বেহাল রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তায় কোথাও বিপজ্জনক ভাবে তৈরি হয়েছে গর্ত। কোথাও বা পিচের আস্তরণ উঠে গিয়েছে। পাইপ বসানোর পরে রাস্তায় পিচ করা হলেও কোথাও তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কোথাও বা এখনও পিচই পড়েনি। এমনই দশা কলকাতা পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে।
রাস্তার এই বেহাল দশা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, ওয়ার্ডের দু-একটি বড় রাস্তায় প্রায় প্রতি বছরই যখন কিছু না কিছু সৌন্দার্যায়নের কাজ হয়, তখন একই ওয়ার্ডের অন্য রাস্তায় এত অবহেলা কেন? তাঁরা জানালেন, রাস্তা খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ হলেও পিচের আস্তরণ পড়তে পড়তে গড়িয়ে যায় মাসের পর মাস। কেবল মাটি চাপা দিয়ে দায় সারে পুরসভা।
সিঁথি থানার পর থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাটির অবস্থা খারাপ। ‘কালোয়ার পট্টি’ নামে পরিচিত ওই রাস্তা দিয়ে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁদের বক্তব্য, বর্ষায় ও বর্ষার পরে অবস্থা আরও খারাপ হয়। কালীচরণ ঘোষ রোডের বাসিন্দা মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “পাইপ বসানোর কাজ শেষে পিচ করা হয়েছিল। কিন্তু জিনিসপত্র এতই নিম্নমানের ছিল যে, মাসখানেকের মধ্যেই পিচের আস্তরণ উঠে গিয়েছে। তাতেই খালি চোখে বোঝা যাচ্ছে যে কুচোপাথর আর পিচের কোনও বাধনই জমেনি।” এলাকায় রিকশা চালান বাবু মল্লিক জানান, দিন দশ বারো আগের ঘটনা। সাঁতরাপাড়ার মোড়ে একটা বাড়ি ভাঙার জিনিস রাস্তায় স্তূপ করে ফেলে রাখা ছিল। ঝাঁকুনিতে রিকশা থেকে পড়ে যান এক জন বয়স্কা মহিলা। অন্য এক বাসিন্দার দাবি, ওয়ার্ডের ভিতরের রাস্তাগুলো ঠিক মতো পিচ করা হয় না। তাপ্পি পড়ে পড়ে এবড়ো-খেবড়ো, উঁচু-নিচু হয়ে থাকায় গাড়ি চালাতে খুব সমস্যা হয়। সাউথ সিঁথি রোডের বাসিন্দা মায়া পাল বলেন, “পঞ্চাশ ফুট রাস্তা হাঁটার পক্ষে ঠিক আছে কিন্তু ওর দু’পাশ অসম্ভব নোংরা। এ দিকে ভিতরের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে উঁচ-নিচু রাস্তায় প্রতি দিন ঠোক্কর খাওয়াটা তো রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাসিন্দাদের দাবি, জিনিসের মান খারাপ তো বটেই। পাশাপাশি অটোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া দ্রুত রাস্তা খারাপের আরও একটি কারণ। তাঁদের কথায়: দু-তিন বছর ধরে শুরু হয়েছে আর জি কর এবং সিঁথি থেকে দমদম স্টেশন যাওয়ার নতুন অটো রুট। এই অটো চলায় যাত্রী সুবিধা হয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু সেই কথা মাথায় রেখে রাস্তা মজবুত হয়নি।
পুরসভা সূত্রের খবর, এলাকার অন্যতম বড় রাস্তা দীপেন ঘোষ সরণি (পঞ্চাশ ফুট) ম্যাস্টিক করতে এবং ডিভাইডার তৈরিতে ২০১৩-য় খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। ২০১৪-য় বাকি অংশের ম্যাস্টিক ও এক বছরের পুরনো ডিভাইডারে গাছ বসানোর জন্য ফের খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা।
মেয়র পারিষদ (সড়ক) সুশান্ত ঘোষ বলছেন, “ওয়ার্ডের ভিতরের রাস্তার দায়িত্ব আমার নয়।” কিন্তু পুরসভা সূত্রে খবর, কালীচরণ ঘোষ রোড, সাউথ সিঁথি রোডের মতো চওড়া রাস্তা পুরসভার সড়ক দফতরের অধীন। স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি শান্তনু সেন বলেন, “অনেক রাস্তা সারাই হয়েছিল। কেইআইপি-র কাজের পরেও মেরামতি হয়েছিল। কিন্তু সে কাজ সন্তোষজনক হয়নি। সমস্যা নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে।” ওয়ার্ডের ছোট রাস্তার দায়িত্বে রয়েছে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। মেয়র পারিষদ (ইঞ্জিনিয়ারিং) অতীন ঘোষ বলছেন, “এতগুলো ওয়ার্ডের রাস্তার খোঁজ রাখা মেয়র পারিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাস্তা সারাইয়ের জন্য কাউন্সিলরকে ‘রিকুইজিশন’ জমা করতে হয়। তার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ হয়। ওই ওয়ার্ড থেকে ভিতরের রাস্তার জন্য তেমন কিছুই জমা পড়েনি।”