গৃহশিক্ষকের তথ্যও দিন থানায়, আর্জি মন্ত্রীর

পুলিশি পরিকাঠামোয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি সম্ভব নয়। তাই ভাড়াটে-পেয়িং গেস্ট বা পরিচারকদের মতো এ বার গৃহশিক্ষক বা শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সবিস্তার তথ্যও স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখতে আবেদন করল সরকার।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৪ ০০:০১
Share:

পুলিশি পরিকাঠামোয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি সম্ভব নয়। তাই ভাড়াটে-পেয়িং গেস্ট বা পরিচারকদের মতো এ বার গৃহশিক্ষক বা শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সবিস্তার তথ্যও স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখতে আবেদন করল সরকার। বুধবার লেকটাউনে সাড়ে তিন বছরের এক শিশুকে নির্মম ভাবে মারধরের অভিযোগ ওঠার পরে পুলিশি তদন্তে দেখা যায়, পূজা সিংহ নামে ওই শিক্ষিকা নিজের যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেটি ভুয়ো। ফলে অভিযুক্তের হদিস পেতে সমস্যা হয়। এর প্রেক্ষিতেই রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার আবেদন, “বাচ্চার জন্য গৃহশিক্ষক বা শিক্ষিকা নিয়োগের আগে তাঁর সম্পর্কে তথ্য নিয়ে থানায় জানিয়ে রাখুন। তার আগে অভিভাবকেরা নিজেরা সেই শিক্ষক বা শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে তাঁর আচার-আচরণ সম্পর্কে জেনে নিন।”

Advertisement

মা-বাবা দু’জনেই চাকরি করার কারণে আজকাল বহু পরিবারেই বাচ্চারা থাকে আয়াদের কাছে। কিংবা অনেক ক্ষেত্রে তাদের পড়াশোনার ভার নেন গৃহশিক্ষকেরা। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের হেফাজতেই বহুক্ষণ কাটায় শিশুরা। ফলে তাঁদের আচার-আচরণ কেমন, তাঁদের নাম-ঠিকানার সবিস্তার তথ্য আগে থেকে জানা থাকলে এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত অভিযুক্তদের নাগাল পাওয়া যাবে। সে কারণেই সরকার মনে করছে, শিশুদের নিরাপত্তার খাতিরে অভিভাবকদের তরফে এই ধরনের তথ্য প্রথম থেকেই স্থানীয় থানায় জানিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক।

বুধবার লেকটাউনের বাসিন্দা সঞ্জয় ও শালিনী অগ্রবাল থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁদের সাড়ে ৩ বছরের শিশুর জন্য গত ১৫ জুলাই থেকে পূজা সিংহ নামে এক গৃহশিক্ষিকা নিয়োগ করেছিলেন তাঁরা। এ দিন শালিনী দেখেন, পড়ার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ভিতর থেকে ভেসে আসছে ছেলের কান্নার আওয়াজ। সন্দেহ হওয়ায় তিনি ওই ঘরে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজে দেখেন তাঁর সাড়ে ৩ বছরের ছেলেকে কিল, লাথি, ঘুষি মারছেন ওই শিক্ষিকা। শালিনীর আরও অভিযোগ, দরজা খুলতে বললেও প্রথমে পূজা তাতে কান দেননি। পরে দরজা খুললে তিনি দেখেন মারধরের চোটে ছেলে বিছানায় নেতিয়ে পড়ে রয়েছে। কী করে ছেলের এই অবস্থা হল, তা জানতে চাইলে ওই শিক্ষিকা অসুস্থতার দোহাই দিয়ে পালিয়ে যান বলেও অভিযোগ।

Advertisement

এর পরেই লেকটাউন থানায় গিয়ে ওই গৃহশিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি। খবর পৌঁছয় নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে। সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকেন্দু সিংহকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। আর সেই তদন্ত করতে গিয়েই চমকে যান কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সদস্যেরা। গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহ তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন ডি এ ২/১ বাগুইআটি বিদ্যাসাগর পল্লি, কলকাতা -৫৯। কিন্তু এ দিন পুলিশ এবং শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা বিদ্যাসাগর কলোনিতে গেলে দেখা যায় ওই নম্বরের কোনও বাড়িরই অস্তিত্ব নেই। ঠিকানাটি ভুয়ো। এই খবর পেয়েই মন্ত্রী শশী পাঁজা ঠিক করেন, তাঁর দফতর থেকে অভিভাবকদের নির্দেশ দেওয়া হবে, গৃহশিক্ষক বা শিক্ষিকা রাখার আগে তাঁর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য নিয়ে থানায় জানিয়ে রাখুন।

এতে ছেলে-মেয়েদের নিরাপত্তা জড়িয়ে রয়েছে।

এ দিন অভিযুক্তের বাড়ি যাওয়ার আগে অবশ্য শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান এবং সদস্যেরা পৌঁছন নিগৃহীত শিশুটির বাড়িতে। সেখানে শিশুটি এবং তার অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলার পরে তাঁরা জানান, ওই গৃহশিক্ষিকা যে মারধর করেছেন, শিশুটির কথায় তা ধরা পড়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করুক। তবে কমিশন নির্দেশ দেবে যাতে ওই গৃহশিক্ষিকা শাস্তি পান। কমিশন সূত্রের খবর, শিশু সুরক্ষা আইনে ওই গৃহশিক্ষিকা গ্রেফতার হলে কমপক্ষে ৩ বছরের জেল হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন