গার্ডেনরিচে পাইপে ছিদ্র, দক্ষিণে ‘জলাতঙ্ক’

গার্ডেনরিচে জলের পাইপ ফেটে যাওয়ায় পুরো দক্ষিণ কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে। কবে স্বাভাবিক হবে জল সরবরাহ, তা জানতে উদ্বিগ্ন সকলেই। বিশেষত দোলের আগে এমন ঘটায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর-প্রশাসনেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৯
Share:

পাইপ ফেটে জলমগ্ন গার্ডেনরিচের রাস্তা। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

গার্ডেনরিচে জলের পাইপ ফেটে যাওয়ায় পুরো দক্ষিণ কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে। কবে স্বাভাবিক হবে জল সরবরাহ, তা জানতে উদ্বিগ্ন সকলেই। বিশেষত দোলের আগে এমন ঘটায় কপালে ভাঁজ পড়েছে পুর-প্রশাসনেরও। কিন্তু পাইপলাইনের কোথায় ফাটল হয়েছে, তা এখনও খুঁজে পাননি পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা। এ দিকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পাইপলাইনে ফাটল ধরলেও জল সরবরাহ বন্ধ করা হবে না। জলের চাপ কম থাকায় কোথাও কোথাও চাহিদার তুলনায় কম জল মিলতে পারে। তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এ দিন সকাল থেকেই সেখানে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। রাতভর চলবে। তবে দিন তিনেকের আগে জল সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যাবে না বলে মনে করেন মেয়রও।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থা কেব্‌ল বসানোর সময়ে জলের পাইপলাইনে চাপ ফেলতেই সমস্যার শুরু। গার্ডেনরিচ শোধনাগারে জল বহনকারী ৭২ ইঞ্চির একটি জিআরপি (গ্লাস রিইনফোর্সড পলিমার) পাইপ ফেটে যায়। বুধবার বিকেলেই তা থেকে জল বেরোতে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে সে জলের চাপ আরও বাড়ে। এর জেরে গার্ডেনরিচ জলাধার সংলগ্ন পাহাড়পুর এলাকায় জল জমে যায়। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও ফাটলটি খুঁজে পাননি। পুরকর্তাদের আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে দোলের আগে ওই এলাকায় পানীয় জল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে।

মেয়র জানান, দু’টি বড় পাইপের মাধ্যমে গঙ্গা থেকে জল গার্ডেনরিচ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে যায়। একটি ৭২ ও অন্যটি ৬০ ইঞ্চির। ফাটল ধরা ৭২ ইঞ্চির পাইপের জল দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে শোধনাগারে জলের পরিমাণ কমছে। ঘাটতি বাড়ছে পানীয় জলেরও। পুরসভার জল দফতরের এক অফিসার জানান, ৭২ ইঞ্চির পাইপটিতে জল সরবরাহ বন্ধ হলে বহু জায়গায় জলের আকাল পড়ে যাবে। তাই ফাটল সত্ত্বেও পাইপটি বন্ধ করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, রাতে জলের চাহিদা কমলে তখন হয়তো সরবরাহ বন্ধ করে ফাটল খোঁজার চেষ্টা করা হবে। সেই কাজ অবশ্য সন্ধ্যের পর থেকেই শুরু হয়েছে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়।

Advertisement

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা কার্যত বানভাসি। আশপাশের নর্দমা উপচে পড়ে জল ঢুকে গিয়েছে কয়েকটি গুদাম ও কারখানায়। এক গুদামের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, “বুধবার বিকেলেই আশপাশের রাস্তায় জল দেখতে পাই। যত সময় গড়িয়েছে আশপাশের নালা উপচে জল গুদামে ঢুকেছে। পরে পুরসভা পাম্প এনে জল বার করছে।”

খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান মেয়র-সহ পুরসভার পদস্থ আধিকারিকেরা। শোভনবাবু বলেন, “রিলায়্যান্স সংস্থার টেলিকম প্রকল্পের ভূগর্ভস্থ কেবল্‌ লাইন বসানোর কাজ হচ্ছিল সেখানে। তা থেকেই বিপত্তি।” যদিও পুরসভা সূত্রের খবর, কেব্‌ল পাতার কাজে পুরসভার কোনও পাইপে ফাটল ধরলে তা সারানোর খরচ মেটানোর কথা সেই বেসরকারি সংস্থারই। তবে মেয়র বলেন, “খরচের ব্যাপারে অবশ্যই বলা হবে। আগে কাজটা হোক।” ওই সংস্থার পক্ষে যাাঁরা ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন, তাঁরা এ নিয়ে মুখ খোলেননি।

পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের ডিজি বিভাস মাইতি জানান, দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ ছাড়াও যাদবপুর, বেহালা, বজবজ, মহেশতলা, পূজালিতে গার্ডেনরিচ থেকে দৈনিক ১০ কোটি গ্যালন পানীয় জল সরবারহ করা হয়। তার জন্য তোলা হয় ১১ কোটি গ্যালন জল। পাইপ ফেটে যাওয়ার ফলে এ দিন প্রায় সাড়ে আট কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু দ্রুত মেরামতি করা যাচ্ছে না কেন? বিভাসবাবু জানান, পাম্প পুরো বন্ধ করা যাচ্ছে না। অন্য দিকে, জলের লাইনের পাশেই সিএসসি-র লাইন। ফলে যন্ত্র ব্যবহার করে মাটি খোঁড়া যাচ্ছে না। পুরনো পদ্ধতিতেই মাটি কাটা হচ্ছে। সে জন্যই কাজ দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ঘণ্টা চারেক পাম্প বন্ধ রেখে এই কাজ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন