ঘোড়া কিনতে গিয়ে অপহৃত যুবক, উদ্ধার

কম দামে ঘোড়া পাওয়া যায় লক্ষ্মীকান্তপুরে। খবর পেয়ে নিজের ঘোড়ার গাড়ির চালককে পাঠিয়েছিলেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী। কিন্তু ঘোড়া পাওয়া দূরে থাক, অভিযোগ, উল্টে সেই বিক্রেতারাই ঘোড়া দেখানোর নামে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওই চালককে আটকে রেখে টাকা চায়। পরে পুলিশি তৎপরতায় ওই চালককে উদ্ধার করে কলকাতায় আনা হয়। তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:০২
Share:

শেখ আমির।

কম দামে ঘোড়া পাওয়া যায় লক্ষ্মীকান্তপুরে। খবর পেয়ে নিজের ঘোড়ার গাড়ির চালককে পাঠিয়েছিলেন কলকাতার এক ব্যবসায়ী। কিন্তু ঘোড়া পাওয়া দূরে থাক, অভিযোগ, উল্টে সেই বিক্রেতারাই ঘোড়া দেখানোর নামে দুষ্কৃতীদের দিয়ে ওই চালককে আটকে রেখে টাকা চায়। পরে পুলিশি তৎপরতায় ওই চালককে উদ্ধার করে কলকাতায় আনা হয়। তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা থেকে ৫৭ কিলোমিটার দূরে, লক্ষ্মীকান্তপুরের মথুরাপুর এলাকায়। অপহৃত ওই চালকের নাম শেখ আমির। পার্ক স্ট্রিট থানার কলিন্স লেনের বাসিন্দা আমির ভিক্টোরিয়ার সামনে ঘোড়ার গাড়ি চালান। বছর আঠেরোর আমির জানান, সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্ক সার্কাস থেকে ডাউন নামখানা লোকাল ধরেন তিনি। সকাল সাতটা দশ নাগাদ লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশনে নেমে ফোন করেন ঘোড়া বিক্রেতাদের। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি। অগত্যা জিশান নামে যে ঘোড়া ব্যবসায়ী তাঁকে পাঠান, তাঁকেই ফোন করেন আমির। আমির বলেন, “আমি জিশানদাকে বলি ওরা ফোন তুলছে না। উনি বলেন, আমি দেখছি।” এর কিছু পরে ঘোড়া বিক্রেতা পল্টু ও রাজেশ আমিরকে ফোন করে পাকাতলা গ্রামে যেতে বলেন।

আমির জানান, মোবাইলে পল্টুর পথ নির্দেশ অনুযায়ী মোটরভ্যানে চেপে প্রায় এক ঘণ্টা পরে ওই গ্রামে পৌঁছন তিনি। সরু পিচের রাস্তার ধারে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল দুই যুবক। ভ্যান থেকে নামতেই তারাই নিজেদের পল্টু ও রাজেশ বলে পরিচয় দেয়। ঘোড়া দেখাতে আমিরকে বাইকে চাপিয়ে গ্রামের আরও ভিতরে নিয়ে যায় তারা। আমির বলেন, “মোটরবাইকেই ফের প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে।” তিনি জানান, খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি মাটির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। অভিযোগ, ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন, ভিতরে ঘোড়া নেই। রয়েছে প্রায় জনা দশেক লোক। প্রত্যেকের হাতেই লাঠি। কয়েক জনের হাতে বন্দুক ছিল বলেও অভিযোগ আমিরের।

Advertisement

আমির বলেন, “আমাকে ওরা বলে যা আছে, বার কর। আমি বলি, আমার কাছে শুধু সাড়ে সাতশো টাকা রয়েছে। ওরা তখন মারধর করে আমার মোবাইল ও টাকা কেড়ে নেয়। এর পরেই আমার বাড়িতে ফোন করে ওরা। দাবি করে, পাঁচ লক্ষ টাকা না পেলে আমাকে ছাড়া হবে না।”

ফোন পেয়ে আমিরের মাসতুতো দিদি সাবরা বেগম বেলা এগারোটা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান। সাদা পোশাকে পুলিশের কয়েক জন অফিসার সাবরা বেগম ও পরিবারের আরও দু’জনকে নিয়ে রওনা দেন লক্ষ্মীকান্তপুরে। মথুরাপুর থেকে উদ্ধার করা হয় আমিরকে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা জিশানের পরিচিত। টাকার লোভেই তারা এই কাণ্ড ঘটায়।

জিশান জানান, তাঁর তিনটে ঘোড়ার গাড়ির মধ্যে একটি আমির চালান। কয়েক দিন আগে কম দামে ঘোড়া দেবে বলে এক যুবক তাঁকে ফোন করে। বহু বার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও কত দামে দেবে, সেটা সে বলেনি। তাই শুধু ঘোড়া দেখে আসার জনা আমিরকে লক্ষ্মীকান্তপুরে পাঠিয়েছিলেন বলে জানান জিশান। তিনি বলেন, “মোবাইলে ছবি তুলতেও বলি। দেখে ভাল লাগলে হয়তো কিনতাম। কিন্তু তার বদলে যে এমন ঘটতে পারে ভাবিনি।”

সাবরা বেগম বলেন, “ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে আমির আমার কাছেই থাকে। ফোন পেয়ে খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পুলিশের দল সঙ্গে যাওয়াতে সাহস ফিরে পাই। ভাই ফিরে এসেছে, এ বার অভিযুক্তরা ধরা পড়ে যাক। ব্যস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন