন বলে জানালেন গার্গীদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন