গ্রেফতার খুদে-পেটানো গৃহশিক্ষিকা

শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকেই ধরা পড়লেন গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহ। শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পূজাকে ধরতে পুলিশের দল গিয়েছিল বিহার ও ওড়িশায়। হদিস মেলেনি। ইতিমধ্যে খবর আসে গাজিয়াবাদে পূজার এক মামা থাকেন। সেখানে পূজা গিয়েছেন কি না জানতে ওই ব্যক্তির মোবাইল টাওয়ারে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে কলকাতাতেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
Share:

ধৃত পূজা। নিজস্ব চিত্র

শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকেই ধরা পড়লেন গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহ।

Advertisement

শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পূজাকে ধরতে পুলিশের দল গিয়েছিল বিহার ও ওড়িশায়। হদিস মেলেনি। ইতিমধ্যে খবর আসে গাজিয়াবাদে পূজার এক মামা থাকেন। সেখানে পূজা গিয়েছেন কি না জানতে ওই ব্যক্তির মোবাইল টাওয়ারে নজরদারি শুরু করে পুলিশ। দেখা যায়, তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যাচ্ছে কলকাতাতেই। এর পরেই রাসবিহারীতে সেই ব্যক্তির উপর নজর চালিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায়, পূজাও রয়েছেন সেখানেই। এর পরেই ধরা পড়ে যান পূজা। সল্টলেকের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, “শুক্রবার রাতে রাসবিহারী থেকেই পূজা সিংহকে গ্রেফতার করা হয়।” আজ, শনিবার তাঁকে বিধাননগর আদালতে তোলা হবে।

পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার লেকটাউনে শিশু নিগ্রহের পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করার খবর পেয়েই উধাও হয়ে যান পূজা। খোঁজ মেলেনি তাঁর স্বামী রোহিত কিংবা শ্বশুর জগমোহনেরও। তাঁদের ফোনও বন্ধ ছিল। পূজাকে শেষ বার যখন বাগুইআটিতে দেখা যায়, তখন তাঁর স্বামী ও মেয়ে ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন শ্বশুর।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে বাগুইআটির বি সি রায় সরণিতে পূজার বাড়ি থেকে কিছু ছবি ও নথি জোগাড় করেন। পূজার ভাই অভিষেক খেমকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু আত্মীয়ের ফোন নম্বরও পায় পুলিশ। সেই সব ফোনের টাওয়ার লোকেশন দেখে পূজা ও তাঁর পরিবারের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিল পুলিশ। পাশাপাশি, তদন্তকারীদের দল ওড়িশার সম্বলপুর ও বিহারের সমস্তিপুরে যায়। সমস্তিপুরে পূজার আত্মীয়দের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে কলকাতার ঘটনার পরে রোহিত সেখানে গেলেও পূজা যায়নি। এর পরেই গাজিয়াবাদে থাকা পূজার এক মামার ফোন নম্বর হাতে আসে পুলিশের।

মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখে জানা যায়, পূজার সেই মামা কলকাতাতেই রাসবিহারী এলাকায় রয়েছেন। পুলিশ জানতে পারে কর্মসূত্রে রাসবিহারীতে থাকেন সেই ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পূজা অন্যত্র রয়েছে। কিন্তু তদন্তকারীরা সে কথা বিশ্বাস করেনি। ওই বাড়ির উপরে নজরদারি করতেই পূজার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। শুক্রবার সেই মামারবাড়ি থেকেই পূজাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানতে পারে, মঙ্গলবার লেকটাউনের ওই শিশুটিকে মারধরের ঘটনা ক্যামেরাবন্দি হয়েছে টের পেয়েই বাঁচার জন্য মরিয়া হয়ে কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন পূজা। এ রকমই এক অভিভাবক পুলিশকে জানান, পূজা তাঁদের ফোন করে বলেন, তিনি একটা ভুল করে ফেলেছেন। ক্ষমা চেয়ে নিতে চান। তাঁদেরকে মধ্যস্থতার অনুরোধ করেন পূজা। যদিও ঘটনার কথা জেনে কেউই তাতে রাজি হননি।

শুক্রবার রাতে গ্রেফতারের পরে পূজাকে লেকটাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেধড়ক মারধর, চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি অভিযোগ যোগ করা হতে পারে।

এ দিকে, নিগৃহীত শিশুটির শারীরিক আবস্থা ভাল হলেও এখনও তার আতঙ্ক কাটেনি বলে পরিবার সূত্রে খবর। এ দিন তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তবে পূজা ধরা পড়ায় খুশি ওই শিশুর পরিবার। তাদের এক আত্মীয়, পেশায় আইনজীবী মহম্মদ ওয়াকার বলেন, “আমরা স্বস্তি পেয়েছি। ওই শিক্ষিকার যেন কঠোর শাস্তি হয়।”

এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, গৃহশিক্ষক ঠিক করার আগে ভাল ভাবে খোঁজ নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, “এক জন শিক্ষিকা যে এ রকম করতে পারেন, তা ভাবাই যায় না!”

লেকটাউনের ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই বৃহস্পতিবার পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল আর এক ছাত্রের অভিভাবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবারও তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত অভিভাবকের যে ঠিকানা স্কুলে দেওয়া রয়েছে, সেটি সঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন