গরফায় ‘আকাশ’ হয়েছিল শঙ্কর

নাম ভাঁড়িয়েই দমদমের বাসিন্দা রোহিণীর সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিল শঙ্কর। ‘আকাশ বর্মণ’ নামে বেশ কিছু দিন মেলামেশার পরেই দু’জনে একসঙ্গে গরফায় থাকতে শুরু করেছিল। কিন্তু রোহিণীর ভাই শঙ্করের অফিসে কাজে যোগ দিলে ফাঁস হয়ে যায় নাম-রহস্য। তিনি জেনে যান, আকাশ আসলে শঙ্কর। এর পর থেকেই রোহিণী ও শঙ্করের মধ্যে দূরত্ব ও অশান্তি তৈরি হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০২
Share:

নাম ভাঁড়িয়েই দমদমের বাসিন্দা রোহিণীর সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিল শঙ্কর। ‘আকাশ বর্মণ’ নামে বেশ কিছু দিন মেলামেশার পরেই দু’জনে একসঙ্গে গরফায় থাকতে শুরু করেছিল। কিন্তু রোহিণীর ভাই শঙ্করের অফিসে কাজে যোগ দিলে ফাঁস হয়ে যায় নাম-রহস্য। তিনি জেনে যান, আকাশ আসলে শঙ্কর। এর পর থেকেই রোহিণী ও শঙ্করের মধ্যে দূরত্ব ও অশান্তি তৈরি হয়।

Advertisement

শঙ্কর-কাণ্ডের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলেই দাবি পুলিশের। তাঁরা জেনেছেন, রোহিণীর সঙ্গে অশান্তির জেরে শঙ্কর মানসিক ভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নিত্য পারিবারিক অশান্তি ও বাজারে মোটা টাকার দেনা থেকে মুক্তি পেতেই ওই ব্যবসায়ী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শববাহী গাড়িতে কাঁটাপুকুর মর্গ থেকে বেরোয় শঙ্কর কর্মকারের মৃতদেহ। সঙ্গে শবযাত্রী বলতে তাঁর ছোট ভাই-সহ মাত্র পাঁচ যুবক। তাঁদের কথায়, ঘটনার দিন বন্ধু-প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ও থানায় ভিড় করলেও এ দিন অধিকাংশই মর্গে আসেননি। শঙ্করের সঙ্গেই রোহিণী ও ইয়াশির দেহও কাঁটাপুকুর থেকে বার করে নিয়ে যান ওই মহিলার আত্মীয়েরা। দুপুর থেকেই দুই পরিবারের লোকেরা মর্গে থাকলেও দুই তরফ একে অপরের সঙ্গে একটা কথাও বলেননি। ওই প্রোমোটারের এক আত্মীয় বলেন, “পুলিশের থেকেই রোহিণীর সঙ্গে শঙ্করের সম্পর্কের কথা জেনেছি মাত্র এক দিন আগে। তাই ওঁর পরিবারের কাউকেই চিনি না।”

Advertisement

ট্রেনের হকার শঙ্কর দ্রুত ধনী ব্যবসায়ী হয়ে উঠে কী ভাবে অসংযমী জীবনযাপন শুরু করে, সে আলোচনাই এ দিন ঘুরে ফিরে এসেছে তাঁর আত্মীয়-বন্ধুদের মুখে। পরিবার সূত্রে খবর, ১৯৮৪ সালে বাবার মৃত্যুর পরেই শঙ্করদের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। বছর পনেরোর শঙ্কর ট্রেনে খাবার বিক্রি শুরু করে। মাধ্যমিকে ফেল করে ’৯২ সালে পাড়ায় চায়ের দোকান খোলে সে। সেখান থেকেই বাড়ি-জমির দালালিতে হাত পাকানো। ’৯৮ সালে পৌলমীর সঙ্গে বিয়ে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর ছোটখাটো প্রোমোটারিও শুরু করে শঙ্কর। তখনই নিজেদের টালির চালের বাড়ি পাকা করার জন্য মা-ভাই-স্ত্রীকে নিয়ে আর একটি বাড়িতে চলে যায় সে। সেই বাড়ি এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। প্রোমোটারিতে পসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্করের চালচলনও পাল্টাতে থাকে। ২০০৬ সালে স্ত্রী পৌলমী ও ছেলে অরিত্রকে নিয়ে ভাড়া বাড়ির অদূরেই একটি ফ্ল্যাটে আলাদা চলে যায় শঙ্কর।

প্রতিবেশীরা জানান, বছর চারেক আগে শঙ্করের উৎসাহেই পাড়ায় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়। তাতে মোটা টাকা দিত সে। এমনকী ২০১৩ সালে লক্ষাধিক টাকার বাজিও পুড়িয়েছিল। তাঁরা জানান, ভাড়া বাড়ির পাশে একটি জমিতে শঙ্করের বাড়ি তৈরির কাজ এখনও চলছে। সম্প্রতি ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছিল। তবে কবে থেকে সে রোহিনীর সঙ্গে থাকতে শুরু করে, তা আত্মীয়-প্রতিবেশীরা জানেন না বলে দাবি।

পুলিশ জেনেছে, শঙ্কর বাইপাসের ধারের একটি পানশালার অংশীদারও ছিল। এমনকী বিভিন্ন পানশালায় গিয়ে নানা অছিলায় বিত্তশালীদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে টাকা ওড়াত সে। তার পরে নানা প্রলোভনে ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করত বলে অভিযোগ। বাইপাসের পানশালার এক গায়িকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, মাসিক ৬০ হাজার টাকা ভাড়ায় শঙ্করের একটি ১৫০০ বর্গফুটের অফিস রয়েছে। সেখানেও কয়েক মাসের ভাড়া বাকি। কর্মীরাও নিয়মিত বেতন পেতেন না। তদন্তকারীদের দাবি, এ দিন শঙ্করের গাড়িচালক জানান, মাঝেমধ্যেই রাতে হরিনাভি থেকে রাতে গরফার বাড়িতে আসত শঙ্কর। ঘটনার রাতেও আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন